কীভাবে করোনা টেস্ট করা হয়, করোনা টেস্ট কত রকমের ও কি কি

করোনা আক্রান্তের মধ্যে তিন শ্রেণীর মানুষদের টেস্ট করানো হচ্ছে। প্রথমত যারা অতি সংক্রমিত কোনও অঞ্চল থেকে এসেছেন। দ্বিতীয়ত যারা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন। এবং তৃতীয়ত যাদের ক্ষেত্রে হাত পা গলা ব্যথা, মাথা ব্যাথা, কাশি, সর্দি জ্বর, ডায়রিয়া, গন্ধ ও স্বাদ এর অনুভূতি লোপ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। তবে তাদের ক্ষেত্রে করোনা টেস্ট হবে নাকি অন্যান্য অসুখ (ম্যালেরিয়া, টিবি, অন্য কোনো ফ্লু) এর টেস্ট করাতে হবে সেই সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।

বর্তমানে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়াবাড়ি রকম বৃদ্ধি পেলেও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবও আছে। তবে রোগী করোনা সংক্রমিত এলাকায় থাকলে RTPCR করে নেওয়াই ভালো।তবে রিপোর্ট নেগেটিভ এলে ডাক্তার পরিস্থিতি বুঝে ৫-৭ দিন পর পুনরায় টেস্ট করাতে বলতে পারেন। আজ আমরা এই প্রতিবেদনের মধ্যমে আলোচনা করবো করোনা আক্রান্ত হলে কি কি টেস্ট করা হয়?

RT-PCR টেস্ট

RTPCR (রিয়েল টাইম রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেন রিয়্যাকশন) পরীক্ষায় গলার বা নাকের ভেতর থেকে কোষ নিয়ে পরীক্ষা করে ভাইরাস আছে নাকি তা নির্ণয় করা হয়। কয়েক ঘণ্টা লাগে এই পরীক্ষা সম্পন্ন হতে। এখনও পর্যন্ত এই টেস্টটি একমাত্র কোভিডের কনফার্মেটরি টেস্ট। এই টেস্ট সরাসরি ভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারে। এই টেস্টে যদি নেগেটিভ রিপোর্ট আসে সেক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বুঝে ৫-৬ দিন আবার পরীক্ষা করাতে পারেন।

Corona virus Test: Real time RT-PCR
Source : YouTube

কিভাবে এই পরীক্ষা করা হয়?

কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে এই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। প্রথমত ভাইরাসের আরএনএ-কে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পদ্ধতিতে ডিএনএ-তে পরিণত করা হয়। তারপর বিশেষ এনজাইম ও রিএজেন্ট এর সাহায্যে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে পলিমারেজ চেন রিয়্যাকশন ঘটানো হয়। এর ফলে ডিএনএ বড় হতে থাকে। নির্দিষ্ট মাপের হলে ডিএনএ প্যাটার্ন দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়।

নাকের বা গলার গভীরে কোষ বা লালারস এর মাধ্যমে এই পরীক্ষা করা হয়। সংক্রমণের প্রথম সপ্তাহে লালারসে এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন সংক্রমন ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে তখন কফে জীবাণুর পরিমাণ অনেক বেশী থাকে।

ট্রু-ন্যাট টেস্টিং

এটি একটি ছোট ব্যাটারি চালিত যন্ত্র যার মাধ্যমে আধ থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল জানা যায়। এক্ষেত্রে নাক বা গলার গভীর থেকে কোষ সংগ্রহ করাই একমাত্র কাজ এবং বাকি দায়িত্ব যন্ত্রটির। তবে এক্ষেত্রে সবথেকে বড় সুবিধা যে এটির খরচা যেমন কম তেমনই প্রতিবারে ৩২-৪৮ টা পর্যন্ত নমুনা এমনকি একসাথে করোনা এবং অন্যান্য অসুখ (টিবি, এইচআইভি) এর নমুনা সংগ্রহ করা যায়। টিবি বা এডস পরীক্ষার ল্যাবেই এই পরীক্ষা হয়। গত ১০ এপ্রিল আইসিএমআর এই টেস্টের অনুমতি দিয়েছে। তবে রিপোর্ট পজিটিভ এলে RTPCR এর মাধ্যমে তা কনফার্ম করতে হবে।

