কোন পদ্ধতিতে করোনা সংক্রমণ কমালো দিল্লী, কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা

কলকাতায় যখন প্রতিদিন নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তখন দিল্লি, মুম্বই ও আমদাবাদে সংক্রমণ কমছে। ভারতে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে মহারাষ্ট্রে।মহারাষ্ট্রের পরেই বৄদ্ধির হার সর্বোচ্চ ছিল দিল্লিতে। এখন যদিও আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে তামিলনাড়ু। উদ্বেগ ছিল গুজরাতের আমদাবাদ সংক্রমণ নিয়েও। প্রথমদিক থেকেই রাজধানী দিল্লিতে কোরোনা সংক্রমণের হার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা এমন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল যে মনে করা হচ্ছিল জুলাই মাসে শুধু দিল্লিতেই সেই সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু সেখানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গেছে আক্রান্তের সংখ্যা। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ১.২৫ লক্ষ।

করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে মুম্বই, দিল্লি, আমদাবাদে সংক্রমণ পড়তির দিকে। মুম্বাইতে জুন মাসের শেষের দিকে যেখানে প্রতিদিন ২০০০ করে আক্রান্ত হচ্ছিলেন, এখন সেখানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০০ এর আশেপাশে। পরিসংখ্যানের হিসেবে মুম্বইয়ের চেয়েও ভাল অবস্থায় দিল্লি। জুন মাসের শেষের দিকে রাজধানীতে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল প্রায় ৪ হাজার করে। এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ১০০০-এর আশেপাশে। আমদাবাদের পরিসংখ্যানও ইতিবাচক। গুজরাতের এই শহরে এখন প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দু’শোর কম-বেশি।

এই বিষয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মধ্যে প্রথম যে রাজ্য গুলিতে লকডাউন শিথিল করা হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল রাজধানী দিল্লি। ফলস্বরূপ মে এবং জুন মাসে দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা এমন হারে বাড়তে থাকে যে ধারণা করা হয় জুলাই মাসে রাজধানীতে প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। সেই সময় দিল্লিতে হেভি স্প্রেডার দের চিহ্নিত করা শুরু হয়।

অর্থাৎ এরকম ব্যাক্তিরা যারা একই দিনে অনেক মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। এদের মধ্যে আছেন দোকানদার, অটো চালক, ঠেলাওয়ালা ইত্যাদি ব্যাক্তিরা যারা একই দিনে অনেক মানুষদের সংস্পর্শে আসেন। সবার আগে এই ব্যাক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি সরকার।

দিল্লির স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায় পরীক্ষায় দেখা গেছে এইসব ব্যাক্তিদের অধিকাংশই কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন তবে তারা ছিলেন উপসর্গহীন। ফলে এদের শরীরে কোরোনা সংক্রমণের ফল দেখা না দিলেও এরা প্রত্যহ বহু ব্যাক্তিকে সংক্রমিত করছিলেন। ঘিঞ্জি এলাকায় অবস্থিত দোকানদার দের পরীক্ষা করা হয়। জানা যায় এই উপসর্গ বিহীন রোগীদের কিছু সময়ের জন্য নিভৃতবাসে পাঠানো হয়।

দিল্লিতে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে চলার অন্যতম কারণ ছিলেন দিল্লির অটো চালকরা। কারণ অন্যান্য পরিষেবা( মেট্রো, বাস) বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষদের কর্মস্থলে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল অটো। এই অটো চালকদের নিয়ম করে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানা যায় দিল্লি স্বাস্থ্য কর্তাদের সূত্রে।পরীক্ষা করা হয়েছে নাম মাত্র রাস্তায় চলা বাসের চালক ও কন্ডাক্টর দেরও।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) রাজেশ ভূষণ এর কথায়,এক সময় দিল্লির পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ পর্যবেক্ষক দল গড়ে তোলা হয় জার সদস্য ছিলেন নীতি আয়োগের সাস্থ্য সম্পর্কিত সদস্য বিনোদ পাল,এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-এর ডিরেক্টর সুজিতকুমার সিংহ, দিল্লির স্বাস্থ্যসচিব। এই দলই ঠিক করে দিল্লিতে সুপার স্প্রেডার দের চিহ্নিত করে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন :- বাতাসের মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে করোনা, সংক্রমণের থেকে বাঁচতে মেনে চলুন ৬টি টিপস

বর্তমানে দিল্লিতে জুনের দ্বিগুণ পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে বলে জানান তিনি।তিনি বলেন এই পরীক্ষায় কোরোনা পজিটিভ উপসর্গ যুক্ত ব্যাক্তিদের হাসপাতাল ও উপসর্গ হীন ব্যাক্তিদের নিভৃতবাসে পাঠানো হয়। কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয় হটস্পট ও কনটেনমেন্ট জ়োনে।সেই অঞ্চলে প্রতি বাড়ি গিয়ে চালানো হয়েছে সমীক্ষা। কোনো ব্যাক্তির সর্দি কাশি এর মতন কোনো উপসর্গ থাকলেই করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় ওই অঞ্চলে।এক্ষেত্রে বিনোদবাবুও জানান যে শুধু দিল্লির ক্ষেত্রেই নয় বরং সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই পরীক্ষা বাড়ালেই হ্রাস টানা যাবে সংক্রমনে।