করোনা ভাইরাসকে কাবু করার একমাত্র অস্ত্র সচেতনতা। চিকিৎসকরা বারবার বলে আসছেন আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের কথা। অনেকেই এই কারন বশত গলা ব্যাথা বা হালকা জ্বর হলে নিজের থেকেই করোনা পরীক্ষা করে নিয়ে দেখে নিতে চাইছেন তারা আদৌ আক্রান্ত কি না। কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকেই কি করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব?
না, কোনরকম উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও অকারণ নিজে থেকে করোনা পরীক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই। করোনা আক্রান্ত না হলে করোনা টেস্ট করাতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়। কাজেই সুষ্ঠ ব্যাক্তির নিজের থেকে পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে মানুষকে চিন্তায় ফেলছে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সব উপসর্গ থাকা সত্বেও টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে পজিটিভ রিপোর্ট হলেও ব্যাক্তি করোনা আক্রান্ত নন।
টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ মানেই কি ব্যাক্তি আক্রান্ত?
টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হলেও ব্যাক্তি যে করোনা আক্রান্ত তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত ভাবে বলা যায়না। ফলস পজিটিভ বা ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট উভয় ক্ষেত্রেই মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে কোনো ব্যাক্তি সুস্থ থাকলেও তার উদ্বেগ বেড়ে যায়। বহুল পরিমাণে উপসর্গ হীন ও সুস্থ ব্যাক্তিদের টেস্টের ফলে সাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অযথা চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ কিন্তু ব্যাক্তির কোনো উপসর্গ নেই।
যেহেতু ইতিমধ্যেই দেশে গোষ্ঠী সংক্রমন শুরু হয়েছে, সুতরাং সেই কথা ভেবে যদি কেউ নিজে থেকেই পরীক্ষা করাতে চান তবে তার ভালো দিকও আছে। এক্ষেত্রে বোঝা যাবে যে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু টেস্ট করাতে গেলেও স্থানীয় চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন।
চিকিৎসকদের মতে পরীক্ষা কেন্দ্র বা গবেষণাগার গুলির মানের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ভুয়ো পজিটিভ বা নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আরটিপিসিআরের সময় ফলাফল বিহীন রিপোর্টও পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে ফের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে টেস্ট করা যেতে পারে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের সাহায্যে কি নিশ্চিত রিপোর্ট পাওয়া যায়?
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশীয় কিটের ৯২.৪ শতাংশ ক্ষেত্রে সেনসিটিভিটি আছে এবং ৯৭.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে স্পেসিফিসিটি আছে। গত মে মাসে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ একটি সেরোপ্রিভ্যালেন্স স্টাডিতে জানা গেছে আরটিপিসিআর এর ক্ষেত্রে সেনসিটিভ এবং স্পেসিফিক দুটি ক্ষেত্রেই সংক্রমণের মাত্রা ০.৭৩ শতাংশ। যেহেতু এই নতুন অসুখের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা পদ্ধতিটিও নতুন তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভুয়ো পজিটিভ রিপোর্ট আসছে।তবে অ্যান্টিবডি টেস্ট এখনও প্রাথমিক পর্যায় আছে। এই টেস্টে রক্তে আইজিজি পাওয়া গেলে বুঝতে হবে ইতিমধ্যেই শরীরে করোনা সংক্রমন ঘটে গেছে। এই পরীক্ষায় শরীরের অ্যান্টিবডি লেভেলও মাপা যায়।
আরও পড়ুন : শরীরে কোন কোন রোগ থাকলে করোনায় মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি
দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের ধারাভিতে এই টেস্টের মাধ্যমেই সংক্রমণের গতিবিধি দেখেছিল আইসিএমআর। এই টেস্টে রক্তে আইজিজি পাওয়া মানে সংক্রমন ঘটেছে বলেই রক্তে এটির উপস্থিতি আছে। এই আইজিজি বহিঃ শত্রুর বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।তবে সেই বহিঃ শত্রু করোনা ই কিনা তা বুঝতে আরটিপিসিআর টেস্ট করা প্রয়োজন।
সুস্থ ব্যাক্তির টেস্ট – প্রভাব স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়
উপসর্গ নেই এবং বাড়িও সংক্রমিত এলাকায় নয়, এরকম ব্যাক্তিদের টেস্ট হলে যাদের টেস্টের প্রয়োজন তাদের জন্য টেস্টের অভাব দেখা দিতে পারে। সর্দি কাশি সহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট করিয়ে নেওয়াই ভালো। টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হলে বাড়িতেই একান্তে থাকতে হবে। শ্বাসকষ্ট হলে ভর্তি হতে হবে হাসপাতালে। তবে বয়স্ক ব্যাক্তি বা এমন মানুষ যাদের কোনো ক্রনিক অসুখ আছে তাদের ক্ষেত্রে টেস্ট একান্ত প্রয়োজন। টেস্টের পাশাপাশি মাস্ক পড়া, বারবার হাত ধোয়ার মতন সামাজিক বিধি মানতে হবে।