কখন কোথায় কত কিমি বেগে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, দেখুন তলিকা

একে করোনা নিয়ে প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের স্বস্তি নেই, তার উপর আবার সেই বিপদের দোসর হয়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস”ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবনে তান্ডব চালানোর জন্য ক্রমশ নিজের শক্তি বৃদ্ধি করছে। এই কঠিন সংকটময় মুহূর্তে জোড়া শত্রুর প্রতিকার কিভাবে করা যায়? এই ভাবনাতেই কার্যত রাজ্য প্রশাসনের রাতের ঘুম উড়েছে।

প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়কে প্রতিরোধ করার কোনও উপায় নেই। কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কেই প্রতিহত করার মতো কোনও শক্তি নেই মানুষের হাতে। তবে সতর্ক থেকে এবং ঘূর্ণিঝড়ের আপডেটের উপর নজর রেখে সেই অনুযায়ী আসন্ন বিপদ অনুমান করে আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে যাতে ক্ষয়-ক্ষতি কম হয়। ঘূর্ণিঝড়ের উপর নজর রয়েছে প্রশাসনের। আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা প্রতিমুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধির উপর নজর রেখে চলেছেন এবং তার আপডেট দিয়ে চলেছেন।

মৌসম বিভাগের সেই বিশেষজ্ঞরাই জানাচ্ছেন যে এই মুহূর্তে দিঘা থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস”। তবে স্বস্তি একটাই, এই ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ নিজের গতিপথ পরিবর্তন করছে। ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণ ও ধামরার উত্তর দিকেই ক্রমশ এগিয়ে চলেছে “ইয়াস”। বুধবারের পর পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে চলে যেতে পারে সেটি।

তবে তার আগে অবশ্য “ইয়াস” যে পশ্চিমবঙ্গের উপর নিজের দাপট দেখাবে না, তেমনটা কিন্তু নয়। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনাসহ রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলিতেও অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে, তবে তা তেমন গুরুতর হবে না বলেই আশ্বাস দিচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।

সোম-মঙ্গল-বুধ, সপ্তাহের এই প্রথমার্ধ জুড়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাব টের পাবেন বঙ্গবাসী। সোমবার অর্থাৎ ২৪শে মে সন্ধ্যার পর থেকে রাজ্যের উপকূলবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট সহ্য করেছেন। একই সঙ্গে আবার ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াও বয়ে গিয়েছে উপকূলের উপর দিয়ে।

মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৫শে মে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে ঘণ্টায় প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া এবং রাতের দিকে তা বেড়ে গিয়ে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে বয়েছে হওয়া । একই সঙ্গে রাতে ৮০-১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়ার দাপটও সইতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে।

এরপর ২৬ তারিখ অর্থাৎ বুধবারেই উপকূলের উপর আছড়ে পড়লো “ইয়াস’। একইসঙ্গে বেড়ে গেল ঝড়ের দাপট। ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়লে তখন তার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় প্রায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার। একইসঙ্গে দমকা হাওয়া বইবে ১৮৫ কিলোমিটার বেগে। বুধবারের জন্য তাই রাজ্যে লাল সতর্কবার্তা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। একই সঙ্গে প্রশাসনকেও সতর্ক করা হয়েছে।

বুধবার নদিয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে প্রবল ঝড়ের দাপটের সঙ্গে সঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তাও জারি করা হয়েছে। বুধবার রাজ্যের প্রধান প্রধান জেলাগুলিতে ঝড়ের গতিবেগ কেমন থাকবে?

এই রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবথেকে বেশি পড়তে চলেছে উপকূলবর্তী দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বুধবার ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আছড়ে পড়লে উপকূলের এই দুই জেলাতে ঝড়ের দাপট থাকবে সর্বোচ্চ। ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি প্রতি ঘন্টায় ১৪৫ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়াও বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।

পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪পরগনা, ঝাড়গ্রামে অবশ্য এই ঘূর্ণিঝড়ের মাঝারি প্রভাব পড়বে। ঘন্টায় ৭০-৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড় এবং সেই সঙ্গে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে এই জেলাগুলির জন্য।

আরও পড়ুন : ইনি ভারতের সাইক্লোন ম্যান, যায় ভবিষ্যৎবাণীতে বেঁচে যায় হাজার হাজার মানুষের জীবন

কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমানেও ঘূর্ণিঝড়ের মাঝারি প্রভাব পড়তে চলেছে। এই উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে প্রতি ঘন্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া এবং তার সঙ্গে সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।

আরও পড়ুন : আপনার বাড়ির ওপর কত কিমি বেগে বইবে ঘূর্ণিঝড়, রইলো তালিকা

বীরভূম, মুর্শিদাবাদেও কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কম বেশি প্রভাব পড়তে চলেছে। এই দুই জেলায় প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি ৭০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আপাতত প্রতি ঘন্টায় ১৭ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে চলতি মরসুমের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস”। ঘূর্ণিঝড়ের অপেক্ষায় আপাতত প্রবল উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন রাজ্যবাসী।