
অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা, অনেক কাজ করার বাসনা, তবে সবকিছু পরিপূরণ করে ওঠার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। প্রয়াণের পর দেখতে দেখতে ১৫টা দিন পেরিয়ে গেলেও টলিউডের এই অভিনেত্রীর মুখটা এখনও যেন ভাসছে সকলের চোখের সামনে। মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা মা শিখা শর্মা। মেয়ের জীবনের অপূর্ণ ইচ্ছেগুলোর কথা বলতে গিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন তিনি।
ঐন্দ্রিলা দু-দুবার ক্যান্সারকে হারিয়ে বহু মানুষের কাছে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিলেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই একাধারে টিভি সিরিয়াল, ছবি এবং ওয়েব সিরিজে কাজ করেছেন ঐন্দ্রিলা। পাশাপাশি বাস্তব জীবনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা ছিল তার। কাছের মানুষ সব্যসাচী চৌধুরীর (Sabyasachi Chowdhury) সঙ্গে তিনি একটি ক্যাফে খোলার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে তা পূরণ করে যেতে পারলেন না।
এছাড়াও ঐন্দ্রিলার স্বপ্ন ছিল অনাথ শিশুদের জন্য একটা অনাথ আশ্রম খুলবেন। তিনি সবসময় সমাজ সেবা করতে চাইতেন। তার নিজের বাসস্থান বহরমপুরে অনাথদের থাকার জন্য একটা বাসস্থান গড়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে সেই স্বপ্নটাও অধরা থেকে গেল। সম্প্রতি ঐন্দ্রিলার স্মৃতিচারণ করে একটি জীবন বীমা কোম্পানির তরফ থেকে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা।
ঐন্দ্রিলা চলে যাওয়ার পর এই প্রথমবার এভাবে জনসমক্ষে এলেন তার মা। অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে ওই জীবন বীমা কোম্পানি ঐন্দ্রিলা নামে মানুষের পাশে থাকার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। সেখানে ঐন্দ্রিলার পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছিলেন শিখা দেবী। ঐন্দ্রিলার চলে যাওয়া নিয়ে সেখানেই প্রথমবার মুখ খুললেন তার মা। তিনি বলেন, ‘‘যতদিন বাঁচব হাহাকার নিয়ে থাকতে হবে।”
১লা নভেম্বর বাড়িতেই ব্রেন স্ট্রোকের পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ঐন্দ্রিলা। তারপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঐন্দ্রিলা এরপর ২০ দিন ধরে হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে থাকেন। তবে ২০ দিনের মাথায় এসে শেষ হয়ে যায় তার যুদ্ধ। দুবার ক্যান্সার জয় করে হাসিমুখে ফিরতে পারলেও হাসপাতাল থেকে এবার আর তার বাড়ি ফেরা হল না।
২০২৩ সালের শুরুতেই সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছিলেন সব্যসাচী এবং ঐন্দ্রিলা। বাড়িতে তাদের বিয়ে নিয়ে পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। সব্যসাচী ঐন্দ্রিলার পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছিলেন বহু আগেই। তার চিকিৎসা চলার সময় থেকেই বসেছি প্রতি পদে পদে কাছের মানুষের হাত শক্ত করে ধরেছিলেন। সারা জীবনের জন্য চার হাত এক হওয়াটাই শুধু বাকি ছিল। তবে তার আগেই নিয়তি নিষ্ঠুর পরিহাসে ভেঙে গেল তাদের ঘর বাঁধার স্বপ্ন।