শুধু দারিদ্র্যসীমার নিচে নয়, দারিদ্র সীমার উপরের পরিবাররাও রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন, ঘোষনা রাজ্য সরকারের। পরিবর্তে দারিদ্র সীমার উপরে বসবাসকারীদের সরকারি পরিচয় পত্র হিসাবে ভর্তুকিহীন ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত এই রেশন কার্ডের আবেদনের দরজা খুলে যাচ্ছে আগামী ৫ই নভেম্বর থেকে।
কয়েক মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, শুধুমাত্র পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য রেশন কার্ড পেতে অনেকেই আগ্রহী। তাঁদের জন্যই ওই বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা হবে। সেই উদ্যোগই চালু হতে চলেছে আগামী ৫ নভেম্বর থেকে। আবেদনকারীকে অনলাইনে শুধুমাত্র ১০ নম্বর ফর্ম পূরণ করলেই চলবে। এর পর এক মাসের মধ্যে তিনি বাড়িতে বসে নতুন পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল রেশন কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন। ডাক মারফত ওই রেশন কার্ড আবেদনকারীকে পৌঁছে দেবে সরকার।
এই ধরনের ডিজিটাল রেশন কার্ডকে পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। তবে প্রাপকরা খাদ্যসুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সস্তায় চাল-গম পাবেন না। পৃথক ভাবে শ্রেণিবদ্ধ এই ধরনের রেশন কার্ড প্রাপকরা বর্তমানেও রয়েছেন। রাজ্যের খাদ্যসুরক্ষা যোজনায় যাঁরা রেশন কার্ড সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই শ্রেণিতে পড়েন।
খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ৫ নভেম্বর থেকে দারিদ্র সীমার উপরের পরিবারদের জন্য ভর্তুকিহীন ডিজিটাল রেশন কার্ডের আবেদন গ্রহণ শুরু হবে। আবেদন করার জন্য সংশ্লিষ্ট রেশন দোকান অথবা খাদ্য দপ্তরের অফিস থেকে ১০ নাম্বার ফর্ম সংগ্রহ করে সেই ফর্ম পূরণ করে বিডিও অফিস, পৌরসভা, কর্পোরেশনের বোরো অফিসে আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে।। পাশাপাশি এই বিশেষ ক্যাম্পে ৩ ও ৯ নম্বর ফর্মও জমা করা যাবে। এছাড়াও ভর্তুকিহীন ডিজিটাল রেশন কার্ডের আবেদন করা যাবে অনলাইনে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য দপ্তরের ইতিহাসে এই প্রথম অনলাইনে রেশন কার্ডের জন্য আবেদন গ্রহণের পথ খুলে যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, অনলাইনে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য গ্রাহককে খাদ্য দপ্তরের ওয়েবসাইট www.wbpds.gov.in -এ লগইন করতে হবে। সেখান থেকে ১০ নম্বর ফর্মটি ডাউনলোড করে সেটি পূরণ করে হাতে হাতে জমা দেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন :- NRC-র জন্য কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন? দেখে নিন তালিকা
হাতে হাতে জমা দেওয়া ছাড়াও পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন করার সুযোগও থাকছে। সে ক্ষেত্রে কম্পিউটার বা মোবাইলে ফর্মটি পূরণ করে পরিচয় পত্রের প্রমান হিসাবে আধার কার্ডের ছবি আপলোড করতে হবে। আবেদনের ৩০ দিনের মধ্যে ডাকের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছে যাবে ঝাঁ-চকচকে একটি ডিজিটাল রেশন কার্ড।
নতুন ডিজিটাল কার্ড হাতে পৌঁছে যাওয়ার পর পুরাতন রেশন কার্ডটি বাতিল হয়ে যাবে। নতুন স্মার্ট রেশন কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকরা ভর্তুকিহীন জিনিসপত্র কিনতে পারবেন। এমনকি এই কার্ডের মাধ্যমে বেসরকারী বিপণন কেন্দ্র থেকেও যাতে গ্রাহকরা ছাড় পান সে বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন :- Voter Card ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক, কীভাবে করবেন দেখুন
রেশন দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী তুলবেন না। কিন্তু একটি ‘স্মার্ট কার্ড’ প্রয়োজন। এমন দাবি রয়েছে রাজ্যের বিত্তশালী মানুষদের। রেশন কার্ডকে একটি পরিচয়পত্র হিসাবে রাখতে চান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিধানসভায় সর্বদল বৈঠকে স্বচ্ছল নাগরিকদের ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রদানের বিষয়ে প্রস্তাব নেওয়া হয়। সেই মতো খাদ্য দপ্তর ১০ নম্বর ফর্ম চালু করছে। এই কার্ডে নাম, ঠিকানা ছাড়াও জন্ম তারিখ উল্লেখ থাকবে বলে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। রাজ্য মনে করছে রেশন কার্ডকে এখন দু’টি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত। যাঁরা গণবণ্টন ব্যবস্থার সুযোগ পেতে চান তাঁদের রেশন কার্ডের প্রয়োজন একটি কারণে। যাঁরা পরিচয়পত্র হিসেবে রেশন কার্ডকে ব্যবহার করতে চান তাঁদের প্রয়োজন এক ধরনের।