বিভিন্ন ধর্ম, বর্ন, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের দেশ ভারত। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য এই দেশের মূল সুর। ভারতের ইতিহাস বহু প্রাচীন। সবসময়ই মহান জাতি হিসাবে নিজের উপস্থিতি অনুভূত করেছে ভারত। প্রাচীন কাল থেকেই এই দেশ ভারত নামে পরিচিত। ‘ভারত’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে। কীভাবে এই দেশ ভারত নাম পেয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিকেরা নানা ব্যাখ্যা করেন। এখানে আমরা তার কয়েকটি বেছে নিয়েছি।

ঋগবেদ ও দশ রাজার যুদ্ধ
ভৌগলিক দিক থেকে সাত নদীর দেশ ভারত। ঋগবেদের ১৮ সূক্তে দশ রাজার যুদ্ধ বা ‘দশহরাজন’-এর বর্ণণা আছে। পাঞ্জাবের রবি নদীর ধারে দশ শক্তিশালী উপজাতির মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। পরিকল্পনা ছিল, ভারত উপজাতির রাজা সুদাসকে সিংহাসন থেকে উৎখাত করা। কিন্তু নয় রাজার সম্মিলিত শক্তিও সুদাসকে হারাতে পারেনি। বরং পরাজিত রাজারা সুদাসের সঙ্গে সন্ধি করে নেয়। ফলে একছত্র জয় পান রাজা সুদাস। এই যুদ্ধ জেতায় তাঁর জনপ্রিয়তা একলাফে বেড়ে যায় অনেকটা। প্রজারাও নিজেদের ভারত গোষ্ঠীর সদস্য হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করে। এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ‘ভারত’ নাম। যা পরবর্তীকালে লোকমুখে হয় ভারতবর্ষ।

মহাভারত এবং রাজা ভরত
মহাকাব্য মহাভারত অনুযায়ী, রাজা ভরতের রাজত্বকালের সময় থেকে এই দেশ ভারত নামে পরিচিত। হস্তিনাপুরের রাজা দুষ্মন্ত এবং রানী শকুন্তলার সন্তান ভরত। বৃহত্তর ভারতের একের পর এক রাজ্য জয় করে তিনিই প্রথম তাদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কিংবদন্তী রাজা ভরতই পাণ্ডব এবং কৌরবদের পূর্বপুরুষ। তাঁর উত্তর পুরুষেরাও ‘ভরত’ নামেই পরিচিত।
বিষ্ণু পুরানের মতে, বনবাসে যাওয়ার আগে পুত্র ভরতের হাতে রাজ্যভার অর্পন করেন দুষ্মন্ত। সেই সময় থেকেই এই দেশ ভারতবর্ষ নামে পরিচিত।

বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী
‘দক্ষিণের সমুদ্র থেকে তুষারাবৃত পাহাড়ের উত্তরে অবস্থিত দেশ ‘ভারতম’ নামে পরিচিত। রাজা ভরতের উত্তরপুরুষেরা এখানে অবস্থান করছেন।’
অতএব এটাও বলা যায়, প্রাচীন পুরাণ থেকে ভারত নামটি পাওয়া গেছে। অন্যান্য শব্দ বা মহাদেশ থেকে আলাদা করে বোঝানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে ‘ভারত’ শব্দটি।

সংস্কৃত অনুযায়ী
সংস্কৃতে ভারত শব্দের অর্থ ‘অগ্নি’। অর্থাৎ বহন করা বা রক্ষনাবেক্ষন করা। এছাড়াও ভারত শব্দের অর্থ ‘জ্ঞানের সন্ধানে রত যিনি।’
আরও পড়ুন : ১৯৫০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েও ভারত খেলেনি কেন জানেন ?

জৈন ধর্ম অনুযায়ী
জৈন তীর্থঙ্করের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজা ভরতের নাম অনুসারে দেশের নাম রাখা হয় ভারত। এবং বলা হয়, সভ্যতার মূল উৎস নিহিত আছে এই নামের মধ্যেই।
আরও পড়ুন : ভারতের সমস্ত রাজ্যের নামের অর্থ এবং নামকরণের কারণ

অন্যান্য ঐতিহাসিকদের মতে
‘সিন্ধু নদ’কে আদি পারসিরা বলত ‘হিন্দু’। আর প্রাচীন গ্রিকরা ভারতবাসীদের বলত ইন্দোই বা ইন্দাস। অর্থাৎ সিন্ধু নদের অববাহিকার বাসিন্দা।