নিজে না খেয়ে ক্ষুধার্ত, বিকলাঙ্গ, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের খাওয়ান ইনি

সারাদিনে রাস্তাঘাটে, বাসস্ট্যান্ডে বা রেলস্টেশনে রোজ কত শত ভিখারিকে, ক্ষুধার্তকে আমরা দেখি। মুখের সামনে হাত ফেলে তারা আমাদের কাছে টাকার বা পয়সার ভিক্ষে করে। কেউ আবার খাবার খেতে চায়। আর আমরা তাদের মুখের উপর মুখ ঘুরিয়ে নি, বা দু টাকা, এক টাকা দিয়ে তাদের বিদেয় করে দি। খুব কম মানুষই আছি যারা তাদের মুখে খাবার তুলে দি। পথ চলতে সারা দিনে,রাতে এইসব ক্ষুধার্ত মানুষকে নিয়ে আমরা থাকি ভাবলেশহীন। তারা কি খাচ্ছে? নাকি আদৌ খেতে পাচ্ছে না, তা যেন আমাদের ভাবার বিষয় নয়। কিন্তু আমার আপনার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা  স্বভাবের মানুষও এই পৃথিবীতে আছে।

আজাহার মাকসুশীর স্বভাব আমাদের ঠিক বিপরীত। তার একটাই চিন্তা কেউ যেন খালি পেটে না থাকে। কোনো মানুষকে যেন জল খেয়ে রাতে বা দিনে ঘুমাতে না হয়। আজহার হায়দারাবাদের বাসিন্দা। তার সেখানে ঘর সাজানোর জন্য প্লাস্টার অফ প্যারিসের একটা দোকান আছে। আর তার দোকান থেকে খুব বেশি যে আয় হয় তা কিন্তু নয়। তবুও আজাহার অকাতরে ক্ষুধার্ত, ভবঘুরে, বিকলাঙ্গ, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট ভরিয়ে চলেছে। সে চায় না পৃথিবীর কোনো মানুষই যেন ক্ষুধার্ত থেকে যায়। তার কথায়,”আমার খুব কম বয়সে আমি বাবাকে হারিয়েছিলাম, তারপর থেকে মা আমাদের অনেক কষ্টে মানুষ করেছে।খালি পেটে থাকার যে কি জ্বালা, তা আমি ভালোই বুঝতে পারি। তাই আমার মনে হয় আমরা যদি সবাই অল্প কিছু দিয়ে এইসব মানুষকে তাদের দুবেলা খাবার দিতে পারি তাহলে পৃথিবী  অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।”

আরো পড়ুন : শুধু চা বেচেই লাখপতি! মাসে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার চা বিক্রি করেন ইনি

Source

আরো পড়ুন : ১৫০ টাকার মজুরিতে খেটে, আজ WBCS A গ্রেড অফিসার

আর তার জন্য সে শুরু করেছে এক অভিনব কর্মসূচী, তা হল “দো রোটি” অভিযান। এই অভিযানে আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে না। আপনি স্কুল, কলেজ ,বা আপনার অফিসে যাওয়ার সময় যখন আপনার টিফিন নিয়ে যান তাতে রাখুন আপনার প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি দুটো রুটি।এটা যে শুধু রুটি রাখতে হবে তা নয় কিন্তু। রুটি এখানে শুধু প্রতীকি মাত্র। আপনি যা কিছু খান তা একটু বেশি রাখুন।আর পথে যদি কোনো ক্ষুধার্ত মানুষকে পান তাহলে তাকে দান করুন আপনার ওই বাড়তি অংশটি।আর এইভাবেই ওই ক্ষুধার্ত মানুষটি খাবার পাবে আর আপনি পাবেন মানসিক শান্তি।তার সঙ্গে বাড়তি জুটবে ওই খেতে না পাওয়া মানুষের আশীর্বাদ।আর তাছাড়া আপনার বাড়ির তৈরি খাবার খাইয়ে আপনার মনে থাকবে অনেক শান্তি।”

আজহার  আরও বলেন ,”আমি যখন একবার কাছের রেলস্টেশনে যাচ্ছিলাম তখন তখন আমাদের অঞ্চলের এক শারীরিক  বিকলাঙ্গ মেয়ে লক্ষীকে স্টেশনের ধারে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখেছিলাম।সে কিন্তু টাকা পয়সার জন্য কাঁদেনি।সে খাবারের জন্য কাঁদছিল।আর এই ঘটনায় আমার চোখ খুলে দিয়েছিল।আমি মনে মনে মনস্থির করে নিয়েছিলাম, এইসব মানুষকে আমার যতটা সম্ভব আমি সাহায্য করব তাদের পেটের খিদে মেটাতে।”


আরো পড়ুন : জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ ও জোড়া আঙুল, পান গুমটি দোকানদারের ছেলে আজ IIT-তে সফল

আজহারের এই “দো রোটি” কর্মসূচি আজ হায়দারাবাদ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।অনেকেই তার এই অভিনব চিন্তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে।আজাহার তার এই কর্মসূচিকে আরো বাড়াতে চাই, তাই সে তার বাড়ির সামনে চঞ্চলগুরা ফ্লাইওভারের নীচে একটি নিদির্ষ্ট জায়গা ঠিক করেছে।আর সেখানে সে ও আরও যারা এই মহান কাজে সামনে আসতে ইচ্ছুক তারা সবাইমিলে রান্না করে অভুক্ত মানুষদের খাবার খাওয়ায়।আর এই পুরো খাবার বিনামূল্যেই দেওয়া হয় অভুক্তদের।


আরো পড়ুন : সবজি বেচে হাসপাতাল গড়েছেন ইনি; নাম রেখেছেন ‘হিউম্যানিটি হসপিটাল’

আপনারা যদি আজহারের মতো এই সেবামূলক কাজে আগ্রহী হন, তাহলে দেরি না করে আজই শুরু করতে পারেন।কে জানে আপনার দেওয়া খাবারে কতো অভুক্তের পেট ভরবে।

আমাদের প্রতিটি পোস্ট WhatsApp-এ পেতে ⇒ এখানে ক্লিক করুন