বয়স্কদের টিকা নেওয়ার খরচ কত, কী কী লাগবে, সমস্ত খুঁটিনাটি প্রশ্নের উত্তর

ভারতে অনেকদিন আগেই করোনার টিকাকরন শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দুই পর্বে কোভিডের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর্মী আশা কর্মী, কোভিড ফ্রন্টলাইন  কর্মীদের ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় পর্বের বৃহত্তর টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হতে চলেছে। তৃতীয় পর্বের এই টিকাকরণে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বেও ৪৫ থেকে ৬০বছর বয়স অবধি কোমর্বিডিটির রোগীদের টিকা দেওয়া হবে। প্রথম দুই পর্বের কোভিড ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের মধ্যে কেউ যদি টিকা না পেয়ে থাকেন তিনিও এই পর্বে টিকা পাবেন।

সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করা হবে। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে টিকার দাম ১৫০ টাকা ও পরিষেবার খরচ খাতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা নেওয়া যাবে। টিকা নেওয়ার জন্য সকাল ৯ টা থেকে ‘কো-উইন ২.০’ অ্যাপ (Co-Win app) বা ‘কো-উইন’ পোর্টালে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। প্রতিদিন দুপুর তিনটে পর্যন্ত টিকাকরণ কেন্দ্র থেকে প্রতিষেধক প্রদান করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্প এবং আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প মিলিয়ে ১৬,০০০-এক বেশি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে টিকা প্রদান করা হবে।

১। সেল্ফ রেজিস্ট্রেশন :- এতদিন টিকা নিতে অনলাইন পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করতে হতো। এই নাম নথিভুক্তকরণ এর জন্য ব্যক্তিকে তার সচিত্র পরিচয় পত্র দিয়ে নাম রেজিস্ট্রি করতে হত এবং তারপর সে মোবাইলে একটা এসএমএস পেতো যেখানে টিকাকরণ কেন্দ্রের নাম ও ঠিকানা যাবতীয় লেখা থাকতো। কিন্তু এইবার আগে থেকে নাম নথিভুক্ত না করে অন স্পট রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

কো উইন ২.০ পোর্টাল ইন্সটল করে সরাসরি টিকার কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়ে যে কেউ নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। বয়স্ক মানুষদের এই সুবিধার ফলে বিশেষ লাভ হবে কারণ তারা অনেকেই অনলাইন পোর্টালে আগে থেকে নাম রেজিস্ট্রি করার বিষয়টি ঠিকমত বুঝে উঠতে বা করে উঠতে পারেন না। তাই এক্ষেত্রে তারা টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়েই নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন।

২। আরোগ্য সেতু অ্যাপ :- আরোগ্য সেতু অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করা থাকলে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কোথায় কোথায় টিকা দেওয়া হচ্ছে, তা সহজেই জানা যায়। এর পাশাপাশি আরোগ্য সেতু অ্যাপ থেকে নাম রেজিস্ট্রেশন ও করা যেতে পারে।

Arogya-setu-app

৩। পছন্দমতো টিকাকরণ কেন্দ্র বাছাই :- যেহেতু এই পর্বে প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা বেশি তাই তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা মাথায় রেখে এই পর্বে একটি নতুন সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে যে প্রবীণ নাগরিকরা নিজেদের পছন্দমতো টিকাকরণ কেন্দ্র বেছে নিতে পারবেন। তারা যখন কো-উইন ২.০ পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করবেন তখনই তারা বাড়ির কাছাকাছি কোন একটি কেন্দ্রকে বেছে নিতে পারবেন এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশিক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে যাতে না হয় সেই বিষয়টিও লক্ষ্য রাখা হবে এক্ষেত্রে।

