‘মোদের গরব মোদের আশা/ আ মরি বাংলা ভাষা।’ কবি লিখেছেন। আমরাও আওড়াই। অথচ ভাষা হিসাবে ‘বাংলা’-র কোনও সম্মান নেই আমাদের কাছে। বাঙালিই একমাত্র জাত যারা নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে লজ্জা পায়। এই ব্যাপারে আমরা ‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’ বলতেই ভালোবাসি।
অথচ ভাষা হিসাবে বাংলায় কমতি নেই একটুও। ফ্রেঞ্চ ভাষার পর বাংলা ভাষা বিশ্বের দ্বিতীয় মিষ্টি ভাষা। প্রায় ২১০ লক্ষ মানুষ বাংলায় কথা বলেন। পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম কথ্য ভাষা হল বাংলা। এখানে আমরা বেছে নিয়েছি বাংলা ভাষা সম্পর্কে কয়েকটি অত্যাশ্চর্য তথ্য। যার কারণে বাঙালি হিসাবে আমরা গর্ববোধ করতেই পারি।

১) ভাষা হিসাবে বাংলাকে সরকারি স্বীকৃতি
বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ভারতের ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা একটি। ত্রিপুরা। আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়েছে বাংলা। আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জেও বাংলা ভাষার চল আছে। এছাড়াও আফ্রিকার একটি ছোট্ট দেশ ‘সিয়েরা লিওন’ বাংলাকে সাম্মানিক সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে।

২) বাংলা ব্যকরণ
একমাত্র ভাষা বাংলা যার ব্যকরণে লিঙ্গভেদ নেই। তবে এর ক্রিয়াপদের ব্যবহার খুবই শক্ত। একটু ভুল হলেই বাক্যের অর্থ পালটে গিয়ে বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটে যেতে পারে।

৩) বাংলাতেই আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
বাংলায় কথা বলার অধিকারে, বাংলা ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে বাংলায় শুরু হয় আন্দোলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার দাবিতে হওয়া মিছিলের ওপর গুলি চালায় পুলিস। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও আসামে। প্রাণ হারান ১৭ যুবক। এই ঘটনাকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯৭ সালে ২১ ফ্রেবুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো।

৪) ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাংলায় লেখা
ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন’ রচনা করেছিলেন বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ যিনি একা হাতে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে দিয়েছেন নিজস্ব গতি। গীতাঞ্জলী লিখে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার।
বাংলায় এমন অনেক শব্দ আছে বাক্যের গঠন অনুযায়ী যার অর্থ বদলে যায়। যেমন ‘তার’ শব্দ। জড় বস্তু বোঝানো ছাড়াও প্রানী বোঝাতেও এই শব্দের ব্যবহার আছে। অনেক সময় মানুষের কাছে যা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। বাংলা ভাষা জানা না থাকলে এই শব্দের ব্যবহার বোঝা সত্যি মুশকিল।

৬) বাংলা থেকে সৃষ্টি হয়েছে অনেক ইংরেজি শব্দ
চলার পথে ভাষারা একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে যায়। তৈরি হয় নতুন অক্ষর, শব্দ। কিন্তু খোদ শব্দের উচ্চারন ধার করে শব্দ তৈরি হওয়াটা অবাক ব্যাপার। বাংলার ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। ইংরেজি অনেক শব্দ সরাসরি এসেছে বাংলা থেকে। যেমন ভ্রাতা থেকে ব্রাদার।
৭) ভিন্ন শিকড় থেকে উতপত্তি হয়েছে বিভিন্ন বাংলা শব্দের
বাংলায় প্রায় লাখ খানেক ভিন্ন শব্দ আছে। যার মধ্যে পঞ্চাশ হাজাড় বাংলার নিজস্ব। ২১,১০০ শব্দ এসেছে সংস্কৃত থেকে। কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপের সংস্পর্ষে থাকায় বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সান্নিধ্যে এসে তাদের অনেক শব্দকে বাংলা নিজের করে নিয়েছে। মুঘল ও ইংরেজদের কাছাকাছি আশায় তুর্কি, পারসি, ফারসি ভাষাকেও আপন করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে বাংলা।
এরপরেও বাংলাকে ভালো না বেসে পারা যায়!
আমাদের পোস্ট নিয়মিত WhatsApp এ পেতে এখানে ক্লিক করুন