

কোরোনা ভাইরাসের জেরে মার্চ মাস থেকে দেশ জুড়ে ধাপে ধাপে চলছিল লক ডাউন। আগামী ৩১ মে শেষ হবে চতুর্থ দফার লক ডাউন। তারপর কি হবে, কি কি নির্দেশ মানতে হবে, এইসব নিয়ে প্রশ্ন ছিল সবারই।এর উত্তরে জানানো হলো কেন্দ্র থেকে।
চতুর্থ দফার লক ডাউনের পর এবার দেশ জুড়ে শুরু হবে আনলক এর ধাপ। অর্থাৎ চারটি ধাপে লক হয়ে থাকা দেশ এবার ধাপে ধাপে আনলক হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশিকায় তিনটি ধাপে সমগ্র দেশের আনলক হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক সেগুলি কি কি।
লকডাউন আনলকের প্রথম ধাপ
এই প্রথম ধাপে শর্তসাপেক্ষে ধর্মীয় উপাশনাস্থল, হোটেল, রেস্টুরেন্ট এর মতন ব্যবস্থা গুলি চালু করা হবে আগামী ৮ই জুন থেকে। খুলে দেওয়া হবে শপিং মল গুলিও। এই বিষয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফ থেকে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে। রাজ্য সরকার সহ অন্যান্য কিছু সরকারি সংস্থার সাথে আলোচনা করে নির্দিষ্ট নীতি মেনে এই কাজগুলো শুরু হবে।এই ধাপ ১লা জুন থেকে শুরু করে ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই সময় দেশে কোন কোন পরিষেবা চালু হচ্ছে
১. কোরোনা পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে এবং বিধিনিষেধ ও নির্দেশিকা পালন করে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করা যাবে। খেলাধুলা সম্পর্কিত জমায়েত করতেও এই দিকগুলি মাথায় রাখতে হবে।
২. কোনো বিশেষ পাস ছাড়াই আন্তঃরাজ্য ও অন্তঃরাজ্য যাতায়াত শুরু হবে ১লা জুন থেকে। এই ক্ষেত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো নিজস্ব গাইডলাইন তৈরি করবে।
৩. প্রতিদিন নাইট কারফিউ চলবে সকাল ৯টা থেকে ভোর ৫ টা। এই নিয়ম আগেও ছিল, সেক্ষেত্রে সময় ছিল সন্ধ্যে ৭ টা থেকে সকাল ৭টা।
৪. শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন, বিশেষ প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং বিশেষ ক্ষেত্রে বিমান পরিষেবা পূর্বের মতনই চলবে।
লকডাউন আনলকের দ্বিতীয় ধাপ
এই দ্বিতীয় ধাপে খোলা হবে স্কুল, কলেজ সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও কোচিং সেন্টারগুলো খোলা হবে। তবে এক্ষেত্রে কেন্দ্র রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলির সাথে কথা বলবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে ফিডব্যাকের ওপর নির্ভর করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি খোলা হবে। ফিডব্যাক নিতে হবে অভিভাবক ও অন্যান্যদের (শিক্ষক, ছাত্র, টিচিং স্টাফ) থেকে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্র থেকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর পরবর্তীতে জানানো হবে। এর জন্য
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে এই বিষয় বিস্তৃত আলোচনা করবে।
আনলকের তৃতীয় ধাপ
এই ধাপে জোর দেওয়া হবে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ওপর। রাজ্য সরকার ও অন্যান্য সংস্থার সাথে কথা বলে লোকাল ট্রেন,আন্তর্জাতিক বিমান, মেট্রো রেল ইত্যাদি চালানোর বিষয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। রাজ্যের এবং অঞ্চলের কোরোনা পরিস্থিতি আলোচনা করে পার্ক, সিনেমা হল, জিম, পুল, ক্লাব ইত্যাদি খোলা যাবে।
তবে এই সব ধাপের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য – কন্টেনমেন্ট জোনের বাইরে। যে জায়গা গুলি কন্টেনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তার বাইরে এই আনলক প্রক্রিয়া চলবে।
রাজ্যে লকডাউন আনলক
কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশিকা জারির আগেই সম্পূর্ণ রাজ্যকে কিছু জোনে ভাগ করা হয়। কন্টেনমেন্ট অর্থাৎ সংক্রমিত এলাকা গুলিকে এ, সংক্রমন মুক্ত এলাকা গুলিকে বি, এবং বাফার জোনকে সি এলাকা বলা হয়। শনিবার নবান্নের তরফ থেকে বলা হয় যে কন্টেনমেন্ট জোন বাদে অন্যান্য অংশে জীবন যাত্রা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে রাজ্য এবং সংক্রমিত এলাকা গুলিতে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত একইভাবে চলবে লক ডাউন। এই কারণেই সংক্রমিত এলাকার বাইরে বেশ কিছু বিষয় ছাড় দেওয়া হয়। দেখে নিন সেগুলো কি কি
রাজ্যে লকডাউনে যা যা ছাড়
১. নির্দিষ্ট বিধি মেনে ৮ জুন থেকে শপিং মল, হোটেল ও রেস্তোরাঁ খুলবে।
আরও পড়ুন :- বদলে গেল নাইট কার্ফুর সময়, ওই সময় যা যা করা যাবেনা
২. পয়লা জুন থেকে ইনডোর ও আউটডোর উভয়ের শুটিং শুরু করা যাবে। তবে এক্ষেত্রেও সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। একসাথে সর্বাধিক ৩৫ জন জমায়েত করতে পারবে।টেলিভিশন ও সিনেমার শুটিং শুরু হলেও কোনো রিয়্যালিটি শো এর শুটিং করা যাবেনা।
৩. রোটেশন পদ্ধতি অবলম্বন করে সরকারি অফিসে আগামী ৮ জুন থেকে ৭০ শতাংশ কর্মী যোগদান করবেন। বেসরকারি অফিসগুলোর ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত সংস্থার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে রাজ্য। তবে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কেই প্রাধান্য দেওয়া পরামর্শ দিচ্ছে সরকার।
৪. পয়লা জুন থেকে শহরের ভেতরে এবং এবং আন্তঃরাজ্য সরকারি-বেসরকারি বাস পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এক্ষেত্রেও মানতে হবে বিধিনিষেধ। বাসে যত আসন সেই সংখ্যায় যাত্রী উঠতে পারবেন। যাত্রীদের ক্ষেত্রে ফেস কভার ও গ্লাভস থাকা বাধ্যতামূলক।
আরও পড়ুন :- পঞ্চম দফার লকডাউনে যা যা বন্ধ থাকছে, রইলো তালিকা
৫. পয়লা জুন থেকে খুলবে ধর্মীয় উপা স্থল ( মন্দির, মসজিদ, গির্জা-সহ সমস্ত উপাসনাস্থল)। তবে এক্ষেত্রেও আছে বিধিনিষেধ। কোনো স্থানে ১০ জনের বেশী জমায়েত করা যাবেনা এবং কোনো উৎসবের আয়োজন করা যাবেনা।
৬. জুন মাসের প্রথম দিন থেকেই জুট মিল, চা-বাগান,ছোট এবং মাঝারি শিল্পে সমস্ত কর্মী (১০০%) যোগ দিতে পারবেন।নির্মাণ কাজেও যোগ দিতে পারবেন ১০০ শতাংশ কর্মী।