নেতাজি কে ভারতরত্ন দেওয়া হয়নি কেন? ‘ভারতরত্ন’ কি কি সুবিধা পায়?

‘ভারতরত্ন’ ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সন্মান। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ ১৯৫৪ সালের ২ জানুয়ারি এই নাগরিক সন্মান প্রদান শুরু করেন। প্রথম প্রথম এই পুরস্কার সাহিত্য, কলা,বিজ্ঞান এবং সামাজিক ক্ষেত্রেই দেওয়া হতো। পরে এর নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। নতুন নিয়মে “মানবিক কৃতিত্বের ক্ষেত্রে যে কোনও ব্যক্তি” এই পুরস্কার পেতে পারবেন ।

বৈশিষ্ট

ভারতরত্ন পুরস্কারের বৈশিষ্ট্য ছিল, ৩৫ মিলিমিটার গোলাকার একটি সোনার পদক। এর সামনের দিকে মাঝখানে সূর্যের ছবি, উপরের দিকে রূপোর গিল্টিতে লেখা থাকতো “ভারতরত্ন”, এবং নিচের দিকে পুষ্পহার খোদিত থাকতো।

পরবর্তী কালে এর বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে ‘ভারতরত্ন’ পুরস্কারটি তামা দিয়ে তৈরি বট পাতার মতো , যেটি ৫৯ মিলিমিটার লম্বা, ৪৮ মিলিমিটার চওড়া,এবং ৩ মিলিমিটার প্রস্থের। যার সামনের দিকে প্লাটিনামের তৈরি সূর্যের ছবি, এবং রূপোর গিল্টিতে লেখা ‘ভারতরত্ন’, এবং পিছনের দিকে খচিত রয়েছে ভারতের জাতীয় প্রতীক আর নীচে লেখা ভারতের জাতীয় নীতিবাক্য ‘ “সত্যমেব‌ জয়তে”।

কখন দেওয়া হয়?

প্রত্যেক বছর ২৬ জানুয়ারি, ভারতের রাষ্ট্রপতি এই পুরস্কার প্রদান করেন। প্রত্যেক বছর সর্বোচ্চ তিন জনকেই এই পুরস্কার দেওয়া যায়।

পুরস্কার মুল্য

ভারতরত্ন পুরস্কারের সঙ্গে কোনও অর্থ দেওয়া হয় না। শুধু মাত্র রাষ্ট্রপতির হস্তাক্ষরের একটি প্রমাণপত্র, এবং সঙ্গে একটি মেডেল। তবে মেডেলটির মূল্য ২ লক্ষ টাকার বেশি।

ভারতরত্ন প্রাপকদের কোনও ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় না । তারা এয়ার ইন্ডিয়ায় প্রথম শ্রেণীর যাত্রা এবং ভারতীয় রেলে প্রথম শ্রেণীর যাত্রা বিনামূল্যে করতে পারবেন।

মৃত্যুর পর ভারতরত্ন

তারপর থেকে ৪৫ জন ব্যক্তি এই সম্মান পেয়েছেন। এদের মধ্যে ১২ জনকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিকে মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রদানের ব্যবস্থা না থাকলেও ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। ১৯৬৬ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীপ্রথম মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান পান। ২০১৩ সালে ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকর ৪০ বছর বয়সে ভারতরত্ন সম্মান পান। তিনিই কনিষ্ঠতম ভারতরত্ন প্রাপক।

প্রথমে এই পুরস্কার কোনও ব্যক্তি মৃত্যুর পর তাকে দেওয়া হতো না। ১৯৫৫ সালের পর থেকে এই পুরস্কার মৃত্যুর পরেও কোনও ব্যক্তিকে দেওয়া শুরু করা হয় । মৃত্যুর পর প্রথম ভারতরত্ন পুরস্কার দেওয়া হয় লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে ।

ভারতরত্ন পেতে হলে কি ভারতীয় হতেই হবে?

ভারতরত্ন সন্মান প্রাপককে ভারতীয় হতে হবে, এমন কোন নিয়ম নেই। মাদার টেরেসা ছাড়াও দুজন বিদেশি এই পুরস্কার পান। পাকিস্তানি নাগরিক খান আবদুল গফর খান 1987 সালে এবং আফ্রিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নেলসন মেন্ডেলা ১৯৯০ সালে ভারতরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন।

মরণোত্তর ভারতরত্ন

প্রথম বছর চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারি, সি ভি রামন ও সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়৷ প্রথমে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার বিষয়টি ছিল না৷ কিন্ত্ত পরে নিয়ম বদলানো হয়৷ ১৯৬৬ সালে লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে প্রথম মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রাপক৷ এখনও পর্যন্ত ৪৩ জনকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে মরণোত্তর পেয়েছেন ১১ জন৷

ভারতরত্ন ও বাঙালি

প্রথম বাঙালি ভারত রত্ন পেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় ১৯৬১ সালে। তাঁর পেশা ডাক্তারি হলেও, ওনার অবদান শিক্ষা, সমাজসেবা, এবং রাজনীতিতে অপরিসীম। সেইজন্য তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের রূপকার নামে অভিহিত করা হয়। দ্বিতীয়বার বাঙালি হিসেবে ভারত রত্ন সম্মান পেয়ছিলেন বিশ্বখ্যাত পরিচালক সত্যজিত রায় ১৯৯২ সালে। ১৯৯৯ সালে দুই বাঙালি নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং পণ্ডিত রবি শঙ্কর এই পুরস্কারে ভূষিত হোন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি পঞ্চম বাঙালি যিনি এই সম্মান পেলেন এই বছর (২০১৯)।

সুভাষ চন্দ্র বসু এবং ভারতরত্ন

সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যুর পর ১৯৯২ সালে তাকে ভারতরত্ন পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল । কিন্ত তার মৃত্যুর কোনও প্রমাণ না পাওয়া যাওয়ার এই পুরস্কার নিয়ে অনেক বিবাদ সৃষ্টি হয়। পরে ১৯৯৭ সালে এই পুরস্কার আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ভারতরত্ন’র ইতিহাসে সেটাই প্রথম ঘোষণা করেও পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়া হয়।