৪। কো মর্বিডিটির রোগীরা  কী করবেন :- ৪৫-৫৯ বছর অবধি যে সকল ব্যক্তিদের মধ্যে ক্রনিক রোগ রয়েছে তাদেরকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে‌। এই প্রথম ডোজ দেওয়া হবে ১ মার্চ থেকে‌। এই রোগীদের টিকা নিতে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সহ চিকিৎসার যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।কো মর্বিডিটির রোগীরা যাতে এই পর্বের টিকা নিতে আসেন সেই কারণে আশা কর্মী, পঞ্চায়েত কর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এই বিষয়টির দায়িত্বে রাখা হবে।

৫। টিকা নেওয়ার জন্য কী কী ডকুমেন্ট লাগবে :- টিকা নিতে যারা যাবেন তাদের অবশ্যই সচিত্র পরিচয় পত্র অর্থাৎ আধার কার্ড, ইলেক্টোরাল ফটো আইডি কার্ড ইত্যাদি নিয়ে যেতে হবে। যদি আধার কার্ড না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন এর সময় দেওয়া ফটো আইডি কার্ডের কপি দিতে হবে। এছাড়াও নিজের পাসপোর্ট সাইজের ফটো,ড্রাইভিং লাইসেন্স, মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এম্প্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট জব কার্ড ,প্যান কার্ড ,ব্যাঙ্ক অথবা পোস্ট অফিসের পাসবুক, পাসপোর্ট ছাড়া ও যেখানে চাকরি করা হয় সেখানকার আইডি কার্ড ও ভোটার কার্ড ইত্যাদি লাগবে।

৬। টিকা নেওয়ার পর কী করনীয়? টিকা নেওয়ার পর পরই কেউ সেই টিকাকরণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না। টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার পরে একজনকে ৩০ মিনিটের জন্য অবজারভেশন রুমে রাখা হবে। এই সময় ওই ব্যক্তি যদি নিজের কোনো রকম শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করেন তাহলে তা তাকে জানাতে হবে এরপর  সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মী ও আশা কর্মীরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। উল্লেখ্য এই ইঞ্জেকশন টি পেশীর নিচে দেওয়া হবে।

৭। কিউআর কোড নির্ভর সার্টিফিকেট :- ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেওয়ার পর প্রতি ব্যক্তিকেই  একটি কিউ আর কোড নির্ভর সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এই সার্টিফিকেটটি মোবাইলে রাখা যাবে। যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন তাদের নাম ডিজি লকার নামে একটি ডকুমেন্ট অ্যাপে নথিভূক্ত ও থাকবে।

৮। ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য হেল্পলাইন :- ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যদি কোন হেল্প দরকার হয় পরবর্তীকালে, সেই কারণে একটি হেলপ্লাইন দেওয়া থাকবে যা প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা চালু থাকবে।

৯। এসএমএস ব্যবস্থার মাধ্যমে টিকাকরণ কেন্দ্রের সন্ধান :- টিকা নেওয়ার আগে মোবাইলে যখন এসএমএস আসবে তার মধ্যেই টিকাকরণ কেন্দ্রের নাম,জায়গা,দিনক্ষণ সব বলা থাকবে।আর যদি কেউ সরাসরি টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করান তাহলে তাকে সচিত্র পরিচয় পত্র দেখাতে হবে। যেহেতু প্রতিটি ব্যক্তির ফোনে একটি করে এসএমএস আসবে সেই কারণে ১২ টি ভাষায় এসএমএস পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১ মার্চ থেকে এই যে তৃতীয় পর্বের টিকাকরণ শুরু হবে এক্ষেত্রে মোট ২৭ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। প্রথম ডোজের ক্ষেত্রে ১ কোটি ৪২ লাখ মানুষ কে ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে। পুরো দেশের প্রায় ১০ হাজার সরকারি হাসপাতাল ও ২০ হাজার বেসরকারী হাসপাতাল এই টিকাকরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে।তবে এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা পাওয়া গেলেও বেসরকারী হাসপাতাল এ দাম দিয়ে টিকা নিতে হচ্ছে।