দুধে ভেজাল আছে কিনা জানার সহজ কয়েকটি ঘরোয়া উপায়

বর্তমানে ভেজাল দুধের রমরমা যেভাবে সারা ভারত জুড়ে বেড়েছে তাতে এক সমীক্ষায় ফুটে উঠেছে এক সাংঘাতিক চিত্র।এই সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতি তিন জন ভারতীয়দের মধ্যে দুই জন ভারতীয় ভেজাল দুধ পান করে অর্থাৎ এ থেকে আপনারা সকলেই আন্দাজ করতে পারছেন আমাদের পুরো দেশে দুধের ভেজাল মেশানো কি পর্যায়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিককালে পশু কল্যাণ বিভাগের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে ৬৫ শতাংশ দুধ এবং দুগ্ধজাত ও বিভিন্ন সামগ্রীর মধ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর পদার্থ  পাওয়া গিয়েছে। ভারতে উৎপন্ন দুধ এবং দুগ্ধজাত সামগ্রীর দুয়ের তিন অংশই খাদ্য সুরক্ষা বিধি মেনে উৎপাদিত হয় না বলে এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে।

দুধে যে কারণে ভেজাল মেশানো হয়

সাধারণত ভারতের মতো দেশে যেখানে জনসংখ্যা অত্যধিক হারে দেখা যায় এবং তার সাথে দেখা যায় দুধের চাহিদা। এই চাহিদা অনুযায়ী যোগানের ঘাটতি থেকে দুধে ভেজাল মেশানোর কারবার শুরু। এছাড়াও উৎপাদন খরচ কমানো এবং লাভের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য দুধে বর্তমানে ভেজাল মেশানো হচ্ছে ।কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষের স্বাস্থ্যের কথা না ভেবে নানা রকম রাসায়নিক থেকে শুরু করে শরীরের জন্য ক্ষতিকর সামগ্রী দুধে ভেজালে হিসাবে মেশাচ্ছে।

দুধে যেভাবে ভেজাল মেশানো হয়

সাধারণত খুবই সাধারন উপায় হল দুধে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দুধের আয়তন বেশি পরিমাণে দেখানো  গ্রামাঞ্চলে এই উপায়ে দুধে ভেজাল মেশানো বা দুধের পুষ্টি গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়। যদিও জল মেশানো ভেজালের পর্যায়ে পড়ে না না পড়ে না না ।

বর্তমানে দুধে ভেজাল হিসেবে ডিটারজেন্ট, কস্টিক সোডা, নানা সাদা রং,আটা ,ময়দা ,চিনি,লবণ, রিফাইন তেল ,ফরমালিন এবং আরো অনেক কিছু মেশানো হচ্ছে। জল যেখানে দুধের ঘনত্ব কমাতে ব্যবহার করা হয়, সেখানে সাদা রং এবং নানা স্টার্চ জাতীয় জিনিস দুধের রং সাদা রাখতে এবং দুধের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।আর চিনি দুধের স্বাভাবিক স্বাদ বজায় রাখে।

ভেজাল দুধ যেভাবে স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব করে

সাধারনত একটানা ভেজাল দুধ অনেকদিন ধরে পান করলে শরীরে বিভিন্ন ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা যায়। একটানা অনেকদিন ভেজাল দুধ পানের ফলে শরীরে,পেটে এবং হৃদপিন্ডের সমস্যা, এমন কি ক্যান্সার দেখা দিতে পারে যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

দুধে জল মেশনো হয়েছে কী না যেভাবে বুঝবেন

দুধে যেভাবে জানতে পারবেন অত্যাধিক হারে জল মেশানো আছে তা হল, আপনার সন্দেহযুক্ত দুধকে নিয়ে বা তার অল্প পরিমাণ বা কিছু ফোটা একটা আনত অবস্থায় বা ঢালু রাখা কাচের পাত্রে বা কাচের উপর দিন। জল মেশানো দুধ খুব তাড়াতাড়ি নীচের দিকে যাবে কিন্তু সাধারণ বিশুদ্ধ দুধ আস্তে আস্তে নীচের দিকে গড়াবে। এর থেকে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার বাড়ির দুধে অতিরিক্ত হারে জল মেশানো আছে।

দুধে স্টার্চ মেশনো হয়েছে কী না যেভাবে বুঝবেন

খুব সহজেই বাড়িতে কিছু সাধারন পরীক্ষা করে দুধে স্টার্চ যেমন আটা, গ্লুকোজ এর উপস্থিতি আপনি জানতে পারবেন ।এর জন্য প্রথমে আপনাকে যা করতে হবে অল্প পরিমাণ দুধ নিয়ে তার সাথে অল্প পরিমান জল মেশাতে হবে ।তারপর সেই জল মেশানো দুধ ফুটিয়ে নিতে হবে ।ফুটিয়ে নেওয়ার পর তা ঠাণ্ডা করে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় একটি স্বচ্ছ কাঁচের উপর রেখে তাতে কয়েক ফোঁটা আয়োডিন দ্রবণ মেশাতে হবে। আয়োডিন মেশানোর পর যদি দুধের বর্ণ নীল বর্ণ হয়ে যায় তাহলে জানতে পারবেন এই দুধে স্টার্চ মেশানো আছে। অর্থাৎ দুধে ভেজাল মেশানো হয়েছে।

