কেন চিরজীবন অবিবাহিত ছিলেন লতা মঙ্গেশকর, নেপথ্যে রয়েছে এক অসম্পূর্ণ প্রেমকাহিনী

সঙ্গীত দুনিয়ার সম্রাজ্ঞী তিনি। সারা দুনিয়া তার সংগীত প্রতিভাকে কুর্নিশ করে। তবে তার শরীরে বইছে সাধারণের রক্ত। ঠিক এই কারনেই তার আর রাজ পরিবারের রাজরানী হয়ে ওঠা হলো না। ভালবাসলেও মনের মানুষের সঙ্গে সংসার করা হয়ে উঠল না। তিনি সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)। যিনি একসময় ভালোবেসেছিলেন রাজস্থানের দুঙ্গারপুর রাজপরিবারের মহারাজা রাজ সিংহকে (Raj Singh Dungarpur)।

দীর্ঘ প্রায় ৫০ দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের দুনিয়াকে সমৃদ্ধ করেছেন লতা মঙ্গেশকর। তাকে ছাড়া হয়তো বলিউড অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তার কণ্ঠের আবেগ, মাদকতা, গায়কীর গভীরতা শ্রোতার মন ছুঁয়ে যায়নি, এমনটা কার্যত অসম্ভব। তার গানেই তো বলিউডে প্রেম পূর্ণতা পেয়েছে। যে প্রেম একসময় তার জীবনেও ধরা দিয়েছিল। প্রেমে পড়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর।

সুরের ভুবনের সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকার যার প্রেমে পড়েছিলেন তিনি ডুঙ্গারপুর রাজপরিবারের মহারাজা রাজ সিংহ (Raj Singh Dungarpur)। রাজ সিংহ তৎকালীন সময়ের একজন ক্রিকেটার। এছাড়াও তিনি তৎকালীন সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্টও ছিলেন। ক্রিকেটের সঙ্গে সুরের দুনিয়ার সংযোগস্থাপন হয়েছিল লতার ভাই হৃদয়নাথের (Hridaynath Mangeshkar) সূত্র ধরে।

Raj Singh Dungarpur

রাজ সিংহ ছিলেন লতা মঙ্গেশকরের ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের অত্যন্ত কাছের বন্ধু। পরবর্তীকালে তিনি লতারও অত্যন্ত কাছের বন্ধু হয়ে ওঠেন। হৃদয়নাথের বাড়িতেই দুজনের দেখা হতো। ক্রমশ বন্ধুর দিদির সঙ্গেও বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেন রাজ সিংহ। এভাবেই বেশ কয়েকবার দেখা সাক্ষাতের পর একে অপরের প্রেমে পড়েছিলেন তারা। এরপর যখন ভালোবাসাকে পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এলো তখনই বাধ সাধলো রাজ সিংহের পরিবার।

রাজ সিংহের বাবা মহারাওয়াল লক্ষণ সিংজি সেই সময় দুঙ্গারপুরে রাজত্ব করছিলেন। তিনি তার ছোট ছেলের বিয়ে কোনমতেই এক সাধারণ পরিবারের মেয়ের সঙ্গে হতে দিতে রাজি ছিলেন না। মহারাজ লক্ষণ সিংজির প্রবল আপত্তির কারণেই রাজ সিংহ এবং লতা মঙ্গেশকারের প্রেম পরিণতি পেল না। বাবা-মায়ের কাছে রাজ সিংহকে প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছিল, কোনও সাধারণ পরিবারের মেয়েকে তিনি রাজ ঘরানার পুত্রবধূ করে তুলবেন না। রাজ সিংহ বাবা মায়ের আজ্ঞা ঠেলতে না পেরে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি আজীবন বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন।

রাজ সিংহ যখন এমন প্রতিজ্ঞা করেন তখন তার ভালোবাসা এবং প্রতিজ্ঞাকে সম্মান প্রদর্শন করে লতাও আজীবন অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর বাকি সময়টা তারা একে অপরের ভাল বন্ধু হিসেবেই কাটিয়ে দেন। ২০০৯ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর, আলঝাইমার্স রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের মৃত্যু হয়। আরও একটি অপূর্ণ প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকলো বলিউড। তবে লতা মঙ্গেশকর এবং রাজ সিংহ দুঙ্গারপুরের প্রেম প্রকৃতঅর্থেই ভালোবাসা, বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে আজীবন নিজের বুকে তুলে রাখবে বলিউড।