প্রসেনজিৎ ক্যামেরার সামনে প্রণাম করত, তারপরই থাপ্পর মারত : অনামিকা সাহা

৯০ এর দশকের সেরা খলনায়িকাদের মধ্যে সবার আগে নাম থাকবে অনামিকা সাহার (Anamika Saha)। একসময় পর্দাতে তার উপস্থিতি হাড়ে হিম ধরাতো। তবে শুধু দজ্জাল অত্যাচারী শাশুড়ি, পিসিমা, সৎ মা হিসেবে নয়, মমতাময়ী মায়ের চরিত্রেও অনবদ্য ছিল তার অভিনয়। অভিনয়গুণে দাগ কেটেছিলেন সবার মনে। আজও বিভিন্ন ধারাবাহিকে তাকে দেখতে পছন্দ করেন দর্শকরা।

অভিনয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল মাত্র ২৯ বছর বয়সে। তবে কখনও নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার সাধ প্রকাশ করেননি তিনি। কারণ তাতে শ্বশুরবাড়ির মত ছিল না। আসলে প্রথমদিকে অনামিকাকে অভিনয় করতে দিচ্ছিলেন না শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। সহ অভিনেতা অভিষেক চ্যাটার্জীর মৃত্যুর পর সেসব দিনের কথা স্মরণ করে টিভি নাইন বাংলার কাছে একটি সাক্ষাৎকার দেন অনামিকা।

অভিনেত্রীর কথায়, “যেহেতু আমি ২৯ বছর বয়স থেকে মোটাসোটা হয়ে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছি, লোকেরা ভাবছে আমার কত না কত বয়স। কিন্তু আসলে তো তা নয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে আর আমাকে ছবিতে কাজ করতে দিচ্ছিল না। কেবল বলত, ‘তোমার গলা সুন্দর, রেডিওতে নাটক করো’। তখন রেডিওতে আমি ৫০০০ এরও বেশি নাটক করেছিলাম। মেয়ে হওয়ার পর আমার সেই কাজ আর ভাল লাগত না। মেয়ে আয়ার কাছে থাকতো। আমার শ্বশুরমশাই আইনজীবী ছিলেন। বাবাকে গিয়ে বললাম, আমাকে একটু অভিনয় করতে দিন না…!”

বৌমার কথা শুনেছিলেন শ্বশুরমশাই। অনামিকা বলেন, “শ্বশুরমশাই আমাকে বললেন, ‘আমাদের কোনও প্রেজুডিস নেই, কিন্তু এমন কোনও চরিত্রে অভিনয় কোরো না, যেটা আমাদের বসে দেখতে খারাপ লাগে।’ আমি ভাবলাম, নায়িকা হলে বুকে জড়াজড়ি করতে হবে, বিছানায় শুতে হবে, ক্লোজ সিন থাকবেই। তার চেয়ে আমি মা-মাসি-ঠাকুরমা-দিদিমার অভিনয় করব। তাহলেই আমি অভিনয় করতে পারব। আমি অভিনয়টাকে এতটাই ভালোবাসি’’।

অনামিকার সমস্যার সমাধান করতে তাকে পরামর্শ দিলেন চিরঞ্জিত। সেই সময় তারা একসঙ্গে থিয়েটার করতেন। চিরঞ্জিত থাকে বুদ্ধি দিলেন, ‘তুই পান্তাভাত, ফ্যানা ভাত খেয়ে ঘুমো। মুখটা খাটে ঝুলিয়ে দিয়ে ঘুমো। দেখবি তোর মাংস এসে যাবে। তুই মোটা হয়ে যাবি’। চিরঞ্জিতের পরামর্শ মেনে চলেন অনামিকা। এরপর সিজার করে তার সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর এক্সারসাইজ করতেন না, বেল্ট পরতেন না। এভাবে মোটাসোটা হয়ে তিনি ফিরে এলেন অভিনয়ের দুনিয়ায়।

মুম্বাই থেকে আগত বিজয়েতা পন্ডিত, জুহি চাওলার মতো হিরোইনদের ডাবিং করেছিলেন অনামিকা। ডাবিং করতে করতেই একবার এক ভদ্রলোক তার কাছে ছবির অফার নিয়ে আসেন। তারপর শ্বশুরমশাইয়ের অনুমতি নিয়ে শুরু হল তার কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস। ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ ছিল সেই ছবি। এরপর আর তাকে ঘুরে তাকাতে হয়নি। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, থেকে শুরু করে ‘মায়ের আঁচল’, ‘পরিবার’, ‘জামাই রাজা’ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই কাজ করে যেতে চান বর্ষিয়ান অভিনেত্রী।

৫৮ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে অভিষেক চ্যাটার্জীর। অনামিকার বয়স এখন ৬৩ বছর। বহু ছবিতে তিনি অভিষেকের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তবে চিরঞ্জিত, প্রসেনজিৎ, অভিষেকদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। অনামিকার কথায়, ‘‘বুম্বা (প্রসেনজিৎ) আমাকে ক্যামেরার সামনে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করত, তারপরই থাপ্পড় মারত। এরকম মজাদার সম্পর্ক ছিল আমাদের। এ রকমই ৩-৪ বছরের ব্যবধান ছিল আমার সঙ্গে ওদের বয়সের। তাপস পাল ছিল আমার চেয়ে একবছরের বড়।”