লিভারের ৭৫ শতাংশই খারাপ, কমে গেছে দৃষ্টিশক্তি, অমিতাভের শরীরে একাধিক রোগ

বিগত ২০ বছর ধরে লিভারের মাত্র ২৫ শতাংশের উপর ভরসা করেই বেঁচে রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন। তবে এত কিছুর মধ্যেও কাজ বন্ধ হয়নি। অনেক অসুখকে হার মানিয়েছেন, অনেক অসুখকে সঙ্গী মেনে নিয়েছেন কিন্তু অভিনয় থামাননি।

কয়েক দিন ধরে হালকা জ্বর আর শ্বাসকষ্ট। সন্দেহের বশে কোভিড টেস্ট করানোর হল বিগ-বির। টেস্টে শনিবার রাতে রিপোর্ট আসে করোনা পজিটিভ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ভর্তি করা হয় মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, করোনা আক্রান্ত হলেও রয়েছে মৃদু উপসর্গ এবং এখন তার অবস্থা স্থিতিশীল।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন। রবিবার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটি ভিডিও বার্তাও দিয়েছে তিনি। ৭৭ বছর বয়সী এই মেগাস্টারকে একাধিকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এর আগেও।

একটি সংবাদসংস্থার উদ্বোধনে গিয়ে বিগ বি বলেছিলেন, “আমার টিবি রয়েছে, আমি হেপাটাইটিস বি সার্ভাইভার… বাজে রক্ত আমার লিভারের ৭৫ শতাংশ নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু যেহেতু আমি ২০ বছর পরেও রোগকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম, তাই ৭৫ শতাংশের পর ২৫ শতাংশ লিভার নিয়েও আমি বেঁচে রয়েছি।”

এই বছরেরই গোড়ার দিকে চোখের সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। অমিতাভ তার ব্যক্তিগত ব্লগে লেখেন, “চোখগুলো ঝাপসা দেখছে। এমনকি সবকিছু দু’টি করে দেখছে। বেশ কয়েকদিন ধরে আমি নিজেই বুঝতে পারছি, অন্ধত্বের দিকে এগোচ্ছি। আমার শরীরে অগণিত সমস্যার মধ্যে এটাও যোগ হতে যাচ্ছে।”

গত বছর অক্টোবর এবং নভেম্বরে দু’বার অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। অসুস্থতার জন্য ২৫তম কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে এগুলো সবই ছিল সামান্য সমস্যা। জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ১৯৮২-র ২৬ জুলাই। মারাত্মকভাবে চোট পান প্রয়াগ রাজ ও মনমোহন দেশাইয়ের ছবি ‘কুলি’ সিনেমার শ্যুটিংয়ের সময়।

ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই সিনেমার শ্যুটিং চলার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ফাইটিং সিনের শ্যুটিং করার সময় ঠিক মতো লাফাতে না পেরে টেবিলের উপর পড়ে যান। টেবিলের কোণের ধারালো ইস্পাতের টুকরো তাঁর পেটে ঢুকে যায়।

তারপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে বিগ বি নিজেই জানিয়েছিলেন তাঁকে ভেন্টিলেটরে দেওয়ার আগে কয়েক মিনিটের জন্য চিকিৎসকরা মৃত বলে ধরে নিয়েছিলেন।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বিগ বি-র লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। বিগ বি নিজেই জানিয়েছেন তার লিভারের মাত্র ২৫ শতাংশ ঠিকঠাক কাজ করে। এরপর আবার বছর ২০ আগে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করা হয়েছিল। তারপর থেকে লিভারের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

১৯৮৪ সালে মায়াস্থেনিয়া গ্রাভিস নামে এক স্নায়ুজনিত রোগ ধরা পড়ে তাঁর শরীরে। এই রোগের চরিত্র হলো শারীরিক দুর্বলতা এবং কোন একটি পেশী ঠিকঠাক কাজ না করা। চিকিৎসকদের থেকে জানা গিয়েছে এই রোগ সারে না তবে নিয়মিত চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। স্টান্ট শ্যুটিং করার সময় অমিতাভ বচ্চন অনেকবার চোট পেয়েছেন তা সম্পর্কে তিনি নিজেই তাঁর ব্লগে লিখেছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এমন দৃশ্যগুলি করার সময়ই তাঁর ঘাড় শক্ত হয়ে যায় বলে জানান তিনি।

২০০০ সালে কৌন বানেগা ক্রোড়পতি শ্যুটিং শুরু হওয়ার সময়ই তাঁর মেরুদন্ডে টিবি ধরা পরে। এরপর টানা এক বছর ধরে তাঁর চিকিৎসা চলে। ঠিকঠাক শুয়ে এবং বসে থাকতে পারতেন না বলে জানিয়েছিলেন বিগ বি। দিনে ৮ থেকে ১০ টা পেইনকিলার খেয়ে শুটিং করতে হতো বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

২০০৫ সালে বলিউডের এই শাহেনশাহকে ফের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্তের প্রদাহ এবং ছিদ্র নিয়ে। সে সময় মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর কম করে এক মাস তাঁকে বিশ্রামে থাকতে হয়েছিল।

২০১৫ হেপাটাইটিস বি রোগের কারণে তাঁর শরীরের যকৃতের ৭৫% অংশ বাদ দিতে। বর্তমানে তাঁর শরীরে মাত্র ২৫% যকৃত রয়েছে। আর একথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন।

এরপর আবার ২০১৮ সালে অমিতাভ বচ্চনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় মেরুদন্ডে ও ঘাড়ে ব্যথার কারণে। সে বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নপিঠের নিচে এবং মেরুদন্ডে ও ঘাড়ে ব্যথা হয়। যদিও সেবার তাঁকে অল্প সময়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় থাকতে হয়েছিল।

২০১৮ সালেই যোধপুরে ‘ঠগস অফ হিন্দোস্তান’ সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীন তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে অমিতাভ বচ্চনের চিকিৎসকদের আনা হয় যোধপুরে।