প্রতিদিন ১০:৫২ তে পশ্চিমবঙ্গের এই গ্রামের লোকেরা ৫২ সেকেন্ডের জন্য দাঁড়িয়ে যায় ! কিন্তু কেন ?

কুইজে অনেকসময় এই প্রশ্ন বারবারই করা হয়,ভারতের জাতীয় সংগীত গাইতে কতো সময় লাগে ? অনেকেই হয়তো এই উত্তর জানেন না। হ্যাঁ ৫২ সেকেন্ড, অনেকেই হয়তো জানতেন।এই ৫২ সেকেন্ড জাতীয় সংগীত গাওয়ার প্রকৃত সময়।আর জাতীয় সংগীত আমাদের মনকে উদ্বুদ্ধ করে।আসমুদ্র হিমাচল রবি ঠাকুরের সৃষ্ট এই গান আমাদের  বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বাঁধনে বেঁধেছে। এই গান আমাদের দিয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ। আমাদের দিয়েছে স্বাধীন ভারতীয় হওয়ার গর্ব।আর তাই এই গান আজও আমাদের রক্তকে উত্তেজিত করে।এইগান একমনে করলে আজও আমাদের লোম খাড়া হয়ে যায়।তবে এই গান গাওয়ার জন্য বিশেষ কিছু নিয়ম আছে।এই গান গাইতে হলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় গাইতে হয়। কিন্তু সবার জন্য যে এই নিয়ম তা কিন্তু নয়, বিকলাঙ্গ ও মানসিক ভারসময়হীনরা যেকোন ভাবেই এই গান গাইতে পারে।তবে এই গানের জন্য গোটা গ্রামের মানুষ তাদের কাজ বন্ধ করে দেয় এইরকম কথা শুনেছেন কি ? হলফ করে বলতে পারি না। কিন্তু এইরকম করে চলে আসছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার অভয়নগর গ্রামের বাসিন্দারা। তারা রোজ সকাল  ১০:৫০ মিনিটে যে যেখানেই থাকুক না কেন ,তা সে মাঠেই থাকুক, আর হাটেই থাকুক, গ্রামের যেকোনো প্রান্তে থাকুক না কেন তারা সবাই ৫২ সেকেন্ডের জন্য নিজেদের কাজ ফেলে জাতীয় সংগীত গেয়ে  নেয়।

Every Day, A Bengal Village Stands Still For 52 Seconds
Source

অভয়নগরের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রোজই লাউড স্পিকার করে বাজানো হয় জাতীয় সংগীত।আর গ্রামের মানুষ  তাতে সুর মেলায় যে যেখানে থাকুক না কেন।এই অবস্থায় গ্রামের লোকেরা কেউ যদি সাইকেলে ,বা গাড়িতে  থাকে তাহলে তারা গাড়ি বা সাইকেল ছেড়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে সমবেত ভাবে জাতীয় সংগীত গায়।যদিও এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা মুসলিম তবুও তাদের মধ্যে এইরকম জাতীয়তাবাদের  চেতনা সত্যিই আমাদের ভারতবাসী হিসেবে গর্ব ও অহংকারের সৃষ্টি করে।আর ক্ষুদ্র মানসিক বোধ সম্পন্ন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে ধর্মের ও দেশপ্রেমের নামে যে সংকীর্ন রাজনীতি করে তা আমাদের চোখে বারবার বুঝিয়ে দেয় ।গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক জানান ,”এই বিদ্যালয়ে দুটি লাউডস্পিকার ও   দুটি সাউন্ড  বক্স আছে আর এর সাহায্যেই  মূলত জাতীয় সংগীত সারা গ্রামে শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়।এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে  ১১৫ জন ছাত্রছাত্রী আছে যারা  প্রত্যেকেই গরিব পরিবার থেকে এসেছে।কিন্তু তবুও তারা সকলেই তাদের দেশকে খুবই ভালোবাসে।তাই তিনি মনে করেন দেশকে ভালোবাসার জন্য ধনী বা উচ্চবিত্ত হওয়ার দরকার পড়ে না, দেশকে ভালোবাসতে গেলে দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হয় আর এই ভালোবাসা সকল ধর্মের ,জাতের মানুষের সম্মিলিত ভালোবাসা।” এই ভাবধারায় তিনি তার বিদ্যালয়ের শিশুদের শিক্ষা দেন।তাই তাদের বিদ্যালয় রাজ্য সরকারের কাছে পেয়েছে বিশেষ সম্মান ২০১২ সালে নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার ও ২০১৬ সালে  শিশুমিত্র  বিদ্যালয় পুরস্কার।

আরো পড়ুন : ব্যাঙ্ক ছেড়ে পোস্ট অফিসে টাকা রাখুন; জেনে নিন ৯ টি স্কিম