কোভিড ১৯ এর সাথে শীতের কোনও সরাসরি সম্পর্ক এখনও পাওয়া যায়নি, তবে জানা গেছে করোনা ভাইরাসের অন্যান্য গোত্রগুলো তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে শক্তিবৃদ্ধি করে। এছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস,রাইনোভাইরাস, এবং আরএসভি ভাইরাসের গতি প্রকৃতিও অনেকটা একইরকম।
কিন্তু কভিড ১৯ এর ক্ষেত্রে এক এক দেশে চিত্রটা এক এক রকম, যেমন ভারতে শীতকাল শেষ হওয়ার পরে মার্চ মাসে এর প্রকোপ শুরু হয় এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে, অর্থাৎ গরমে এর প্রকোপ সবথেকে বেশী বাড়ে। ভারতের মতনই চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাসের প্রকোপ একবার কমে আসার পরে আবার বাড়তে শুরু করলেও ঠান্ডার সাথে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার বা কমার কোনও সম্পর্ক তারা এখনও পাননি।
আবার শীতপ্রধান দেশগুলোতেও গ্রীষ্মের সময়ও করোনাপ্রকোপ বন্ধ হয়নি।অনেক বিজ্ঞানীদের মতে, শুধু আবহাওয়া নয় বরং কোনও দেশের কতৃপক্ষের নীতি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, জনসচেতনতা ইত্যাদির ওপর ভাইরাসের প্রকোপ নির্ভর করে।অন্যদিকে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে দেশ ভেদে এর আচরণ পরিবর্তন হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে তাপমাত্রায় ভাইরাসটি সহজে সংক্রমিত হয়ে দ্রুত বিস্তার ঘটাতে পারে তারজন্য আদর্শ সময় শীতকাল। সেই কারণেই মনে করা হচ্ছে শীতকালে এই ভাইরাসের বিস্তার বেশী হতে পারে।এই সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় হাচি বা কাশি থেকে নির্গত ড্রপলেট (Droplets) বহুক্ষণ বাতাসে থাকতে পারে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশী থাকে।এছাড়াও শীতকালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দরজা জানলা বন্ধ থাকায় হওয়া চলাচল হয়না এবং এই সুযোগে ভাইরাস বেশী সংক্রমিত হতে পারে।
মার্কিন মুলুকের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ৪ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ভাইরাস সংক্রমনের বিশেষ অনুকূল।করোনাভাইরাস গোষ্ঠীর অন্যান্য ভাইরাস শীতকালে বেশী দ্রুত বিস্তার ঘটাতে সক্ষম। এর মূল কারণ, ভাইরাসের বাইরের দিকে অবস্থিত লিপিড মেমব্রেন। এই তৈলাক্ত আবরণ শীতকালে বেশী সময় পর্যন্ত অক্ষত থাকে।তবে সার্স-কোভ-২ অর্থাৎ কোভিড ১৯ ভাইরাস যে ঠান্ডা পড়লে বেশী সংক্রমিত হয়, সেই তথ্যের এখনও কোনও প্রমাণ মেলেনি।
শীতকালে সাধারণ ফ্লু বা সর্দি জ্বরের প্রবণতা বেশী থাকে। যেহেতু এই অসুখগুলোর সাথে করোনা সংক্রমনের উপসর্গ অনেকটা একই রকম তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন কারোর সর্দি, জ্বরের মতন লক্ষণ দেখা গেলেই করোনা ভাইরাসের মতন সতর্কতা অবলম্বন করতে।শীতকালে সাধারণ ফ্লু এর সাথে করোনাসংক্রমনকে পৃথক করাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।এর মূল কারণ হলো উভয় ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো অনেকটাই একরকম।
সার্স-কোভ-২ অর্থাৎ করোনাভাইরাস যদি অন্যান্য ফ্লু এর ভাইরাসের সাথে মিশে যেতে শুরু করে সেক্ষেত্রে আরেকটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বিশ্ববাসীকে। গবেষণায় দেখা গেছে করোনাগোষ্ঠীর ভাইরাস অন্যান্য ভাইরাসদেরও আক্রমনের সুযোগ দেয়।
কিন্তু এক্ষেত্রে একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কোনও ব্যাক্তির শরীরে যদি একটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় সেক্ষেত্রে তা অন্যান্য ভাইরাস আক্রমনের বিরুদ্ধেও ঢাল হয়ে কাজ করবে।তবে সাধারণত একই সাথে একাধিক ভাইরাসের আক্রমন ঘটেছে, এমন ঘটনা বিরল।