ত্বকের বর্ণ কালো বলেই কি থমকে যাবে জীবন? ঝাঁ-চকচকে ত্বকের উত্তরাধিকারীনী না হলে বুঝি পরিবার-পরিজন, সমাজের সমাদর মিলবে না? নায়িকা হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠির প্রথম স্তরই কি ফর্সা ত্বক? পেশাগত জীবন, বৈবাহিক জীবন, ঘরে-বাইরে যদি কালো ত্বকের অধিকারীনীদের আজও চূড়ান্ত সমালোচিত, অপদস্থ ও অপমানিত হতে হয়, তাহলে অবশ্যই একবিংশ শতাব্দীর এই সমাজকে ঠিক আধুনিক বলা চলে না। তাই না?
এই যেমন ধরুন টলিউড অভিনেত্রী শ্রুতি দাসকে (Shruti Das) নিয়ে আজ উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। অভিনেত্রীর অভিনয় নয়, সমাজ তার যোগ্যতা বিচার করে চলেছে বহু পুরাতন জং ধরা সেই সৌন্দর্যের মাপকাঠি দিয়ে। তবে তাতে অবশ্য শ্রুতিকে দমানো সম্ভব নয়। তিনি তার কেরিয়ারের পথে এগিয়ে চলেছেন নিজের গতিতে। শুধু টলিউডেই নয়, বলিউডেও (Bollywood) রয়েছেন একাধিক ব্ল্যাক বিউটি (Black Beauty), যারা রেসিজমকে (Racism) বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সফলতার শীর্ষে উঠেছেন। তারা কারা? আসুন আজ বরং জেনে নেওয়া যাক সমগ্র বিশ্বের ব্ল্যাক বিউটিদের সম্পর্কে।
দীপিকা পাড়ুকোন (Deepika Padukone) : এশিয়ান কান্ট্রিজের অনুপাতে দীপিকা পাড়ুকোনের ত্বকের বর্ণও সেই রকমই। তবে শ্যামবর্ণা দীপিকার বর্ণ কখনও তার অভিনয় জীবনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। নিজের এই তথাকথিত খামতি তিনি পূরণ করে দিয়েছেন তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে। দীপিকার উচ্চতা, টোনড ফিগার, তার স্টাইল স্টেটমেন্ট, এবং অবশ্যই অভিনয় দক্ষতাই হলো তার পরিচয়। যা তাকে দেশের সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও সমাদর এনে দিয়েছে।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া (Priyanka Chopra) : ডাস্কি স্কিন টোনের উত্তরাধিকারী প্রিয়াঙ্কা। ঝাঁ-চকচকে ফর্সা ত্বক না থাকার দরুণ কেরিয়ার শুরুর সেই প্রথমদিকে কিন্তু তেমনভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে একবার যখন বলিউডে কাজের সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন, তখনই তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার মত শ্যামলা ত্বকের অধিকারীরাও যে বলিউডে নিজের জায়গা করে নিতে পারেন, তা প্রমাণ করেছেন প্রিয়াঙ্কা। একবার একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, “আমার ব্রাউন স্কিনটোনের জন্য প্রথমদিকে আমার কাজ পেতে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নিজের কাজই যথেষ্ট”।
মালাইকা আরোরা (Malaika Arora) : বলিউডের সুপার হট এবং সেক্সিয়েস্ট মডেল-অভিনেত্রী মালাইকা আরোরা ৪৭ বছর বয়সেও নিজের সৌন্দর্য্য ধরে রেখেছেন। তার সৌন্দর্য্য আজও পুরুষ অনুরাগীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। শ্যামলা ত্বকের বর্ণ কখনোই তার কেরিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সমালোচনার তুলনায় বরাবর পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদেরও প্রশংসা অর্জন করেছেন মালাইকা।
কঙ্কনা সেন শর্মা (Konkona Sen Sharma) : ত্বকের রঙ যে কখনোই সৌন্দর্য্য এবং কেরিয়ারের সফলতার মাপকাঠি হতে পারে না, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কঙ্কনা সেন শর্মা। বলিউডের এই অভিনেত্রী পরিচালক হিসেবেও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। কঙ্কনা নিজের মুখে স্বীকার করেছেন, তার এমন ত্বকের বর্ণের জন্য তিনি নিজে গর্ববোধ করেন। এর থেকে বড় কমপ্লিমেন্ট তাকে আর কেই বা দিতে পারতো?
কাজল (Kajol) : বলিউড অভিনেত্রী কাজলের ত্বকের বর্ণও কালো। তবে তাতে তার খুব বেশি কী ক্ষতি হয়েছে? আজও বলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের তালিকায় থাকে কাজলের নাম। শ্যামবর্ণা হয়েও বলিউডের অন্যতম সফল নায়িকা তিনি। সমালোচনা নয়, কাজলকে বরং প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তার অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক।
বিপাশা বাসু (Bipasha Basu) : বলিউডের শ্যামবর্ণা নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিপাশা বাসুর। তবে ত্বকের বর্ণের জন্য তাকে কিন্তু সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। বলিউডের ব্ল্যাক বিউটি রেসিজমের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় গর্জে উঠেছিলেন এক সময়। তিনি লিখেছিলেন, “বড় হওয়ার সময়ে, আমাকে বার বার শুনতে হয়েছে আমি কালো। আমার মা’ও ডাস্কি বিউটি”। তবে পরবর্তীদিনে কিন্তু ত্বকের বর্ণের বিচারে নয়, অভিনয় দক্ষতার বিচারেই শ্রেষ্ঠ আসন পেয়েছেন বিপাশা।
শাকিরা (Shakira) : এবার আসা যাক দেশের সীমানার বাইরের কালো সুন্দরীদের প্রসঙ্গে। এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন লেবানিজ, স্পেনীয় এবং ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত শ্যামবর্ণা সুন্দরী শাকিরা। রূপ নয়, শাকিরা তার গানের জাদুতে ভুলিয়েছেন বিশ্বকে। তার গান সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত।
জেনিফার লোপেজ (Jennifer Lopez) : এই আমেরিকান সুন্দরী একাধারে অভিনেত্রী, সংগীত শিল্পী, বিনোদন তারকা, উদ্যোগপতি এবং প্রযোজকও বটে। শ্যামবর্ণা জেনিফারকে ‘১০ লক্ষের মধ্যে অন্যতম সেক্সিয়েস্ট ডিভা’ বলে গণ্য করা হয়।
বিয়ন্সে নোলস (Beyonce Noles) : একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং সফল গায়িকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন মার্কিন সঙ্গীত শিল্পী বিয়ন্সে নোলস। ২০১২ সালে জনপ্রিয় একটি মার্কিন পত্রিকা শ্যামবর্ণা বিয়ন্সেকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারীর তকমা প্রদান করে।
রবেইন রিহানা ফেন্টি (Robyn Rihanna Fenty) : এই শ্যাম বর্ণা সুন্দরীও একাধারে বার্বাডিয়ান গায়িকা, গীতিকার, মডেল এবং অভিনেত্রী। বিশ্বের ১০০জন সেক্সিয়েস্ট মহিলাদের তালিকায় থাকে তার নাম। ফ্যাশন স্টেটমেন্টের নিরিখেও তিনি শীর্ষস্থানে থাকেন।