একসময় পেটের দায়ে কাজ করেছেন হোটেলে, প্রতিভার জোরে আজ বলিউড সেলিব্রিটি বোমান ইরানি

বলিউডে (Bollywood) তার আগমন ঘটেছিল বেশ খানিকটা দেরিতেই। তবে দেরিতে হলেও বোমান ইরানি (Boman Irani) আজ বলিউডের সুপারস্টার অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি তথাকথিত নায়ক নন। তবে ছবিতে নায়ক বাদেও একজন পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা কিভাবে নিজের অভিনয় গুণে দর্শকের মনে ছাপ ফেলে দিতে পারেন, বলিউডে তার নজির বোমান ইরানি। থ্রি ইডিয়েটসের ‘ভাইরাস’ আজ ভাইরাসের মতই অতি সংগোপনে ছেয়ে গিয়েছেন দর্শকের মনে।

মহারাষ্ট্রের এক পার্সী পরিবারে তার জন্ম। পড়াশুনা মুম্বাইয়ের সেন্ট মেরিজ স্কুলে। পলিটেকনিক কোর্স করার পর মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে যোগদান করেন বোমান ইরানি। জন্মের ৬ মাস আগে তার বাবা মাত্র ২৮ বছর বয়সে মারা যান। মুম্বাইয়ের গ্রান্ড রোডে অপ্সরা সিনেমার কাছে তাদের একটি বেকারি এবং নোনতা খাবারের দোকান ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর বোমানের মা সেই দোকানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বোমানও বহুদিন পর্যন্ত পারিবারিক ব্যবসা সামলেছেন। ছেলেবেলায় কথা বলার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা ছিল বোমানের। ডিসলেক্সিয়ার শিকার ছিলেন তিনি। যা তাকে বন্ধুদের থেকে আলাদা করে রাখত। কিছু মানসিক সমস্যার শিকারও ছিলেন তিনি। এই সময় উচ্চারণ শোধরাতে ছেলেকে সিনেমা দেখার প্রতি উৎসাহ দিতেন তার মা।

ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার টান ছিল। স্কুলের পর রোজ আলেকজান্ডার সিনেমা হলে সিনেমা দেখতেন তিনি। কলেজ জীবনে অভিনয়ও করেছেন। তবে একসময় সংসার চালাতে তাকে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে ওয়েটার এবং রুম সার্ভিসের কাজ করতে হত। পরে অবশ্য তিনি রুফটপ ফরাসি রেস্তোরাঁ রঁদেভুর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। হোটেলে কাজ করে তিনি বেশকিছু অর্থ জমিয়ে ফেলেন। তারপর সেই টাকা দিয়ে ফটোগ্রাফির শখপূরণ করেন। বকশিসের টাকা থেকে ক্যামেরা কিনে তিনি বিভিন্ন স্কুল স্পোর্টসের ছবি তুলতেন। এভাবে বেশ কিছুদিন কাজ করে তিনি যে টাকা পেয়েছিলেন সেই টাকা দিয়ে সপরিবারে উটি ঘুরতে যান। ফটোগ্রাফির শখ তার আজও রয়ে গিয়েছে।

তবে একসময় তিনি পারিবারিক ব্যবসাতে মনোনিবেশ করেন। সেই সূত্রেই তার জীবন সঙ্গিনীর সঙ্গে দেখা হয়। তার জীবন সঙ্গিনীর নাম জেনোবিয়া ইরানি। প্রথম দিনের আলাপের পরই জেনোবিয়া হয়ে উঠলেন তার নিত্য গ্রাহক। ক্রমে তাদের আলাপ গভীর হতে শুরু করে। ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক ছাপিয়ে তারা গেলেন ডেটিংয়ে। তখনই বোমান তাকে প্রপোজ করেন। প্রস্তাবে হ্যাঁ বলে দেন জেনোবিয়া। তারপর পার্সী রীতিনীতি মেনে তাদের বিয়ে হয়। দেখতে দেখতে ৩৫ বছর কেটে গিয়েছে। জেনোবিয়া বোমানের পাশে থেকে প্রতি মুহূর্তে তাকে সামনের পথে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। ফটোগ্রাফি হোক বা পারিবারিক ব্যবসা, এমনকি বোমানের অভিনয় জীবনেও জেনোবিয়া সহধর্মিনীর মত পাশে থেকেছেন।

অভিনয়ের সঙ্গে তার সংযোগ কলেজ জীবন থেকে। তিনি হংসরাজ সিন্ধিয়ার কাছে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। অ্যালেক পদমজির কাছে তিনি থিয়েটারের হাতে খড়ি নেন। অভিনয় জীবনে তার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয় ৪১ বছর বয়সে। তবে সিনেমাতে অভিনয় করার আগে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে কাজ করে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ২০০১ সালে ‘এভরিবডি সেজ আই এম ফাইন’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি বলিউডে পা রাখেন। তারপর ‘ডরনা মানা হ্যায়’, ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’, ‘লাগে রাহো মুন্না ভাই’ থেকে শুরু করে ‘থ্রি ইডিয়টস’ বলিউড নিজে থেকে বেছে নিয়েছে বোমান ইরানিকে।

মূলত খলনায়ক এবং কমেডি অভিনেতা হিসেবে বলিউডে তার কদর অত্যন্ত বেশি। ২০১৯ সালে তিনি তার প্রোডাকশন হাউজ ইরানি মুভিটোন প্রতিষ্ঠা করেন। তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে জেনোবিয়া হয়েছেন তার সঙ্গিনী। বর্তমানে সন্তান এবং স্ত্রীকে নিয়ে অভিনয়কে সঙ্গী করে দারুণ জীবন কাটাচ্ছেন বোমান ইরানি।