জাতীয় পুরস্কার পেয়েও নেপোটিজমে নষ্ট কেরিয়ার, পেটের দায়ে আজ এই কাজ করছেন অভিনেতা

বলিউডে (Bollywood) এসে অনেকের ভাগ্য ফিরে গিয়েছে। অনেকেই ভাবেন একবার কষ্ট করে কোনও মতে যদি বলিউডে পা রাখা যায় তাহলেই ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে যাবে। পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কিন্তু বাস্তব সত্যিটা এতটাও সহজ নয়। এই ইন্ডাস্ট্রিতে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতাও কদর পান না। তাদেরই একজন হলেন শফিক সাঈদ (Shafiq Syed)।

নেপোটিজমের রাজত্বে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও বলিউড থেকে হারিয়ে যান বহু শিল্পী। শফিক তাদের মধ্যেই একজন। একসময় তিনি অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুম্বাইতে এসেছিলেন। তখন তার বয়স ছিল খুবই কম। মীরা নায়ার পরিচালিত ‘সালাম বম্বে’ (Salaam Bombay) ছবিতে ১২ বছরের শিশুশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। আজ তার পরিস্থিতি জানলে অবাক হবেন।

শফিক ছিলেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। খুব সাধারণ এক বস্তিতে থাকতেন তিনি। তবে হিন্দি ছবিতে মুম্বাইয়ের জীবনযাত্রার রকমসকম তাকে আকর্ষণ করেছিল। বাস্তবে মুম্বাই শহরটা ঠিক কীরকম তা জানার জন্য তিনি কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে মুম্বাইতে চলে আসেন। এখানে আসার পর আচমকাই তার ভাগ্য ফিরে যায়। অভিনয়ের সুযোগ চলে আসে তার হাতে।

১৯৮৮ সালে পরিচালিত ‘সালাম বম্বে’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবিতে নানা পাটেকার, ইরফান খান, রঘুবীর যাদবদের পাশাপাশি নজর কেড়েছিলেন ছোট্ট শফিক। অতটুকু বয়সেই তার এমন অভিনয় প্রতিবাদে খেয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন দর্শকরা। মুম্বাইয়ের বস্তির একটি ১২ বছরের শিশু চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন শফিক।

শফিক এই ছবিতে অভিনয় করার জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। তখন তার কাছে সব কিছুই কেমন যেন স্বপ্নের মত ছিল। ৫২ দিন শুটিং করে তিনি ১৫০০০ টাকা উপার্জন করেছিলেন। বলিউডে কাজ করে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবার থেকে তিনি অভিনয় করবেন। কিন্তু এরপর তার কাছে আর কোনও কাজের প্রস্তাব আসত না।

১৯৯৪ সালের গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পতঙ্গ’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি বেঙ্গালুরুতে ফিরে যান এবং সেখানে গিয়ে কন্নড় ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এবারে আর ভাগ্য তার সঙ্গে ছিল না। তিনি ছবির সেটে অল্প বিস্তর কাজ করার সুযোগ পেতেন বটে তবে তা ছিল কেবল ক্যামেরার পেছনেই। কখনও লাইটম্যান, কখনও প্রযোজনার কাজে সহকর্মী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। বিভিন্ন কন্নড় ধারাবাহিককেও তিনি কাজ পেয়েছিলেন, তবে তা শুধু কেবল ক্যামেরার পেছনে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার জন্য ভাল বেতনের চাকরির সুযোগও তিনি পাননি। সংসার চালাতে তাই বাধ্য হয়ে বেঙ্গালুরু শহরেই অটোরিকশা চালাতে শুরু করেন তিনি। বেঙ্গালুরু থেকে ৩০ কিলোমিটার এর ভিতরে শহরতলী এলাকাতে স্ত্রী এবং তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে শফিকের সংসার। আজ আর বলিউড তার খোঁজ নেয় না। তবে তিনি নিজের জীবন নিয়ে ১৮০ পাতার একটা গল্প লিখে ফেলেছেন। তার আশা এই গল্প একদিন না একদিন কোনও প্রযোজকের পছন্দ হবে এবং এর উপর একটা ছবিও হবে।