SIM বিক্রেতা থেকে কোটিপতি হওয়ার গল্প ,যা আপনাকে নতুন কিছু করে দেখানোর সাহস যোগাবে

জীবনে আমরা খুব কম জনই আছি যারা বড় কিছু স্বপ্ন দেখি। আমাদের স্বপ্ন খেলাধুলা, পড়াশোনায় ভালো হওয়া, ভালো পড়ে চাকরি পাওয়া, ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। তারপর সুন্দরী মেয়েকে দেখে বিয়ে করা ও সুখে সংসার করা এতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায় অধিকাংশই আমরা। আসলে আমাদের পাওয়ার ইচ্ছাটা বিশাল কিছু হতে পারে না, বা আমরা তাকে হতে দিই না। কিন্তু এমন কিছু মানুষ আমাদের চারপাশে পাওয়া যায়, যারা তাদের স্বপ্নের জন্য পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন ও লেখাপড়াও ছাড়তে পিছ পা হয় না। তাদের কাছে একমাত্র লক্ষ্য হল কীভাবে তাদের কাঙ্খিত  স্বপ্নে পৌঁছে যাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সন্তান হয়েও তারা ঝুঁকি নিতে সামনে এগিয়ে যায়। যেন কিছু করেই হোক নিজেকে পৌঁছাতে হবে সেই উচ্চতায় যে উচ্চতায় আমরা অনেকেই পৌঁছাতে চেষ্টা করি না। সেইরকমই এক স্বপ্ন দেখা ছেলের নাম রীতেশ আগরওয়াল।

from-sim-card-seller-to-multi-millionaire-ritesh-agarwal-is-a-shining-example-of-what-it-means-to-follow-your-dreams
OYO founder Ritesh Agarwal. Photo credit: OYO

উড়িষ্যার কটক  শহরের নিকট বিসাম উপনগরের বাসিন্দা। ছোটোবেলা থেকেই যেন সবার থেকে আলাদা। সবকিছু বিষয়েই তার জানার কৌতূহল ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই তার কাছে প্রতিটি নতুন বিষয় আগ্রহ সৃষ্টি করত। ছোট বেলা থেকেই কম্পিউটার নিয়ে তার অনেকটা সময় কাটতো।এমনকি তার ৮ বছর বয়স থেকেই  সে কোডিং শিখে নিয়েছিল। আর শুধু এতেই থেমে থাকে নি। স্কুলে যা কোডিং শেখানো হত, তার থেকে বেশি ও নতুন কিছু শেখার জন্য সে গুগল থেকেও সাহায্য নিয়ে কঠিন কঠিন কোডিং শিখত।যেকোনো নতুন কিছু করতেই ছোটো বেলা থেকে তার আগ্রহ ছিল। এমনকি ছোটো বেলায় সে মোবাইলের সিমও বেচেছে। যদিও তা কিছু দিনের জন্যই। রীতেশ টেন পাস করার পর কোডিং নিয়েই তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে আর তাই কোডিং এ উচ্চ শিক্ষার জন্য  তার পরিবার তাকে রাজস্থানের কোটায়  পাঠায়। কিন্তু জীবনের লক্ষ্য যে কিভাবে বদলে যায় ,তা রীতেশ কখনোই জানতো না। কোডিংয়ের পাশাপাশি রীতেশের নতুন জায়গার দেখার সখ ছিল ছোটো থেকেই। আর তাই ছুটির দিনগুলোতে সে উত্তর ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে বেরিয়ে পড়ত তার কাছে যা কিছু টাকা থাকত তা দিয়েই।তারপর সে পড়াশোনার জন্য দিল্লি চলে আসে।এখানে এসে সে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফিন্যান্স এ ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের কার্যক্রমে ভর্তি হয়।

from-sim-card-seller-to-multi-millionaire-ritesh-agarwal-is-a-shining-example-of-what-it-means-to-follow-your-dreams

কিন্তু ভর্তি হওয়ার তিন দিন পরেই সে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে, নিজের বুদ্ধিতে ব্যবসা করার জন্য। তারপর থেকে সে আর ফিরে আসে নি দিল্লিতে।”Oravel Stays” নামেই প্রথম একটা ব্যবসা খোলে সে, কিন্তু তবুও সে বিভিন্ন হোটেল বা রেস্টুরেন্টে থাকতে শুরু করে পকেটের টাকা খরচ করে। এই ভাবেই তার জমানো টাকা শেষ হতে থাকে। তারপর সে অনেক হোটেলের কাছে তাকে যেন তাদের হোটেলে থাকতে দেওয়া হয় বিনা পয়সায় সেইজন্য লেখে।

