২০ বছরেও পাননি যোগ্য সম্মান, ‘মানি হাইস্ট’ই বদলে দিল ক্যানসারজয়ী প্রফেসরের জীবন

‘লা কাসা ডে পাপেল’, নেটফ্লিক্সের (Netflix) এই স্প্যানিশ ওয়েব সিরিজ নিয়ে কার্যত শোরগোল পড়ে গিয়েছে সারা বিশ্বে। সারাবিশ্বের দর্শক অবশ্য এই ওয়েব সিরিজকে ‘মানি হাইস্ট’ (Money Heist) নামেই চিনছেন। রুদ্ধশ্বাস ব্যাঙ্ক ডাকাতির গল্প নিয়ে সাজানো এই ওয়েব সিরিজ কার্যত নেটিজেনদের নেশায় বুঁদ করে রাখে। তবে প্রতিবার নেটিজেনদের কার্যত ঘোরের মধ্যে এনে দাঁড় করান এল প্রফেসর।

এল প্রফেসর, এই চরিত্রটিই যেন সিরিজের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। চরিত্রটিকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলছেন আলভারো মোর্তে (Alvaro Morte)। ৪৬ বছর বয়সী এই স্পানিশ অভিনেতা বলতে গেলে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছেন। এল প্রফেসরের চরিত্রের নিরিখে আজ তাকে গোটা বিশ্ব চেনে। অথচ অভিনয় জগতে তার আত্মপ্রকাশ হয়েছিল আজ থেকে দুই দশক আগে। তবে এতদিন তাকে শুধু স্পেনের মানুষেরাই চিনতেন। এল প্রফেসরের চরিত্র তাকে আন্তর্জাতিক স্তরের খ্যাতি এনে দিয়েছে।

১৯৭৫ সালে স্পেনের কাডিজ প্রদেশের অ্যালগেরিয়াস গ্রামে জন্ম হয়েছিল তার। পরে পরিবারের সঙ্গে তিনি চলে আসেন কর্ডোবাতে। কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করলেও অভিনয় ছিল তার নেশা। পরবর্তীকালে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। কর্ডোবার ড্রামাটিক আর্ট কলেজে অভিনয় শিখতে শুরু করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে স্নাতক শেষ করার পর ফিনল্যান্ডের ট্যাম্পেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন তিনি। পড়াশোনার শেষে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন।

প্রথমে থিয়েটারে, তারপর টেলিভিশনের পর্দায় ডেবিউ করেন তিনি। ২০০২ সালে স্প্যানিশ টেলিভিশন সিরিজ ‘হসপিটাল সেন্ট্রাল’ মারফত প্রথমবার ক্যামেরার সামনে আসেন তিনি। এরপর ‘বান্দোলেরা’, ‘আমার এন তিয়েমপোস’সহ একাধিক টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় করেছিলেন তিনি। যদিও প্রথমদিকে কেবল পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা হিসেবেই সুযোগ পাচ্ছিলেন মোর্তে।

২০০৭ সালে স্প্যানিশ লোকশিল্পী লোলা ফ্লোরেসের বায়োপিকে প্রোটাগনিস্টের প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করে সিনেপর্দায় ডেবিউ করেন তিনি। পরবর্তী দিন নিয়ে বেশকিছু স্প্যানিশ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু সেভাবে জনপ্রিয়তা পাননি। শেষমেষ তার ভাগ্য খুলে দিল ‘মানি হাইস্ট’। জানলে হয়তো অবাক হবেন, পর্দার অধ্যাপক কিন্তু সত্যিই ফিনল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিনের জন্য অতিথি অধ্যাপক হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছিলেন।

তবে তিনি যে কখনো এমন জনপ্রিয়তা পাবেন তা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। ২০১০ সালে তার বাঁ পায়ে ধরা পড়ে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। আশঙ্কা ছিল হয়তো বা কেটেই বাদ দিতে হবে পা। একই সঙ্গে তার মনকেও ঘিরে ধরে অবসাদ। তবে চিকিৎসায় সারা দেয় তার শরীর। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও অবশ্য ক্যান্সার তার শরীরে নিজের প্রভাব রেখে গিয়েছে।

‘মানি হাইস্ট’ আজ তাকে প্রভূত জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। তবে তাই বলে মাটির সঙ্গে সংযোগ তার বিচ্ছিন্ন হয়নি। বিলাসবহুল আবাসনের তুলনায় পরিবারের সঙ্গে সাধারণ জীবন-যাপন করতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অবসরে নিজের অভিনীত চরিত্রের বিশ্লেষণ করা তার প্রধান হবি। এছাড়া অবশ্য ঘুরতে যাওয়াও তার অন্যতম শখ। তার পছন্দের পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে ভারতবর্ষ। মহামারী প্রভাব কাটলে শীঘ্রই নাকি ভারতে আসবেন এই স্প্যানিশ তারকা!