চিরঞ্জিত চক্রবর্তী অভিনীত সেরা ১০টি সিনেমা, যা তাকে অবিস্মরণীয় করে রাখবে

একটা সময় বাংলা সিনেমার অন্যতম কান্ডারী হলেও এখন সিলভার স্ক্রিন থেকে ছুটি নিয়েছেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী (Chiranjit Chakraborty)। একেবারেই যে সিনেমা করেন না তা নয়। তবে খুব বেছে বেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও তেমন সক্রিয় নন তিনি। থাকতে পছন্দ করেন নিজের মতনই। তবে এখনও বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এভারগ্রীন তিনি,থাকবেন আগামী সময়েও।

বয়স ৬৫ পেরিয়ে গেলেও এখনো কমেনি তার জৌলুস। এখনও তার সংলাপ ঘোরে বাঙালিদের মুখে মুখে। কলকাতা দূরদর্শনের সংবাদ পাঠক থেকে বাংলা সিনেমার অন্যতম মুখ চিরঞ্জিত গতকাল ৬৫ বছরে পা দিলেন। অভিনেতার জন্মদিনে একবার ফিরে দেখা যাক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী অভিনীত সেরা ১০টি সিনেমা, কিছু অন্য ধাঁচের ছবি যা নিজের মধ্যেই এক একটা মাইলস্টোন তৈরি করেছে।

১. লক্ষণের শক্তিশেল

পরিচালক সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) তার পিতা সুকুমার রায়কে (Sukumar Ray) নিয়ে ‘সুকুমার রায়’ নামেই একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন ১৯৮৭ সালে। এই তথ্যচিত্রে সুকুমার রায়ের লেখা বিখ্যাত নাটক নাটক ‘লক্ষণের শক্তিশেল’ -এর প্রথম দিকের কিছু অংশের অভিনয় দেখানো হয়।

লক্ষণের শক্তিশেল, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী
লক্ষণের শক্তিশেল, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী

 

সেখানে লক্ষনের চরিত্রে তার অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন তিনি। প্রাথমিকভাবে ছবিটি নন্দনে প্রদর্শিত হলেও পরবর্তীকালে ১৯৮৮ সালে সাধারণ দর্শকদের জন্য দূরদর্শনে এই তথ্যচিত্র দেখানো হয়। জানা যায় যখন সিনেমা হলে ‘গণশত্রু’ ছবিটি মুক্তি পায় তখনও তার আগে এই অংশটি দেখানো হয়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ছোট চরিত্রেই তিনি অসামান্য অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দেন।

২. জীবন

হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের (Hrishikesh Mukherjee) ‘আনন্দ’ ছবির প্রেক্ষাপটে অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায় এই ‘জীবন’ ছবিটি পরিচালনা করেন। ছবিতে মহুয়া রায়চৌধুরী এবং তাপস পালের (Tapas Pal) সাথে চিরঞ্জিতের অভিনয় দাগ কেটে যায় দর্শকদের মনে। তবে সংরক্ষণের অভাবে এই অসামান্য সৃষ্টি আজ প্রায় হারিয়েই গেছে।

৩. ভয়

এই ছবিটি পরিচালনা করেন চিরঞ্জিত (Chiranjit Chakraborty) যেখানে অভিনয় দেখা যায় দেবশ্রী রায়, চিরঞ্জিৎ, সৌমিত্র ব্যানার্জী প্রমুখকে।এটিকে বিখ্যাত দেবশ্রী চিরঞ্জিত জুটির অন্যতম সেরা ছবি বলা যায়।এই ছবিতে শুধু নামেই নয় বরং গল্পেও ছিল ভয়।ছবিতে অসাধারণ ভাবে বলা হয়েছে গল্পটি যা দেখলে আজও দর্শকরা ভয় পাবেন।

৪.বাড়িওয়ালি (BARIWALI)

চিরঞ্জিতের (Chiranjit Chakraborty) চেনা ধাঁচের বাইরে এই ছবি বাংলা সিনেমার একটি মাইলস্টোন তৈরি করে দেয়। পরিচালকের নাম, ঋতুপর্ণ ঘোষ(Rituparno Ghosh)।একমাত্র ঋতুপর্ণ বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ভিন্ন ধাঁচের গাম্ভীর্য ও রোমান্টিসিজমের মেল বন্ধনে কতটা নিপুণ হতে পারবেন চিরঞ্জিত (Chiranjit Chakraborty)।

৫. অবৈধ (ABAIDHA)

এই ছবির পরিচালনা করেন গুল বাহার সিং। ছবিতে একজন সাধারণ চাপা স্বভাবের সরকারি চাকরিজীবীদের চরিত্র নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন চিরঞ্জিত।জীবনের বিভিন্ন পরস্পর বিরোধী নিয়ম এবং স্ত্রীর পরকীয়া, সব মিলিয়ে একজন হেরে যাওয়া মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন চিরঞ্জিত।এই ছবিতে অসামান্য অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার বিএফজেএ পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। সমালোচকদের মতে, এটিই চিরঞ্জিত অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।

