রিয়্যালিটি শো-র গ্যালারিতে কারা বসেন ? ‘ভাড়া করা’ দর্শকদের কাহিনী  

নাচে, গানে কিংবা তুখোড় জবাবে কেউ মাত করছেন। আর ঢেউ উঠছে দর্শকাসনে। কোনও দর্শক হেসে গড়িয়ে পড়ছেন, কারও হাততালি থামছেই না। রিয়্যালিটি শোয়ে এমন দৃশ্য খুব চেনা। কিন্তু সেখানে যাঁদের উদ্বেলিত হতে দেখছেন, কখনও ভেবেছেন কি, এঁরা সবাই ওই অনুষ্ঠানে পৌঁছলেন কী করে? মানে, দর্শকাসনে যাঁরা বসে এঁরা কি আদৌ ‘বিশুদ্ধ’ দর্শক?

Source

দর্শক এঁরা ঠিকই, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘ভাড়া করা’  দর্শক। মানে, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এঁরা দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। হুল্লোড়, হাততালি, সমর্থন কিংবা মনখারাপে নির্দেশ মতো শামিল হয়ে রিয়্যালিটি শো-কে আরও ‘রিয়্যাল’ করে তোলেন।
কী ভাবে জোগাড় করা হয় এই সব দর্শকদের? নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি আছেন, যাঁদের কাজই হল টিভি-শোয়ের প্রয়োজন মতো দর্শক সাপ্লাই করা। এমনই কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ‘ভাড়া করা’ দর্শকদের গোপন কাহিনী।

আরও পড়ুন : অমিতাভের সাথে খেলতে চান KBC ? হট সিটে পৌঁছতে কি করতে হবে

Source

দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করছেন অনিমেষ বোস। ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত নাম। কিংবা সজল মণ্ডল। বছর দশেক হল দর্শক জোগাড়ের দায়িত্বে। তাঁদের বক্তব্য, গ্রাম-শহর নির্বিশেষে মানুষ আসে দর্শক হওয়ার জন্য। কোচবিহার বা জলপাইগুড়ির মতো উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকেও অনেকে কলকাতা পৌঁছে যান স্রেফ দর্শক সাজতে! অবশ্য সব সময়েই যে দর্শক ‘সাজতে’ হয়, তা নয়। দীর্ঘদিন ধরে রিয়্যালিটি শো পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে ‘দাদাগিরি’-খ্যাত শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানালেন সেই কথা। তাঁর বক্তব্য, দর্শকদের জন্য অঢেল জায়গা যেহেতু থাকে না, কাজেই অনেক শোয়ে বাড়ির লোকজন এলেই তা ভরে যায়। আবার কোনও ক্ষেত্রে দর্শকরা স্বইচ্ছায় আসেন। তখন বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের বেছে নেওয়া হয়।

Source

কিন্তু যে অনুষ্ঠানে বিশেষ কোনও ধরনের দর্শক দরকার, সেখানে ভাড়া করার দিকেই যেতে হয়। মানছেন শুভঙ্কর। সাম্প্রতিক একটি গানের রিয়্যালিটি শোয়ে অল্পবয়সি দর্শক প্রয়োজন ছিল, যারা শোয়ের মূল টেম্পারামেন্টের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারবে, সেক্ষেত্রে ভাড়া করা দর্শকের ব্যবস্থাই করা হয়েছিল।
কখনও অল্পবয়সি দর্শক, কখনও সুন্দরী। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বা পরিচালকের চাহিদা মতো দর্শকের জোগান দিতে পারা জরুরি। গোটা কাজটা করতে হয় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গেও। অনিমেষবাবু বলছিলেন, যখন মোবাইল বা টেলিফোনের এত রমরমা হয়নি, তখন সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে খবর দেওয়া হতো। দিন প্রতি চার-পাঁচ টাকা পারিশ্রমিকেও দর্শক সাজার লোক মিলত। এখন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা রোজ দিতেই হয়।

আরও পড়ুন : ১০ টি হাস্যকর জিনিস যা শুধুমাত্র বাংলা সিরিয়ালেই দেখা যায়

মিটিং-মিছিলে ঢল নামাতে, ব্রিগেডকে জনসমুদ্র করে তুলতে, সামান্য টিফিনের বিনিময়ে ‘সমর্থক’ ভাড়া করার ছবি রাজনীতির মাঠে পরিচিত। এরাও এক প্রকার ভাড়ার দর্শকই। সেখানে যাকে ‘রিয়্যালিটি’ বলে দেখি, তা যেমন পুরোটা রিয়্যাল নয়, টেলিভিশনের রিয়্যালিটি শো-ও খানিক তেমনই। বাংলা তো বটেই, সারা পৃথিবীর ক্ষেত্রেই এই কথা বলা যায়।