করোনা আক্রান্ত হলে সুস্থ হয়ে উঠতে কতদিন সময় লাগে?

সারা দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৭৭,১৯১ জনের। তবে সারা দেশে করোনা থেকে সেরেও উঠেছেন ২,৬৯৭,৮৫৭ জন। ফলে মৃত্যু যতটা হাতছানি দিচ্ছে তার থেকে বেশি বেঁচে থাকার তাগিদ। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। ফলে দিনরাত ইন্টারনেটে কিংবা বিশেষজ্ঞদের কাছে বিভিন্ন রকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। বিশেষজ্ঞরা সেইসব প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন। আজ আমরা সেই সব প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরবো আপনাদের সামনে।

১) আমার যদি কোভিড হয় তাহলে আমি কত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবো?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনার যদি কোভিড হয় তাহলে আপনি কত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন তা নির্ভর করবে আপনি কতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তার উপর। অনেকেই সামান্য কিছু উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। অনেকে আবার জটিলতা নিয়ে ভর্তি হলে সেক্ষেত্রে গভীর চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এবং সুস্থ হয়ে উঠতেও ততটাই সময় লাগে।

২) আমার যদি কোভিডের সামান্য কিছু উপসর্গ দেখা যায় তাহলে সুস্থ হতে কতটা সময় লাগবে?
চিনের কোভিড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অনেকেই রয়েছেন যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর কাশি, জ্বর এর মতো উপসর্গ দেখে গিয়েছে। শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা, ক্লান্তভাব, গলা ব্যাথা ও মাথা ব্যাথাও অনুভব করেছেন। এছাড়াও শুকনো কাশির মতো উপসর্গও দেখা গিয়েছে।

এইসব রোগীদের চিকিৎসা মূলত বিশ্রাম, তরল পান করা, ও প্যারাসিটামল ও প্রয়োজনে পেইনকিলার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় হালকা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ায় এঁদের মধ্যে দ্রুত সেরে ওঠার প্রবণতা দেখা যায়। দেখা যায় এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বর চলে যায়। তবে কাশি রয়ে যায় বেশ কিছুদিন। এইসব রোগীরা খুব বেশি হলে দু সপ্তাহে সেরে ওঠেন।

৩) আমার যদি কোভিডের গুরুতর উপসর্গ থাকে তাহলে কি হবে?
এমন অনেকে আছেন যাদের শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। শ্বাসকষ্ট হয়, ফুসফুস ফুলে যায়। আসলে ওই সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের সাথে লড়ায় করার চেষ্টা করে। এর ফলে শরীরের মধ্যের যে ক্ষতি হয় পরিস্থিতির জটিলতা তারই প্রতিফলন। এইসময় রোগীকে অক্সিজেনের সাহায্য দেওয়া হয়।

যাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যায় তাঁদের সুস্থ হয়ে উঠতে একটু সময় লাগে। অন্তত আট সপ্তাহ লেগে যায় ঠিক হতে। এরপরই রোগীর শরীরে কিছুটা ক্লান্তিভাব থেকে যায়।

৪) কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে আমার যদি গভীর চিকিৎসার দরকার পড়ে তাহলে কি হবে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যেক ২০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে একজনের গভীর চিকিৎসার বা পরিচর্যার দরকার পড়ে। যাদের অবস্থা গুরুতর হয় তাঁদের চিকিৎসা ভেন্টিলেটর ও ঘুম পাড়িয়ে রাখা। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে বেরিয়ে এলেও রোগীদের সুস্থ হতে আরও সময় লাগে।

হাসপাতালের বিছানায় দীর্ঘদিন শুয়ে থাকার ফলে রোগীদের পেশি ক্ষয় হয়ে যায় ও অনেকের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্টের দরকার পড়ে। আবার অনেকে দীর্গদিন হাসপাতালে থেকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে এসব রোগীদের ক্ষেত্রে সুস্থ হতে ১২ থেকে ১৮ মাসও লেগে যায়।

৫) করোনা ভাইরাস কি আমার শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিষয়টি এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। কোভিড অনেকক্ষেত্রে রোগীর শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গগুলি খারাপ করে দেয়। মি টু.জে বলছেন, তিনি এমন রোগীও দেখেছেন যারা কোভিড থেকে সেরে উঠার পাঁচ বছর পরও শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় ভুগছেন।

৬) করোনা থেকে কত মানুষ সুস্থ হয়ে উঠছেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিটি দেশে আলাদা আলাদা ভাবে হিসেব রাখে। তাই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না। তবে গানিতিক মডেল অনুযায়ী ৯৯-৯৯৫ শতাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠছেন।

৭) কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর আমার কি আবার কোভিড হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা এর উত্তরে বলছেন, রোগীর একবার করোনা থেকে সেরে উঠলে তাঁর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয়। তবে এ নিয়ে এখনও ধোয়াশা রয়েছে।