ঘূর্ণিঝড়ে আপনার এলাকায় কবে কোথায় কতটা বৃষ্টি হবে, রইলো সম্পূর্ণ তালিকা

করোনার দাপট সামাল দিয়ে উঠতে না উঠতেই পশ্চিমবঙ্গের দিকে এবার আরও এক ভয়ঙ্কর বিপদ এগিয়ে আসছে। গতবছর যেমন করোনার প্রথম ঢেউয়ের পাশাপাশি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় “আমফান” এর মোকাবিলা করতে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গবাসীকে, এই দফাতেও তেমনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” এর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৬শে মে অর্থাৎ বুধবারেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ ও ওড়িশার পারাদ্বীপের মধ্য দিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে চলেছে। রবিবার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপ রূপে ১৬ ডিগ্রি ১ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০ ডিগ্রি ২ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে।

আজ অর্থাৎ রবিবারে এই গভীর নিম্নচাপটি আন্দামানের পোর্ট প্লেয়ার থেকে ৫৬০ কিলোমিটার উত্তরে উত্তর-পশ্চিম, ওড়িশার বালেশ্বর থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে বলে স্পষ্ট করে জানিয়েছে মৌসম বিভাগ।

আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে জানা গেল, সোমবার সকালের মধ্যেই এই নিম্নচাপটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে। যার ফলে সোমবার সন্ধ্যে থেকেই পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যা উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাবে।

তবে এই ঝড়ের গতিবেগ রাত পর্যন্ত ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এরপর মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় আরও শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর সেই ঘূর্ণিঝড় শক্তি সঞ্চয় করে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে চলবে।

মঙ্গলবার থেকেই কার্যত পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হবে। সন্ধ্যার পর থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাত শুরু হবে। একইসঙ্গে ঘন্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার সকালের দিকে “ইয়াস” পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার স্থলভাগে পৌঁছাবে বলে আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে আগাম পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

হাওয়া অফিসের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে বুধবার সন্ধ্যায় অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের রূপ ধারণ করে “ইয়াস” ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করতে চলেছে। ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসবে, বৃষ্টি এবং ঝড়ের গতিবেগ তত বাড়বে। বুধবার সকাল থেকেই অবশ্য ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করবে। একইসঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতও শুরু হবে।

হাওয়া অফিসের তরফ থেকে জারি করা সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় যখন স্থলভাগে আছড়ে পড়বে তখন তার গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। “ইয়াস” এর কারণে দক্ষিণবঙ্গের কোন কোন জেলায় কেমন বৃষ্টিপাত হতে চলেছে, আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। জেনে নিন দক্ষিণবঙ্গের কোন জেলাগুলিতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সবথেকে বেশি পড়তে চলেছে।

আরও পড়ুন : পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কোথায় আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়, রইলো সম্পূর্ণ তালিকা

আলিপুরের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা যে তথ্য তুলে ধরেছেন তা থেকে জানা গেল, মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলি অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে চলেছে। একইসঙ্গে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়াও বয়ে যাবে। হাওড়াতেও হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় আবার ভারী বৃষ্টিও হতে পারে।

ঝড় এবং বৃষ্টির গতিবেগ বুধবার আরও বৃদ্ধি পাবে। ঝাড়গ্রাম, কলকাতা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান ও নদীয়াতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : ভারতের সাইক্লোন ম্যান, যিনি বশ করতে পারেন ঘূর্ণিঝড়কে, মিলে যায় প্রতিটি ভবিষ্যৎবাণী

এরপর বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব অনেকটাই কমে আসবে। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় নিজের শক্তি হারাবে। তবে ওইদিন উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে।