একঘরে করেছে টলিউড, জুটেছে চরম লাঞ্ছনা, মুখ খুলতেই বিস্ফোরক ‘গাঁটছড়া’র মধুজা

বাংলা সিরিয়াল (Bengali Mega Serial) প্রেমীদের কাছে সোহিনী সান্যাল (Sohini Sanyal) নামটা এখন আর তেমনভাবে অজানা নেই কারও। দীর্ঘ বেশ কয়েক দশক ধরে তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। তাকে সেভাবে কখনও বড় পর্দায় দেখা না গেলেও ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ তিনি। ‘বকুল কথা’, ‘মন ফাগুন’, ‘গাঁট ছড়া’ (Gantchhora) ধারাবাহিকের অভিনেত্রীর হাতে এখন যা জনপ্রিয়তা রয়েছে তা কার্যত ইন্ডাস্ট্রি থেকে তাকে ছিনিয়ে নিতে হয়েছিল।

সম্প্রতি টলিউড ফোকাস কলকাতা নামের একটি সংবাদমাধ্যমকে সোহিনী তার সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানেই উঠে এল তার জীবনের নানান টানা পোড়েনের কথা। সোহিনী জানিয়েছেন কেরিয়ারের শুরুতে কিন্তু অভিনয় নিয়ে তার তেমন কোনও পরিকল্পনা ছিল না। সংসারের প্রবল আর্থিক অনটনের কারণে কলেজে থাকতে বাধ্য হয়ে তাকে মডেলিং করতে হয়েছিল। সেই সময় সোহিনী ভাল নাচতেও পারতেন। তার নৃত্যশিক্ষিকা তাকে অভিনয়ে আসার পরামর্শ দেন।

এরপর একটু চেষ্টা করতেই সুযোগটাও তার হাতে চলে আসে। একটি ধারাবাহিকে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন সোহিনী। সেই থেকেই শুরু হয় তার জার্নি। পরপর কিছু ধারাবাহিক ও টেলিফিল্মে কাজ করে একটু একটু করে তার জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। ডিডি বাংলার ‘সোনার বাংলা’ ধারাবাহিক ছিল তার জীবনের প্রথম মেগা সিরিয়াল। সেখান থেকে পরে অন্যান্য চ্যানেল থেকেও ডাক আসতে থাকে তার জন্য।

সোহিনীর কথায় তিনি কোনও সহায়তা ছাড়াই অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন। এর জন্য তিনি ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ। অতীতে বহুবার তাকে ব্যর্থতার মুখে পড়তে হয়েছিল, এখনও হয়। তবে যশ, খ্যাতি বা পুরস্কার পাওয়ার লোভে নয়, সোহিনী ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন শিক্ষা নিতে। তিনি সবসময় দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে গিয়েছেন, ভবিষ্যতেও তাই করবেন। অভিনেত্রী জানিয়েছেন একসময় টলিউডের তাকে ‘একঘরে’ও করে দেওয়া হয়েছিল। তার কারণটা সোহিনীর জানা নেই। তবে তাতেও তিনি হার মানেননি।

একবার দিদি নাম্বার ওয়ানের মঞ্চে এসে সোহিনী জানিয়েছিলেন একসময় তার প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে ৯৬ হাজার টাকা করে প্রয়োজন হত। দীর্ঘ ১৫ বছরে তিনি তাই কখনও ছুটি পাননি। প্রত্যেকটা দিন তাকে কাজের সন্ধানে যেতে হয়েছে শুধুমাত্র মাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু তাতেও তিনি অসুস্থ মাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেননি। মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে তার মাকে। এই কথা বলতে বলতেই ভারী হয়ে আসে তার গলা।

বাংলা সিনের ইন্ডাস্ট্রিতে সোহিনী সান্যাল নিঃসন্দেহেই একজন দাপুটে অভিনেত্রী। সুযোগ পেলে তিনি আরও ভাল কিছু করে দেখাতে পারতেন। তবে তার বয়সের বা তার থেকেও বেশি বয়সের অভিনেত্রীরা এখনও যেখানে নায়িকার চরিত্রে সুযোগ পাচ্ছেন সেখানে তাকে মা-কাকিমার চরিত্র নিয়েই সুখী থাকতে হচ্ছে। তবুও লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছু হটতে নারাজ সোহিনী।