র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট

এই পদ্ধতিতে ভাইরাস শরীরে ঢুকলে তার প্রতিক্রিয়ার ওপর পরীক্ষা করা হয়। মানুষের মধ্যে ভাইরাসের বিস্তার কত বা গোষ্ঠী সংক্রমন শুরু হয়েছে কিনা তা এই পদ্ধতিতে জানা যায়। উপসর্গহীন মানুষদের মধ্যেও এই পরীক্ষা করা হয়। ভাইরাসের সংক্রমন রুখতে এটি গুরুত্বপূর্ন পরীক্ষা। শরীরে কোনো বহি শত্রু আক্রমন করলে তার সাথে লড়াই করার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে উঠে অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা মূলত ইমিউনোগ্লোবিউলিন বা আইজি প্রোটিন।

তাদের মধ্যে সবার আগে শত্রুদের বিরুদ্ধে ময়দানে নামে  ইমিউনোগ্লোবিউলিন-এম বা আইজিএম যারা জীবাণুদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক লড়াই লড়ে। তারা জীবাণুদের কাছে হেরে গেলে মাঠে নামে আরও শক্তিশালী ইমিউনোগ্লোবিউলিন-জি বা আইজিজি।সেই সময় আইজিএম পিছু হটে যায়। রক্তে এই আইজিজি এর উপস্থিতি বলে দেয় শরীর কোনো বহি শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ছিল কিনা। সুস্থ্য হওয়ার পড়েও অনেক ক্ষেত্রে এটি রক্তে থেকে যায় ফলে এর থেকে বোঝা যায় ব্যাক্তির শরীরে ভাইরাস ঢুকেছিল এবং তারপর ব্যাক্তি সেরে উঠেছেন নাহলে ভুগছেন।

এই টেস্টের ভালো দিকগুলি কি কি?

এই টেস্টের মাধ্যমে মহামারীর পরিস্থিতি, গোষ্ঠী সংক্রমন হয়েছে নাকি ইত্যাদি জানা যায়। এই টেস্ট সহজ প্রক্রিয়ায় হয়। এর খরচ কম।

এই টেস্টের খারাপ দিকগুলি কি কি?

এই টেস্টের ফলে জীবাণু শনাক্ত করা যায়না। আইজিজি তৈরি না হলে এই টেস্টে কোনো ফল পাওয়া যায়না। কোনও ব্যাক্তি আগে অন্য ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে শরীরে আইজিজি তৈরি হলেও টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসবে। সেটা যে করোনা সংক্রমন তা নিশ্চিত নয়। টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এলে কনফার্ম হওয়ার জন্য RTPCR করা প্রয়োজন।

কীভাবে এই পরীক্ষা করা হয়?

এই পরীক্ষা মূলত দুভাবে করা হয় :-

১. কার্ডের মাধ্যমে :- এটি সবথেকে সহজ ও কম খরচার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কার্ডের ওপর দুই ফোঁটা রক্ত ফেললেই কিছুক্ষন সময়ের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে।

২. এলাইজা টেস্ট :- এই টেস্টের গুণগত মান তুলনামূলক ভাবে উন্নত। এই টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসলে নিশ্চিত যে ব্যাক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এমনকি অ্যান্টিবডির পরিমাণও এই টেস্টে জানা যায়।

র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট

এটি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন পরীক্ষা যার মাধ্যমে সরাসরি অ্যান্টিজেন অর্থাৎ ভাইরাসকে শনাক্ত করা যায়। এই পদ্ধতিতে নাকের বা গলার ভেতর থেকে কোষ নিয়ে পরীক্ষা করা হয় এবং আধ থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল জানা যায়। রিপোর্ট পজিটিভ হলে রোগ নিশ্চিত কিন্তু নেগেটিভ এলে আরও একবার পরীক্ষা করানো যেতে পারে। ১৫ জুন থেকে আইসিএমআর পরীক্ষামূলক ভাবে এই টেস্টের অনুমতি দিয়েছে।

কাদের এই পরীক্ষা করানো হয়?

  • হটস্পট অঞ্চলের রোগীরা এবং বিশেষত যারা করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছেন।
  • বয়স্ক ব্যাক্তিদের বা যাদের কোনো ক্রনিক অসুখ আছে।
  • ইমিউনিটি কম এমন ব্যাক্তিরা হাসপাতালে ভর্তি হলে।
  • ডায়লেসিস বা নাক কান গলার অপারেশনের আগে এই টেস্ট করা হয়।