কিন্তু অনেক কম হোটেলই তাকে বিনামূল্যে থাকতে দেয়। তাই তার কোম্পানি যা মূলত বিভিন্ন থাকার হোটেলকে প্রমোট করতো তা প্রথম দিকে সমস্যার সম্মুখীন হয়। এইভাবে তার পকেটের সব টাকা শেষ হয়ে যায়।তার প্যাকেটে মাত্র ২৩ টাকার মতো পড়ে ছিল।তার ফোনের কানেকশন কেটে দেওয়া হয়েছিল ফোনে টাকা না থাকার জন্য। তার মতে ,”ওটা ছিল আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং এই খারাপ সময়টা আমাকে অনেক অনেক কিছু শিখিয়েছে।

from-sim-card-seller-to-multi-millionaire-ritesh-agarwal-is-a-shining-example-of-what-it-means-to-follow-your-dreams

আরো পড়ুন : শুধু চা বেচেই লাখপতি! মাসে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার চা বিক্রি করেন ইনি

আমার পরিবার উচ্চ পরিবার। আমি যদি আমার এই খারাপ সময়ে আমার পরিবারকে সাহায্যের জন্য বলতাম,তাহলে তারা আমাকে অবশ্যই সাহায্য করত। কিন্তু আমাকে তাদের কাছে চলে যেতে হতো। যা আমি কখনোই চাই নি। “এই কিছুদিন বিভিন্ন হোটেলে থাকার সুবাদে তার  মনে একটা নতুন ব্যবসার কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল, আর তা হল হোটেলে থাকার আগেই বিভিন্ন হোটেল সম্পর্কে  থাকার পূর্ব অনুমান গ্রাহকদের সামনে তুলে ধরা ।

from-sim-card-seller-to-multi-millionaire-ritesh-agarwal-is-a-shining-example-of-what-it-means-to-follow-your-dreams

মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তার মাথায় এই নতুন ব্যবসার ফন্দি তাকে করে তোলে সবার থেকেই আলাদা।তার এই  একক চিন্তা ও পিটার থেইলের ১০০০০০ ডলার স্কলারশিপ তাকে বানাতে সাহায্য করেছিল” OYO ROOMS ‘নামে নতুন এক ব্যবসা।যার অর্থই হল On Your Own, অর্থাৎ নিজের  মতো করে।এক অব্যবহৃত হোটেল যেখানে মানুষ খুব একটা থাকতো না, আর যেখানে সে তিন মাসের মতো কাটিয়েছিল, সেই হোটেলকেই  সে বেছে নেয় তার ব্যবসার প্রথম হোটেল হিসাবে।যেহেতু এই হোটেলের মালিক তার হোটেল থেকে খুব একটা লাভ পাচ্ছিল না, তাই তা রীতেশকে দিতে অনিচ্ছুক হয় নি।

আরো পড়ুন : সবসময় প্রেরণা জোগায় এমন ১০ সফল ব্যক্তির জীবনী

Inside the OYO office. Photo credit: OYO
Inside the OYO office. Photo credit: OYO

রীতেশের উপস্থিত বুদ্ধি ও বিভিন্ন নতুন নতুন ব্যবসায়িক চিন্তা  এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার  এই অলাভজনক হোটেলকে কিছুদিনের মধ্যে লাভজনক হোটেলে পরিণত করে। সে বিভিন্ন হোটেলের বিভিন্ন কক্ষের বাস্তবিক ছবি  ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা শুরু করে, এর ফলে গ্রাহক হোটেল ভাড়া নেওয়ার আগেই জেনে নিতে পারত হোটেলের ঘরের অবস্থা, তার হোটেলের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা।আর তাছাড়া  ট্যাবলেট ,বা কম্পিউটারের মাধ্যমেও হোটেল ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। একটা হোটেলকে নিয়ে শুরু হওয়া তার এই ব্যবসা আজ একশ হোটেলের থেকেও বেশি হোটেলকে  তার কোম্পানির মাথার তলায় নিয়ে এসেছে।

আরো পড়ুন : বিহার থেকে ধুপ বিক্রি করে আজ লাতিন আমেরিকায় সুপারস্টার

এমনকি ব্রাজিলের মতো দেশও তার এই অভিনব ভাবনাকে নিজেদের মতো করে রুপান্তর করে  ব্যবহার করছে নিজেদের দেশে।আজ তার কোম্পানি এক  বহু লক্ষ ডলার মূল্যের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।তাই স্কুল, কলেজে ভালো ছাত্র হওয়ার থেকেও জীবনের স্বপ্ন যারা সত্যি করে তুলতে পারে তারাই পাল্টে দিতে পারে জীবনের সাফল্যের পরিভাষা ।তারাই তৈরি করে ইতিহাস।তারাই জোগায় নতুন কিছু করার সাহস।