লঙ্কার রাজা রাবন। তিনি রাক্ষসদের রাজা, এটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়। বিশ্রবা মুনির ঔরসে কৈকসী’র গর্ভে তাঁর জন্ম। জন্ম সূত্রে তিনি ব্রাক্ষ্মন তো বটেই, অসীম জ্ঞানের জন্যও তাঁকে মহাব্রাক্ষ্মন নামে ডাকা হয়। তবে রাবনের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি কবি এবং গীতিকার। রাবন-রচিত গান, কবিতা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। যেমন ‘শিবস্ত্রোত্রম’। অবাক লাগলেও এটাই সত্যি শিব এবং কালী বন্দনার অনেক স্ত্রোত্রই রাবন রচিত। যা পরে পুরানেও ঠাই পেয়েছে।
রাবণের ১০ টি মাথা কেন?
রাবণকে নিয়ে বহু মিথ প্রচলিত আছে। তাঁর ১০ মাথা নিয়েও কম গল্প ছড়ায়নি। মহাকাব্য রামায়নে মহর্ষি বাল্মিকী লিখেছেন, রাবনের দশটি মাথা, কুড়িটি বাহু, গাত্রবর্ণ ঘোরতর কালো, উজ্জ্বল চুল ও দাঁত এবং টকটকে লাল ঠোঁট ছিল। ইনি ময়দানবের কন্যা মন্দোদরীকে বিবাহ করেন। ৪ টি বেদ এবং ৬ টি শাস্ত্র ছিল রাবনের নখদর্পনে। দশটি মাথার জন্যই রাবনের আরেক নাম দশানন। অনেকের মতে, এই ১০ মাথা ৪ বেদ এবং ৬ শাস্ত্রের প্রতীক। আবার অনেকের ধারণা, এই ১০ টি মাথা বিভিন্ন প্রকার শৌর্য ও ভালোবাসার প্রতীক। এর কোনওটার সঙ্গেই বাস্তবের যোগ নেই। আসলে ১০ টি মাথা রাবনের দশটি চারিত্রিক বৈশিষ্টের প্রতীক। মহাজ্ঞানী হওয়া স্বত্বেও যে চারত্রিক অবনতির কারণে শ্রীরামের হাতে ধ্বংস হন রাবন।
প্রথম মাথা – কাম
যার বশবর্তী হয়ে সীতা হরণ করেছিলেন রাবন।
দ্বিতীয় মাথা – মদমত্ততা
নিজের জ্ঞানের ওপর অতিরিক্ত বিশ্বাস। যাকে ইংরাজিতে ‘ওভার কনফিডেন্স’ বলা হয়।
তৃতীয় মাথা – অহংকার
নিজেই সেরা এমন মনোভাব। যার কারণে ভাই বিভীষণ, কুম্ভকর্ণ এমনকি পুত্র ইন্দ্রজিতের কথাতেও কান না দিয়ে রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান রাবন।
আরও পড়ুন : রামায়ণের ১০টি অজানা তথ্য, চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি আপনি জানেন না
চতুর্থ মাথা – লোভ
কোনও সীমা পরিসীমা ছিল না। যার ফলে শুধু পরস্ত্রী সীতাকে হরণ করেই ক্ষান্ত হননি তাঁকে অশোক বনে বন্দী বানিয়ে রেখেছিলেন।
পঞ্চম মাথা – ক্রোধ
যার বশবর্তী হয়ে সত্য-মিথ্যা বিচার না করে শুধু শূর্পনাখার কথাতেই প্রতিশোধস্পৃহায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন রাবন।
ষষ্ঠ মাথা – মোহ
জাগতিক সমস্ত কিছুর প্রতিই মাত্রাতিরিক্ত টান। এবং সেই মোহ বজায় রাখতে যত নীচেই নামতে হোক না কেন, রাবন তাতেও রাজি। বালির সঙ্গে যুদ্ধই তার প্রমাণ।
আরও পড়ুন : হনুমান কি সত্যিই ব্রহ্মচারী ছিলেন? কী বলছে ‘রামায়ণ?
সপ্তম মাথা – মাৎসর্য
সহজেই হিংসা জন্মাত রাবনের মনে। যার ফলে পরের জিনিস হস্তগত করতেও বাধেনি তাঁর। লঙ্কার সিংহাসন থেকে ভাই কুবেরকে সরিয়ে নিজে রাজা হয়ে বসা এই মাৎসর্যের বশবর্তী হয়েই।
অষ্টম মাথা – জড়তা
নিজের অহংকার এবং লোভ এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যাতে অন্যের আবেগ ভালোবাসাও তাঁর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে যেত।
নবম মাথা – ঘৃণা
এই রিপুর বশ হয়েই বিভীষণকে লাথি মারেন রাবণ।
দশম মাথা – ভয়
এটা নিজের অবস্থা, সম্পত্তি হারানোর ভয়। যার ফলে ভুল পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন রাবণ।
রাবনের এই ১০ মাথা জাগতিক সমস্ত চাহিদার প্রতি কামনা বাসনায় ভরিয়ে তোলে। যার ফল, অসীম জ্ঞানী হওয়া স্বত্বেও সপরিবারে পতন।