রাজ্যের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনাতে আরও আগ্রহী এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিশেষ স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই স্কলারশিপ দেওয়া প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঐক্যশ্রী’ প্রকল্প। রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৬১৬ কোটি টাকা এবং এই আজ থেকে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করা শুরু হয়ে গেলো।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি পাওয়ার জন্য এতদিন কেন্দ্রীয় পোর্টালে ছাত্রছাত্রীদের আবেদন জানাতে হত। তাতে বৃত্তি পেতে বহু সময়ও লেগে যেও। এবার থেকে রাজ্যের এই পোর্টালে আবেদন করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। এবং এতে আগের থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি স্কলারশিপের টাকা দেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার রাজ্য সংখ্যালঘু দফতরের আধিকারকরা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করে জানান, রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য ঐক্যশ্রী নামের নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যাতে প্রি-ম্যাট্রিক, পোস্ট ম্যাট্রিক ও ম্যারিট কাম মিনস স্কলারশিপ দেওয়া হবে। রাজ্যের যে কোনও স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের বছরে ১১০০ টাকা থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে।
পাশাপাশি, পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের ক্ষেত্রে রাজ্যের স্বীকৃত যে কোনও উচ্চ মাধ্যমিক, আইটিআই, ডিপ্লোমা, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, বিএড-সহ অন্যান্য কোর্সে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের বছরে ১০ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার ২০০ টাকা দেওয়া হবে। এই দুই ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীর পারিবারিক আয় ২ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে হবে। ‘মেরিট কাম মিনস’ স্কলারশিপের ক্ষেত্রে রাজ্যের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধীনে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি পেশাগত কোর্সে পড়া, কিংবা রাজ্য বা রাজ্যের বাইরে আইআইটি, আইআইএম, এনআইটি, এনআইএফটি-সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বছরে ২২ থেকে ৩৩ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে পারিবারিক আয় আড়াই লক্ষ টাকার মধ্যে হতে হবে।
৩০ শে জুন শুরু হওয়া এই স্কলার্শিপ এর আবেদন গ্রহণ পর্ব চলবে আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। স্কলারশিপ পেতে হলে অবশ্যই পারিবারিক আয় দু লক্ষ টাকার নিচে হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ‘ঐক্যশ্রী’ প্রকল্প বা স্কলারশীপ মূলত আনা হয়েছে রাজ্যের সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার আগে দেখে নিন ৬ টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
১) যিনি আবেদন করছেন তাকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে।
২) শিক্ষার্থীকে বিগত চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবশ্যই ৫০ শতাংশের বেশি নাম্বার পেতে হবে।
৩) একজন শিক্ষার্থী শুধুমাত্র একটিই স্কলারশিপ পেতে পারে।
৪) দূর নিয়ন্ত্রিত শিক্ষায় পাঠরত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে না।
৫) একটি আবেদনের জন্য কেবলমাত্র একটি মোবাইল থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে প্রি মেট্রিকের ক্ষেত্রে একটি মোবাইল থেকে সর্বোচ্চ দুটি আবেদন করা যাবে।
৬) অনলাইনে আবেদন করার পর সেই আবেদন পত্র প্রিন্ট করে নিজের ব্যাংক বইয়ের জেরক্স ও বার্ষিক আয়ের ঘোষিত শংসাপত্র সহ বিদ্যালয়ে জমা দিতে হবে। অনলাইনে আবেদনের জন্য লগইন করুন – www.wbmdfcscholarship.gov.in এ। অবশ্যই মনে রাখবেন ব্যাংকের বইয়ের যে জেরক্স আপনি দিচ্ছেন সেটিতে যেন অবশ্যই অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং আইএফএসসি কোড উল্লেখ থাকে।
উল্লেখ্য, প্রতিবছরই সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য স্কলারশিপ দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। জুলাই-আগস্ট মাসে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত হয় পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের মাধ্যমে। বিগত কয়েক বছরে রাজ্যে ৩০ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী স্কলারশিপ-এর জন্য আবেদন করলেও, বাস্তবে ১৪ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। ফলে স্কলারশিপের প্রতি ভরসা হারিয়ে অনীহায় ভুগছে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী। কিন্তু, কেন্দ্র সংখ্যালঘু ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করলেও, রাজ্য সরকার বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু তাতেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে।
এই অবস্থায় রাজ্যের সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য সরকার আলাদাভাবে স্কলারশিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রী সভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন। কয়েকদিন আগে মাদ্রাসার কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ‘ঐক্যশ্রী’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের কথা ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে রাজ্যে।