৬. সমর্পিতা (SAMARPITA)

একজন সাধারণ কিন্তু রোমান্টিসিজমে ভরপুর মানুষের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলেন চিরঞ্জিত। মিষ্টি কিন্তু হৃদয়স্পর্শী ত্রিকোণ প্রেম নিয়েই এগোয় এই ছবির প্লট। পাহাড়ি অঞ্চলে পড়াতে আসা মাষ্টারমশাই এর প্রেমে যদি একই সাথে দুজন ছাত্রী পড়ে, তাহলে পরিণতি? প্রেমিক এবং শিক্ষক, দুই চরিত্রেই তিনি অনবদ্য।এই ছবির গান ‘এইদিন যেন প্রতিদিন’ এখনও বাংলার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। সুযোগ হলে দেখে নিতেই পারেন এই ছবিটি।

৭. ষড়রিপু

অয়ন চক্রবর্তী পরিচালিত এও ছবিতে গোয়েন্দার ভূমিকায় ধরা দিয়েছিলেন চিরঞ্জিত এবং নিপুণতার সাথে এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলেন তিনি।বন্যজিক ভাবে বিশেষ সফলতা না পেলেও অভিনয়ের দিক থেকে দেখতে গেলে, অসামান্য ছিলেন চিরঞ্জিত।

আরও পড়ুন : ঋষি কাপুর অভিনীত সেরা ১০ টি সিনেমা

৮. চতুষ্কোণ

‘বাড়িওয়ালি’ এর পরে আবারও অন্য ধারার ছবি। এবারও অভিনয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন চিরঞ্জিত।ছবিতে গৌতম ঘোষ, অপর্ণা সেন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে স্ক্রিন ভাগ করলেও সবার থেকে বেশী প্রশংসা কুড়িয়ে নেন তিনি।অপর্ণা সেনের সাথে তার জুটি মনে ধরেছে দর্শকদের, ভাবিয়েছে তাদের। এই ছবিতে তার অভিনয় নতুন করে দর্শকদের চিরঞ্জিতের অভিনয়ের প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে।

আরও পড়ুন : ইরফান খান অভিনীত সেরা ১৫টি সিনেমা

৯. গুহামানব

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে পারমিতা মুন্সীর পরিচালনায় আবারও চিরঞ্জিতের অসামান্য অভিনয়।একজন মানুষ কিভাবে সভ্য মানুষ থেকে আদিম সত্তায় ফিরে যেতে পারে, সমাজের খলোসকেই কি সভ্যতার মাপদন্ড বলা যায়? কি সংজ্ঞা সমাজবদ্ধ জীবনের? কতটাই বা সমাজবদ্ধ হতে পারে মানুষ? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে নিজেকে খুঁজে পাওয়া একজন মানুষ। আর এই চরিত্রেই তিনি প্রমাণ করে দিলেন অভিনেতা হিসেবে তার স্থানটা ঠিক কোথায়। যারা এখনও এই ছবি দেখেননি তারা দেখে ফেলতেই পারেন গুহামানব।

আরও পড়ুন : সুশান্ত সিং রাজপুত অভিনীত সেরা ৭টি সিনেমা

১০. 10th জুলাই

রাতুল গাঙ্গুলি পরিচালিত এই ছবিটি নির্বাচন সত্যিই একটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল চিরঞ্জিতের। ছবিতে একজন সমপ্রেমী মানুষের চরিত্রে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন চিরঞ্জিত। সমকামীতা, সামাজিক গণ্ডি বহির্ভূত একটি অদম্য চাহিদা কি গ্লানির কারন?নাকি দোষ সমাজের?এই ছবিতেও তার চরিত্রটি নিপুণ ভাবে তুলে ধরে দর্শকদের মন স্পর্শ করেছেন চিরঞ্জিত।

আরও পড়ুন : বলিউডের এই ৮টি সিনেমায় অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শুটিংয়ে নায়ক-নায়িকা সত্যিকারের ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন

আমরা এখানে শুধুমাত্র চিরঞ্জিতের অন্য ধারার ছবিগুলোর কথা বললেও কখনোই প্রতীক’, ‘মর্যাদা’, ‘সংসার সংগ্রাম’, ‘পাপী’ ইত্যাদি ছবিগুলোকে ভুলে যাবনা।তার হিট ছবি বেদের মেয়ে জোছনা প্রশংসা পেয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকেও।তার প্রতিটি ছবিই বারবার দর্শককে মনে করিয়েছে, তিনি একজন অভিনেতা, একজন জাত অভিনেতা।