দ্বিতীয় টিকা নিতে দেরি হলে কী প্রথম টিকা আবার নিতে হবে, বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

বর্তমানে মহাসংকটের অপর নাম করোনা। করোনার তুলনায় বেশি ভয়াবহ এবং মারাত্মক যেন এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীর কাছে আর কিছু হতে পারে না। করোনা বিধ্বস্ত সারা পৃথিবী। বিগত দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে যে লড়াই শুরু হয়েছিল, বর্তমানে তা উত্তরোত্তর আরও কঠিন হয়ে উঠছে। বিগত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে অদৃশ্য এক প্রাণঘাতী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন আপামর বিশ্ববাসী।

তবে এই লড়াই যেন ভারতের জন্য একটু বেশিই কঠিন হয়ে পড়ছে। ভারত তার সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়েও নিজের নাগরিকদের রক্ষা করতে পারছেনা! করোনা থেকে মুক্তির কার্যত কোনও উপায় নেই। তবে হ্যাঁ, প্রতিরোধ করা যেতে পারে করোনাকে। তার জন্য প্রয়োজন ভ্যাকসিন। তবে সেই ভ্যাকসিনও তো অপ্রতুল দেশে!

কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে এ পর্যন্ত দেশে মাত্র ১৮ কোটির কাছাকাছি মানুষ করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ৪ কোটি মানুষকেই কেবল ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সংখ্যাটা ভারতের জনসংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কমে। চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে দেশজুড়ে গণহারে যে ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তাতে এ পর্যন্ত দেশের ১০ শতাংশ মানুষও ভ্যাকসিন পাননি।

তাই স্বভাবতই মানুষের মনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের মনে প্রশ্ন উঠছে যে দ্বিতীয় ডোজ না নিলে বা নিতে দেরি হলে কি শরীরের কোনও অসুবিধা হবে? কিন্তু ভ্যাকসিন যে অমিল! তাহলে তো একটি ডোজের উপরেই নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে অনেককে। প্রথম ডোজের উপরে ভরসা করে কি তাহলে করোনা মোকাবিলা সম্ভব? এ রকমই হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

প্রথম ডোজ নেওয়া আছে, দ্বিতীয় ডোজটি না নিলে কি করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে?

বর্তমানে দেশের বেশকিছু মানুষ করোনার প্রথম টিকা নিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দুটি টিকা নিলে তবেই করোনার ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হবে। করোনার প্রথম টিকা রোগ প্রতিরোধের জন্য শরীরকে তৈরি করে। দ্বিতীয় টিকাটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অতএব শুধু প্রথম টিকা নিলে টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি কম সুরক্ষিত থাকবেন। সে ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

কত দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে?

এই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারতে এই মুহূর্তে যে দুটি ভ্যাকসিন উপলব্ধ আছে (কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাকসিন), সেই দুটি ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ভিন্ন। কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ নেওয়ার ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অপরপক্ষে কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে দু’টি ডোজের মধ্যে ২৮ দিনের ব্যবধানের মেয়াদ বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় ডোজ নিতে দেরি হলে কি প্রথম ডোজটি আবারও নিতে হবে?

বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজটিই নিতে হবে। দুটি ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেড়ে গেলেও আর প্রথম ডোজ নেওয়ার দরকার নেই। তবে দেরি না হওয়াই শ্রেয়। দুটি ডোজের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের ব্যবধান অব্যাহত রেখেই টিকা নেওয়া উচিত।

দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার আগে করোনা আক্রান্ত হলে কি করবেন?

শরীরে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না। একথা বিশেষজ্ঞরা বারংবার জানিয়েছেন। তাই প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় আগত হলে তার আগেই যদি আক্রান্ত হয়ে পড়েন ব্যক্তি, তাহলে তাকে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য অন্তত ২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতেই হবে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

করোনা থেকে সেরে উঠতে আট সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগে গেলে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে কি?

বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর এবং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার আগে যারা আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন, তাদের সেরে উঠতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও দ্বিতীয় টিকাটি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যখনই সেরে উঠুন না কেন, করোনার দ্বিতীয় টিকা নিয়ে ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করুন।

Corona Vaccination

প্রথম দফায় কোভিশিল্ড নেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় কোভ্যাকসিন নেওয়া যাবে কি?

এমনটা কখনই করা যাবে না। কারণ এতে কোনও টিকাই শরীরে যথাযথ কাজ করতে পারবে না। করোনার টিকা গ্রহণের সময় প্রথম ডোজ হিসেবে যে কোম্পানির ভ্যাকসিন গ্রহণ করছেন, দ্বিতীয় ডোজটিও সেই একই কোম্পানির হতে হবে।