দুধে ডিটারজেণ্ট মেশনো হয়েছে কী না যেভাবে বুঝবেন

দুধে ডিটারজেন্ট এর এর উপস্থিতি জানার জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল হল অল্প পরিমাণ দুধ নিয়ে তাতে সমপরিমাণ জল মিশিয়ে ভালোভাবে একটানা কিছুক্ষণ ঝাকাতে হবে ।যাতে জল এবং দুধ ভালোভাবে মিশে যায় এরপর। সেই মিশ্রণ কিছুক্ষণ রেখে দেওয়ার পর যদি দেখা যায় তা ঘন থকথকে আস্তরণ তৈরি করেছে, তাহলে জানবেন সেই দুধে ডিটারজেন্ট উপস্থিত আছে। কিন্তু বিশুদ্ধ দুধ এর ক্ষেত্রে হালকা ফোমের মতো আস্তরণ ক্ষেত্রে হালকা ফোমের মতো আস্তরণ দেখা যাবে।

আরও পড়ুন : পোস্ত খেতে ভালবাসেন? জেনে নিন রোজ পোস্ত খেলে কী কী উপকার পাবেন

দুধে ইউড়িয়া মেশনো হয়েছে কী না যেভাবে বুঝবেন

দুধে ইউরিয়ার উপস্থিতি জানতে গেলে আপনাকে অল্প পরিমাণ দুধ টেস্টটিউবে নিতে হবে তারপর সেই দুধে অর্ধেক চা চামচ সয়াবিন পাউডার বা অড়হড় ডালের গুঁড়ো বা পাউডার মেশাতে হবে তারপর এগুলি মিশিয়ে ভালোভাবে কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে নিতে হবে নাকি নেওয়ার পর সেই মিশ্রণটিতে একটি লাল  লিটমাস পেপার অর্ধেক মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে, যদি লাল লিটমাস পেপারটি নীল বর্ণ ধারণ করে তাহলে জানবেন ওই দুটিতে ইউরিয়া উপস্থিত আছে।

দুধে কস্টিক সোডা মেশনো হয়েছে কী না যেভাবে বুঝবেন

দুধে কস্টিক সোডা মেশানো আছে তা জানার জন্য সেই দুধের কিছু পরিমাণ নিয়ে তাকে নিয়ে তাকে ফুটিয়ে নিন যদি দেখেন তা হলুদ বর্ণ ধারণ করে তাহলে জানবেন সেই দুধে কস্টিক সোডা মেশানো আছে আছে আছে। এছাড়াও এরকম দুধ  হাতের মধ্যে নিয়ে ঘষলে যদি হাতে সাবানের মতো ফেনা বা পিচ্ছিল মনে হয় তাহলে জানবেন সেই দুধে কস্টিক সোডা মেশানো হয়েছে। এছাড়াও এইরকম দুধ একটা উগ্র গন্ধ পাওয়া যায় যা বিশুদ্ধ দুধের গন্ধের সঙ্গে কোনো প্রকার মিল থাকে না না

দুধে ডালডা মেশনো হয়েছে কী না যেভাবে বুঝবেন

দুধে বনস্পতি বা ডালডা মেশানো আছে তা জানার জন্য এক চামচ দুধে মধ্যে দু-চামচ হাইড্রোক্লোরিক এসিড এবং এক চামচ চিনি মিশিয়ে নিন যদি দেখেন দুধের বর্ণ লাল বর্ণ ধারণ করেছে তাহলে জানবেন সে দুধে বনস্পতি বা ডালডা মেশানো আছে।

আরও পড়ুন : গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি চান? জেনে নিন ২১টি ঘরোয়া উপায়

দুধে ফরমালিন মেশনো হয়েছে কী না যেভাবে বুঝবেন

দুধে ফরমালিন মেশানো আছে কী না তা জানার জন্য যা আপনাকে করতে হবে তা হল ১০মিলিলিটারের মতো দুধ টেস্টটিউবে নিয়ে তাতে যদি সামান্য পরিমান অর্থাৎ দুই ফোঁটার মতো সালফিউরিক আসিড মেশাতে হবে, যদি দেখেন দুধের উপরে নীল বর্ণের বৃত্তাকার অংশ দেখা যায় তাহলে জানবেন সেই দুধে ফরমালিন মেশানো আছে।

এসব উপায় অবলম্বন করে সহজেই আপনার বাড়ির দুধে ভেজাল কোন রাসায়নিক পদার্থ মিশে আছে কিনা আপনি জানতে পারবেন। তাই আজই দেখে নিন আপনার বাড়ির দুধ কতটা বিশুদ্ধ । এইসব পদ্ধতি আপনার পরিচিত লোকেদের মধ্যেও শেয়ার করে জানিয়ে দিন।