চীনের সীমানা ছাড়িয়ে এবার ভারতেও থাবা বসালো করোনা ভাইরাস। এখনও পর্যন্ত ভারতে ১১ জন এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। দিল্লী ও তেলেঙ্গানার দুই ব্যাক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে ভারতের কেরালাতে তিনটি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর রেকর্ড করা হয়েছিল। যদিও পরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সব রিপোর্টে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যেই ব্যাক্তিরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তাঁদের আইসোলেশনে রেখে পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। কিন্তু এই করোনাভাইরাস আসলে কি?
করোনা ভাইরাসের আরেক নাম হল ‘২০১৯-এনসিওভি’। এই ভাইরাস নানান প্রজাতির, যার মধ্যে সাতটি মানুষের দেহে সংক্রমণ ছড়ায়। এই করোনাভাইরাস এক মানুষের দেহ থেকে আরেক মানুষের দেহে ছড়াতে পারে। এই ভাইরাস মানুষের দেহ কোষের মধ্যে গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে, হচ্ছে সংখ্যা বৃদ্ধি।
এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ভয় কতটা?
এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে অন্য শহরে চলে যেতে পারে এই ভাইরাস। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতই হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। আর এর ফলে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া ও মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। ১০ বছর আগে সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে এক ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর সেটিও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ?
এই ভাইরাস সংক্রমনের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর ও কাশি। চিকিৎসকদের মতে, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে পাঁচ দিন সময় লেগে যেতে পারে। প্রথমে হচ্ছে জ্বর, পরে শুকনো কাশি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
তবে ঠিক কিভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি বিশেষজ্ঞরা। তারা মতে, সম্ভবত কোনও প্রাণী এই ভাইরাসের উৎস হতে পারে। সেখান থেকেই মানুষের দেহে ঢুকেছে, আর তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। আগে সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রথমে বাদুড় ও পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকার নজির রয়েছে। যেখানে এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের উৎস বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে তা হলো উহান, যেখানের বাজারে মুরগি, বাদুড়, খরগোশ ও সাপ বিক্রি হতো। এছাড়াও সামুদ্রিক প্রাণী যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে।
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা?
নতুন এই ভাইরাসের কোনও টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার এখনো হয়নি। এমনকি নিদির্ষ্ট কোনও চিকিৎসাও নেই, যা এ ভাইরাসকে আটকাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এনিয়ে মানুষকে নিয়মিত হাত ভালোভাবে পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি, কাশির সময় নাক, মুখ ঢেকে রাখা ও ঠান্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছে তারা। এছাড়াও নাক মুখ ঢাকার জন্য মুখোশ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে বলছেন বিজ্ঞানীরা।