“স্টার জলসা”র অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক “খড়কুটো”। বিগত প্রায় বেশ কয়েক মাস যাবত “খড়কুটো” “স্টার জলসা”র সন্ধ্যে ৭-৭.৩০ টার স্লটে সম্প্রচারণ করা হচ্ছে। প্রথম দিন থেকেই ধারাবাহিকটি দর্শক অত্যন্ত পছন্দ করেছেন। সাংসারিক কুটকাচালি, ঝগড়া-অশান্তি, ষড়যন্ত্রের বাইরে যৌথ পরিবার ভিত্তিক এই ধারাবাহিকটি অচিরেই দর্শকের মনে দাগ কেটেছে। ফলে ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তাও ক্রমশ বেড়েছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ধারাবাহিকের টিআরপি।
শাশুড়ি-বৌমার কোন্দল ভিত্তিক প্লটের বাইরে বেরিয়ে একেবারেই ভিন্ন স্বাদের “খড়কুটো” ধারাবাহিকটি দর্শককে উপহার দিয়েছিলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। তার লেখনীতে “খড়কুটো” গল্প এতদিন যে পথে এগিয়ে চলছিল, তা দর্শক বেশ উপভোগ করেছেন। ধারাবাহিকের প্রধান দুই চরিত্র “সৌজন্য” এবং “গুনগুন” এর অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি, খুনসুটি, দুষ্টু-মিষ্টি দাম্পত্য সম্পর্ক দর্শককে “সৌগুন” এর অনুরাগী করে তুলেছে।
তার উপর আবার বাড়তি পাওনা হিসেবে রয়েছে “জ্যাঠাই”য়ের কিপ্টেমি, “ভজন” এর বেসুরো গান, “পটকা”র দুষ্টু বুদ্ধি এবং তার সঙ্গে “ঋজু”, “মিষ্টি”, “রুপাঞ্জন” “চিনি”র তাল মিলিয়ে চলা দর্শক বেশ উপভোগ করেন তবে মাসখানেক ধরে “খড়কুটো” কিন্তু নিজের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। দর্শকদের কাছে “খড়কুটো” এতদিন যেভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে, বর্তমানে তেমনটা আর হচ্ছে না।
আসলে গত মাস থেকেই “খড়কুটো”র গল্পের মোড় এমন দিকে ঘুরেছে যে দর্শকের একাংশ এখন আর ধারাবাহিকটিকে তেমনভাবে পছন্দ করছেন না। এর আগে “ভজন” এর টাকা ধার করা নিয়ে একটি রহস্যের পরিবেশ গড়ে তুলে ধারাবাহিকে টুইস্ট আনার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে সেই প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ সিরিয়াল নির্মাতারা। কারণ, শুধু গানের অ্যালবাম বানানোর জন্য বাড়িতে কারোকে কিছু না জানিয়ে লক্ষাধিক টাকা ধার নেওয়া এবং সেটিকে কেন্দ্র করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতিক্রিয়া দর্শক স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি।
সেই সমস্যা দূর হতে না হতেই নতুন দিকে গল্পের মোড় ঘোরানোর প্রচেষ্টাও করা হয়েছে। আর এখানেই আপত্তি তুলেছেন দর্শক। কারণ সম্প্রতি “খড়কুটো” ধারাবাহিকে একটি নতুন চরিত্রের আগমন হয়েছে। চরিত্রটি আসলে “আদিল” নামের এক মুসলিম যুবকের। ধারাবাহিকে প্রোমো থেকে বেশ স্পষ্ট এই যে “আদিল” আসলে “জ্যাঠাই”য়ের বড় মেয়ে “মুনিয়া”র সন্তান। যে “মুনিয়া” আজ থেকে বহু বছর আগে বাড়ির অমতে গিয়ে এক মুসলিম ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করে।
ধারাবাহিকের এমন গল্প একদম না পসন্দ হিন্দু সংরক্ষণবাদীদের। কারণ প্রথম থেকেই একটি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে (মুখার্জি পরিবার) মুসলিম ধর্মাবলম্বী যুবকের আগমন অনধিকার প্রবেশের মতো মনে হয়েছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। এই নিয়ে সোশ্যাল দুনিয়ায় কম তরজা চলেনি। নেটিজেনরা এক বাক্যে ধারাবাহিকটিকে বয়কট করার ডাক দিয়ে বসেন! তবে যখন থেকে আন্দাজ করা গেল যে “আদিল” আসলে “মুনিয়া”র সন্তান, তখন থেকে বিতর্ক আরও বাড়লো।
আরও পড়ুন : দুর্বল চিত্রনাট্য ও মাত্রাতিরিক্ত ন্যাকামিতে তিতিবিরক্ত দর্শক, কমছে ‘খড়কুটো’র টিআরপি
একজন হিন্দু-ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়ে কেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করবেন? ধারাবাহিকের গল্পের গতিপথ বিবেচনা করে এমন প্রশ্নই রাখছেন নেটিজেনরা। অনেকেই আবার এক্ষেত্রে “লাভ জিহাদ” এর প্রসঙ্গ টেনে আনছেন। দর্শকের একাংশের মতে “লাভ জিহাদ”কে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে এই ধারাবাহিকে। যে কারণে ধারাবাহিকটি এখন আর দেখতে চাইছেন না অনেকেই। ফলে “খড়কুটো” ধারাবাহিকের টিআরপি রেট হু হু করে নামছে।
আরও পড়ুন : হিন্দু ব্রাহ্মণের বাড়িতে ‘মুসলিম’ ছেলে কেন, ‘খরকুটো’ বয়কটের ডাক সোশ্যাল মিডিয়ায়
হিন্দু দর্শকদের একাংশের মতে, এই ধারাবাহিকটি আসলে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানছে। “খড়কুটো” ধারাবাহিকের গল্পের এমন পরিণতি তাই মেনে নিতে পারছেন না কেউ। এই ধারাবাহিক মারফত সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গিয়ে সাম্যবাদের ধারণা দিতে চেয়েছিলেন সিরিয়াল নির্মাতারা। তবে তেমনটা আর হল কই? এখন বরং এমন সংবেদনশীল একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাই “খড়কুটো” ধারাবাহিকের টিআরপি কমিয়ে দিয়েছে।