অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়ার কারণে শেষ হয়ে গেল কেরিয়ার, বলিউডের ষড়যন্ত্রের শিকার দিয়া মির্জা

Dia Mirza Wiki Biography Boyfriend Husband Family & Facts

২০০১ সাল। বলিউডে (Bollywood) তখন সদ্য এক অপরুপা সুন্দরীর প্রবেশ ঘটেছে। তিনি দিয়া মির্জা (Diya Mirza)। নামী মডেল থেকে তখন তার আরেক পরিচয় তিনি ‘মিস এশিয়া প্যাসিফিক’ (Miss India Pacific)। কাজেই বলিউডের রাস্তাটা তখন তার জন্য ছিল অনেকটাই চওড়া। বলিউডে তার ডেবিউ হলো ‘রেহেনা হে তেরে দিল মে’ ছবি দিয়ে। আর মাধবনের সঙ্গে বলিউডের নবাগতা সুন্দরীর অম্লমধুর কেমিস্ট্রি তখন দর্শকের মুখে মুখে ফিরছে।

সালটা ১৯৮১। হায়দ্রাবাদের দম্পতি ফ্র্যাঙ্ক হেন্ড্রিক আর দীপার ঘরে জন্ম নেয় দিয়া। বাবা ছিলেন জার্মান এবং মা বাঙালি। তবে মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সেই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। আহমেদ মির্জাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন দীপা। দিয়ার নামের পাশে থেকে এভাবেই বাবার পদবী সরে গিয়ে জুড়ে যায় মির্জা পদবী। ছোট থেকেই তিনি স্বাধীনচেতা। তাই কলেজে পড়ার সময় থেকেই একাধারে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে ৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মডেলিং চালিয়ে যেতেন দিয়া। অভিনয়ের সুযোগও খুঁজছিলেন হন্যে হয়ে।

যদিও তার মা অবশ্য এসব পছন্দ করতেন না। তবে বাবা আহমেদ মির্জার সমর্থন পেয়ে তিনি তার লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছেন। যে বছর মিস ওয়ার্ল্ড হলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, মিস ইউনিভার্স হলেন লারা দত্ত, সেই ২০০০ সালেই দিয়ার মাথায় উঠলো ‘মিস এশিয়া প্যাসিফিক’ এর মুকুট। এরপর আর তাকে বলিউডের দরজায় ঘুরতে হয়নি। ছবি প্রস্তাব নিয়ে বলিউড নিজে এসেছে তার দরজায়। প্রথম ছবি আর মাধবনের বিপরীতে।

সারা ভারত তখনই চিনে নিয়েছিল নবাগতা সুন্দরীকে। এরপর ‘দিওয়ানাপান’, ‘তুমকো না ভুল পায়েঙ্গে’, ‘দম’ – ২০১৪ সাল পর্যন্ত এক টানা ৪২টি ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু সফল নায়িকা হওয়া হয়ে উঠলো না তার। তার সমকালীন সময়ে বলিউডের তিন খান আমির, শাহরুখ এবং সালমানদের সঙ্গে ছবি করার সুযোগকেই মাইলস্টোন হিসেবে ধরা হতো। সে সুযোগও তিনি পাননি।

বলিউডে সেভাবে জায়গা করতে না পারার কারণ হিসেবে তিনি নিজের রূপকেই দায়ী করেছেন। যে সময়ে বলিউডে শ্যাম বর্ণ হলে কাজ মিলতো না, দিয়া সেই সময় অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ার কারণে অস্বস্তিতে ভুগেছেন। তার দাবি, “আমার রূপ অনেক সময়ই আমার পেশায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি চাকরি হারিয়েছি এবং একটি চরিত্রে আমাকে বাছাই করা হয়নি। কারণ আমি দেখতে সুন্দর। এটা একটা অদ্ভুত ধরনের অসুবিধা।”

দিয়ার দীর্ঘ কেরিয়ার হাতড়ালে দেখা যাবে কেবলমাত্র ওই একটি ছবি নিয়েই তাকে মনে রেখেছে বলিউড। তার ভাগ্যে সফল ছবির তালিকা বলতে গেলে নেই। দিয়ার অভিনয় দর্শকের নজর কাড়তে পারেনি। তাই ২০১৪ সালে নতুন কিছু করার উদ্দেশ্যে প্রাক্তন স্বামী সাহিল সঙ্ঘের সঙ্গে তিনি নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘বর্ন ফ্রি এন্টারটেইনমেন্ট’ খুলে ফেলেন। দিয়ার প্রথম স্বামী সাহিল ছিলেন উদ্যোগপতি। ২০১৪ তে তাদের বিয়ে হয়। ২০১৯ এই ভেঙে যায় সেই সম্পর্ক। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর খুলে ফেলেন নতুন প্রযোজনা সংস্থা ‘ওয়ান ইন্ডিয়া স্টোরিজ’।

২০২১এ বৈভব রেখিকে বিয়ে করেন দিয়া। সদ্য মা হয়েছেন তিনি। একরত্তি ছেলের নাম রেখেছেন অভ্যান আজাদ। এই আজাদ কথাটি লেখা রয়েছে অভিনেত্রীর হাতের উল্কিতেও। বরাবর ধর্মীয়, সামাজিক এবং অন্যান্য যেকোনও ধরনের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ‘আজাদ’ মনোভাব রেখেছেন তিনি। এমনকি তার পরিচয় পত্রে ধর্মের জায়গাটিও রয়েছে ফাঁকা। কারণ তিনি কোনও বিশেষ ধর্মে বিশ্বাস করেন না।