তথাকথিত সুন্দরী নন, জাতীয় পুরস্কার পেয়েও টলিউডে যোগ্য সম্মান পেলেন না অনন্যা চ্যাটার্জি

শ্যামবর্ণা, উজ্জ্বল দুটি চোখ, এক ঢাল ঘন কালো চুল, আর অনবদ্য অভিনয়, ধারাবাহিকপ্রেমীরা সুবর্ণলতাকে এভাবেই মনে রেখেছেন। অভিনেত্রী অনন্যা চ্যাটার্জি (Ananya Chatterjee) হাতে গুনে যে ক’টি কাজ করেছেন, সবই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে সুবর্ণলতা ধারাবাহিকের সৌজন্যে তিনি আজও জনপ্রিয় টেলিমিডিয়াতে। একসময় ছবি এবং টেলি ধারাবাহিকে তিনি কাজ করতেন ঠিকই, তবে এখন আর তাকে অভিনয় করতে দেখা যায় না।

অভিনয়কে জীবন থেকে এক প্রকার বাদই দিয়ে দিয়েছেন অনন্যা চ্যাটার্জি। ক্যামেরার সামনে তার শেষ কাজ ছিল ‘জয়কালী কলকাত্তাওয়ালি’। তার পরে আর কোনও ধারাবাহিক কিংবা ছবিতে তাকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। তাই বলে এই নয় যে তার ফ্যানবেস কিছু কম ছিল। আজও অনন্যার অনুরাগীরা তাকে মিস করেন। সুবর্ণলতার রিপিট টেলিকাস্ট আজও ভালোই টিআরপি দেয়। একালের যে কোনও জনপ্রিয় টেলি তারকাও জনপ্রিয়তার নিরিখে তার সমকক্ষ নন। তাহলে তিনি কেন ব্রাত্য টলিউডে? রাজনীতিই কি এর নেপথ্যে রয়েছে নাকি রয়েছে অন্য কোনও ইস্যু?

কারণ স্পষ্ট নয়। তবে এটা ঠিক ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেলেও বেশ কয়েক বছর আগেই ক্যামেরার সামনে থেকে সরে গিয়েছেন অভিনেত্রী। ১৯৭৭ সালের ১৬ই জানুয়ারি জন্ম কলকাতায়। যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে বায়োলজিতে স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ার পর মমতাশঙ্করের ডান্স একাডেমীতে তিনি নাচ শেখেন। তখনই তার কাছে টেলিভিশনে অভিনয়ের সুযোগ আসে। তার প্রথম ধারাবাহিক ছিল ‘দিন প্রতিদিন’। এরপর ‘তিথির অতিথি’, ‘আলেয়া’ ধারাবাহিকে পরপর অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। এছাড়া অসংখ্য টেলিফিল্মেও তার অভিনয় মনে রাখার মত।

Ananya Chatterjee

অভিনয়ের সুবাদে তিনি সিনেমাতেও সুযোগ পান। ২০০২ সালে ‘টক ঝাল মিষ্টি’ ছবির হাত ধরে ছবিতে প্রথমবার অভিনয় করেন। তারপর ‘রাত বারোটা পাঁচ’ ছবিতে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা অর্জন করে নেন। ২০০৯ সালে প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জীর সঙ্গে বাণিজ্যিক ছবি ‘মামা ভাগ্নে’তে অভিনয় করেন। তবে এরপরে আর বাণিজ্যিক ছবিতে তাকে দেখা যায়নি। কিন্তু পরের বছরই ঋতুপর্ণ ঘোষের হাত ধরে মমতা শংকর, দীপঙ্কর দে, যীশু সেনগুপ্তের সঙ্গে ‘আবহমান’ ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়ে যান।

এতকিছুর পরেও টলিউডে যোগ্য সম্মান পাননি অনন্যা। তাই তিনি আবারও টেলিভিশনের পর্দাতে ফিরে আসেন। ‘সুবর্ণলতা’ ধারাবাহিক তার টেলিভিশন কেরিয়ারের মাইলস্টোন। তবে তারপর থেকে ক্রমশ অভিনয় থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনও খুব সুখের ছিল না। ৪ বছরেই ভেঙে যায় দাম্পত্য। আজ অভিনয় থেকে দূরে বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন অনন্যা। কারণ তার মতে, বাজে কাজ করার থেকে বই পড়া ভালো। কাজের জন্য পরিচালকদের হাতে পায়ে ধরতে পারবেন না। তাই আজ ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে নিজের মতো করে বাঁচছেন অনন্যা। তবে অভিনেত্রী হিসেবে আজীবন দর্শকের মনে তার জায়গা রয়ে যাবে।