পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হারের জন্য দায়ী এই ৫টি কারণ

খেলা শেষ। একুশের নির্বাচনী খেলায় বিজেপিকে রীতিমতো গো হারান হারিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। অনভিপ্রেত পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে বঙ্গ বিজেপি শিবির। একুশের এই লড়াইয়ে জয় লাভ করতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা বারংবার রাজ্যে “ডেলি প্যাসেঞ্জারী” করছিলেন এবং তাদের মুখে বারবার শোনা যাচ্ছিল “অব কি বার‌, ২০০ পার”! তবে তাদের সেই স্লোগান কিন্তু ধোপে টিকল না।

২০০ আসলে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বাংলায় সরকার গঠন করা তো দূর অস্ত, বিজেপি তিন অঙ্কের গণ্ডিই পেরোতে পারলো না এই দফার বিধানসভা নির্বাচনে। অথচ চলতি দফার বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপির প্রত্যাশা কিছু কম ছিল না। সেই জায়গায় তৃণমূলের কাছে এমন শোচনীয় হারের সম্মুখীন হয়ে বর্তমানে আত্মসমীক্ষা করে চলেছে কেন্দ্রীয় শাসক দল।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরাজয়ের কারণ কি কি হতে পারে? বিজেপির অন্দরমহল এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত। বিশেষত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা ইতিমধ্যেই পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে গিয়েছেন। সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য ৫ টি মনপুতঃ উত্তর খুঁজে বের করেছে বঙ্গ বিজেপি শিবির।

   

Mamata Banerjee vs BJP, Bengal wants its Own Dughter

১. বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের অভাব

বিজেপি শিবিরের হারের ক্ষেত্রে এই কারণটিকেই একটি নিশ্চিত কারণ হিসেবে ধরে নিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একুশের লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপি কোনও লড়াকু নেতা বা নেত্রীকে তুলে ধরতে পারেনি। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা বারংবার বাংলায় এসে বলে গিয়েছেন, একুশে বিজেপি সরকার গড়লে মুখ্যমন্ত্রী হবেন “বাংলার ভূমিপুত্র”। তবে কে সেই ভূমিপুত্র, তা নিশ্চিত করেনি গেরুয়া শিবির।

২. বহিরাগত প্রসঙ্গ

একুশে বাংলার মসনদ দখলের লড়াইয়ের ময়দানে নামার মতো বঙ্গ বিজেপি শিবিরের তরফে তেমন কোনো নেতা বা নেত্রী ছিলেন না। তাই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জে পি নাড্ডাদের মতো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের উপরেই অতিরিক্ত নির্ভর হয়ে পড়েছিল গেরুয়া শিবির। বিরোধী তৃণমূল শিবির আবার বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের গায়ে “বহিরাগত” তকমা সাঁটিয়ে দেয়! যা বাংলার মানুষের আবেগকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

Amit Shah with West Bengal BJP Leaders

৩. বিজেপির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস

অতি দর্পে হত লঙ্কা। একুশের লড়াইয়ে এমনটাই হয়েছে বিজেপির। ২০১৬ সালে বিজেপি যেখানে মাত্র ৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল, ২০২১ এ তারা সেই জায়গার দখল নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছে! ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা করে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল বিচার করেছে বঙ্গ বিজেপি শিবির। যা মোটেই উচিত হয়নি বলে এখন মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্বরা।

৪. রাজনৈতিক মেরুকরণ

একুশের লড়াইয়ে ভোটের রাজনীতিতে “মেরুকরণ” প্রসঙ্গটি এক অন্যতম বড় ইস্যু। হিন্দু-মুসলিম বিভাজন বিজেপি হারের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ কর্তারা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ আনতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রে কড়া ভাষা প্রয়োগ করেছেন বিজেপি নেতারা। যা ভালোভাবে নেননি রাজ্যবাসী। এতে হিন্দু ভোটের সিংহভাগ বিজেপির ঝুলিতে যায়নি। তাই এই পরাজয় বলে মনে করছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা।

৫. বিজেপির অন্দরমহলে আদি এবং নব্যের কলহ

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বিজেপির অন্দরমহলে আদি এবং নব্য সদস্যের নিয়ে গোষ্ঠী কোন্দল শুরু হয়। বিজেপির প্রাক্তন সদস্যদের অভিযোগ নতুনদের দলে টানতে গিয়ে কার্যত দলের পুরাতন সদস্যদের উপেক্ষা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন : এই ৫টি কারণে নন্দীগ্রামে মমতাকে হারিয়ে জিতলেন শুভেন্দু অধিকারী

বিশেষ করে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের অন্দরমহল থেকে সদস্যদের দলের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা দলীয় কর্মীরা ভালোভাবে নেননি। পরাজয়ের পর বিজেপি কর্তারা কার্যত স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন যে রাজ্যের সর্বত্র বিজেপির প্রার্থী মনোনয়নে বেশকিছু গোলমাল থেকে গিয়েছে।