এক মাস রোজা রাখলে মানুষের শরীরে কী কী পরিবর্তন হয় দেখুন

প্রতি বছর  পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কোটি কোটি মুসলিম ধর্মালম্বী মানুষ বছরের নির্দিষ্ট সময় রোজা পালন করেন। এই নিয়মে কোটি কোটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী ব্যাক্তিরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনরকম খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করেন না। ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। পবিত্র রমজান মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা সামর্থ্যবান সকল মুসলমানের উপর রোজা ফরজ করে দিয়েছেন। একমাসের এই ব্রত পালন মুসলিমদের শরীরের ওপরেও অনেক প্রভাব বিস্তার করে।

রোজা রাখার উপকারিতা কি কি?

ক্যামব্রিজের এডেনব্রুকস হাসপাতালের “অ্যানেসথেসিয়া এন্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিনের’ কনসালট্যান্ট  ড: মাহরুফ জানিয়েছেন, এক মাস রোজা রাখার ফলে শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গগুলির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং তার সাথেই স্মৃতির উন্নতি ঘটে। তবে তিনি সাবধান করে দিয়েছেন রোজা ভাঙার পর শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বেশী পরিমাণ আমিষ কখনো খাওয়া ঠিক নয়।

রোজার শারীরিক উপকারিতা

যখন শরীরের পুষ্টির দরকার তখন শরীরের মাংসপেশি গুলোকে ব্যাবহার করে শরীর। যার ফলে শরীরের কোলেস্টেরল কমতে থাকে। আবার অন্য দিকে রোজা ভাঙার পর ভারসাম্য যুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার ফলে শরীরে দুর্বলতার সৃষ্টিও হয় না। এক মাস রোজা দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনে। মাসব্যাপী খাবারের সংযম বছরের বাকি মাসগুলোতে শরীরকে অধিক কর্মক্ষম করে। বিশেষ করে পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। লিভার শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

   

রোজার উপকারিতা

তিনি আরও বলেছেন যে সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে আমরা ক্যালরিযুক্ত খাবার খুব বেশী পরিমাণে খাওয়ায় শরীরের অন্যান্য কাজগুলি ঠিকভাবে হয়না। রোজার সময় উপোশ করার ফলে শরীর পাচন ছাড়াও অন্যান্য কাজে মন দেয়, ফলে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ে। শরীরের ক্ষত সারিয়ে তোলার ক্ষমতাকেও বৃদ্ধি করে। সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেও উপকার করে রোজা।

রোজা রাখলে কি কি উপকার হয়

অবশ্য তিনি এই কথাও বলেন যে টানা এক মাস রোজা রাখা ভালো নাও হতে পারে। কারণ এতে ওজন কমার থেকে বেশী শরীর দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।  তিনি বলেছেন যে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর শরীরের চর্বি শক্তিতে পরিণত হওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন তা শরীরের বিভিন্ন মাংসপেশির ওপর প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে।

রোজা রাখার ৩ দিন পর শরীরে যা যা পরিবর্তন হয়

আমাদের খাওয়া কোনো খাবার পাকস্থলীতে পৌঁছে তার হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আট ঘণ্টা সময় নেয়। সেই কারণেই আট ঘণ্টার আগে শরীরে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়না। খাদ্য হজম হওয়ার পর যকৃৎ বা শরীরের বিভিন্ন মাংপেশি গ্লুকোজে শক্তি সঞ্চয়ের প্রকিয়া শুরু করে। তারপর যখন ধীরে ধীরে কাজের সাথে সঞ্চিত শক্তি বা চর্বি কমতে শুরু করে।

এই সময় মূলত শরীরে যে পরিবর্তন গুলি ঘটে সেগুলি হল :-

১. শরীরের কোলেস্টেরল ও ওজন দুইই কমায় ডায়বেটিস এর সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

২.  এই সময়টাতেই মানুষের সবথেকে বেশি ক্ষিদে পায়, কারন তখনও শরীর এই প্রক্রিয়াতে অভ্যস্ত নয়।

৩. রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ায় দুর্বলতা ও ঝিমুনি আসে।

৪.  কিছু জনের ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা, নসিয়া ( বমি বমি ভাব), মাথা ঘোরা ইত্যাদি হতে পারে।

রোজা রাখার ৩ দিন থেকে ৭ দিন পর শরীরে যা যা পরিবর্তন হয়

১. সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কিছু পান না করায় শরীরে জলের মাত্রা কমে যায়। সাধারণত তিন থেকে চার লিটার জল প্রতিদিন মানুষের শরীরের প্রয়োজন। সেই কারণে রোজা ভাঙার পর তৈরি হওয়া ঘাটতি অবশ্যই পূরণ করতে হয়।

২. এই সময় আপনার শরীরের চর্বি গলে রক্ত শর্করাতে পরিণত হতে শুরু করে।

৩. শুধু জল নয় বরং রোজা ভাঙার পর একটি ভারসাম্য পূর্ণ আহার গ্রহণ করা প্রয়োজন নাহলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে।

রোজা রাখার ৮ দিন থেকে ১৫ দিন পর শরীরে যা যা পরিবর্তন হয়

১. আপনার বিগত দিনের অভ্যাসের সাথে আপনার শরীর অভ্যস্ত হয়ে পড়া শুরু করায় এই সময় আপনার মেজাজ বেশ ফুরফুরে থাকবে।

রোজা রাখার ১৬ দিন থেকে ৩০ দিন পর শরীরে যা যা পরিবর্তন হয়

১. এই সময় শরীর রোজার সাথে সম্পূর্ণ ভাবে মানিয়ে নেয়।

২. কিডনি বা লিভারের মতন শরীরের অন্যান্য যন্ত্র গুলোর কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটতে থাকবে।তাদের কর্য প্রণালীর পরিবর্তন ঘটবে।

৩. শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যেতে থাকবে।

রোজা রাখার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা

অতিরিক্ত খাবার গ্রহনের ফলে আমাদের দেহে প্রচুর চর্বি জমে যায়, ফলে শরীর অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়, যা স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ব্যাহত করে। বাড়তি চর্বি চামড়ার নিচে, শিরা উপশিরা এমনকি হৃৎপিন্ডে জমা হতে পারে। ফলে রক্তনালীতে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল করতে পারে না। কিন্তু রোজা রাখলে শরীরে জমে থাকা এসব চর্বি শরীরের কাজে ব্যবহৃত হয় ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।

রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা

রোজা রাখার ফলে রক্তে ক্ষতিকর ফ্যাট এর মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুকি অনেক কমে যায়। যেসমস্ত ডায়াবেটিস রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য রজা রাখা খুবই জরুরী। সারা বছর অতিরিক্ত খাবার, অখাদ্য, ভেজাল খাবার ইত্যাদি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে জৈব বিষ জমা হয় এক মাস সঠিক ভাবে রোজা পালন করা হলে এসব বিষ শরীর থেকে দূর হয়ে যায়।