প্রাণের রবিঠাকুর কিনা পাগলের ওষুধের বিজ্ঞাপনে! আজ্ঞে হ্যাঁ, এই মাঠেও চুটিয়ে খেলেছেন তিনি। রীতিমতো পেশাদারি ঢঙে। সুস্থ চুল পেতে কুন্তলীন তেল হোক কিংবা এনার্জি ড্রিঙ্ক বোর্ণভিটা – বিজ্ঞাপনী প্রচারে হাজির রবীন্দ্রনাথ। কোনও প্রচারে সশরীরে ছবিতে, কোনওটায় ছবি-সহ লিখিত আশ্বাসবাণী, ‘কুন্তলীন ব্যবহার করিয়া এক মাসের মধ্যে নতুন কেশ হইয়াছে।’
মডেল যখন রবীন্দ্রনাথ তখন পণ্যের বিজ্ঞাপন হিট হবেই। অ্যাডগুরু প্রহ্লাদ কক্কড়ের মতে, আজ রবিঠাকুর বেঁচে থাকলে তাঁর আলোয় ম্লান হয়ে যেত সবই। কারণ বিজ্ঞাপনের সাফল্য নির্ভর করে মডেলের সঙ্গে জনগণের যোগসূত্রের ওপর। সেই দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ তুলনাহীন।
নতুন বই থেকে শুরু করে কুকার, তেল, মিষ্টির বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে কবিগুরুকে। কখনো তাঁর স্বাক্ষরসহ আশীর্বাদ বাণী আবার কখনও তাঁর অটোগ্রাফ বা শুধুই ছবি। পণ্য সুপারহিট! প্রায় ১০টির মতো প্রসাধনসহ কুন্তলীন চুলের তেল ও পারফিউমের বিজ্ঞাপনে মডেল ছিলেন বাঙালির প্রাণপ্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
মিষ্টি খেয়ে তার গুণগান লিখে দিয়েছেন, সেই লেখাই বিজ্ঞাপন আকারে বেরিয়ে গেছে পত্রিকার পাতায়! শ্রীঘৃত, ক্যাডব্যারির বোর্নভিটা, কাজল কালি, সুগন্ধী ক্রিম, দার্জিলিং চা, লিপটন চা, ফিলিপস রেডিও থেকে রেল দপ্তরের হয়েও অকাতরে বিজ্ঞাপনী সার্টিফিকেট বিলিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি ওষুধের বিজ্ঞাপনেও। বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রশস্তি লিখেছেন। তালিকায় সিনেমা, গ্রামোফোন রেকর্ডও আছে।
শুধু তা-ই নয়, অনেক বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্টও লিখেছেন। রঙের কারখানা নেপিয়ার সেন্ট ওয়াকর্স পরিদর্শন করে যে অভিমত দিয়েছিলেন, পরে সেটাই হয়ে যায় বিজ্ঞাপনী স্লোগান। বিশ ও ত্রিশের দশকজুড়ে বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একচ্ছত্র কপিরাইটার। এমন কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না, যেখানে রবীন্দ্রনাথের লেখা বিজ্ঞাপন পাওয়া যায় না। ইংরেজি ও বাংলা সব ধরনের কাগজেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। হিন্দুস্তান কো-অপারেটিভ ইনস্যুরেন্স সোসাইটি লিমিটেডের বিজ্ঞাপনেও হাজির রবীন্দ্রনাথ।
ভাষাবিদ পবিত্র সরকারের মতে, স্বদেশী পণ্যের প্রচারের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কবিগুরু মনে করতেন, স্বদেশী পণ্য সম র্থন করা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে বোর্নভিটার মতো খাঁটি ব্রিটিশ পণ্যেও দেখা গেছে তাঁকে। এমনকি ভোটের প্রার্থীর সমর্থনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন ভানুসিংহ। ১৯৩৫ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্থানীয় বোর্ড নির্বাচনে অমর কৃষ্ণ ঘোষের সমর্থণে লিখেছেন, ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্থানীয় বোর্ড নির্বাচনে আমি অমর কৃষ্ণ ঘোষের সাফল্য প্রার্থণা করি।’ ভাবা যায়!
বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ এবঙ তাঁর অঙশগ্রহণ নিয়ে প্রথম কাজ করেন সমরেশ্বর বাগচী। টেগোর রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের মুখপত্র ‘রবীন্দ্রভাবনা’ পত্রিকার ১৯৮২ সালের সেপ্টেম্বর সঙখ্যায় প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা ‘বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথের লেখার ব্যবহার’। এ লেখায় বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখার ব্যবহার দেখানো হয়েছে, যা ছিলো অত্যন্ত শ্রমসাধ্য একটি কাজ। তবে মানতেই হবে. ১৯৮২ সালের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয়। বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘটেছে নানা কিছুর। বিজ্ঞাপনের সঙজ্ঞাও পাল্টেছে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে, রবীন্দ্রনাথের লেখা নিয়ে বিজ্ঞাপন এবঙ সঙবাদের সঙখ্যা কম নয়। কবির জীবিতকালে লিখিত বা প্রচারিত বিষয়গুলি এখানে গৃহীত হয়েছে।
কবির মৃত্যুর পরও অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে রবীন্দ্র জীবনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করে সঙবাদ বা বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন। তবে সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা খুঁজে বের করা বেশ শ্রমসাধ্য, যা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কেবল রবীন্দ্র জীবনীগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে যে কয়টি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তা-ই এখানে লিপিবদ্ধ হলো।
Uttarayan, Smritinikentan Bengal
নাট্যনিকেতনের “গোরা”র অভিনয় দেখে আনন্দলাভ করেছি। ইতি-
১৬.২.৩৭/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।ক্যালকাটা থিয়েটার্সের/ শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য/ গোরা/
শনিবার ২০শে ফেব্রুয়ারি ৭টায়, সোমবার ২২শে ফেব্রুয়ারি ৩টায়, রবিবার ২১শে ফেব্রুয়ারি ৩টায়, মঙ্গলবার ২৩শে ফেব্রুয়ারি ৩টায় রাজা রাজকিষণ স্ট্রিট (ফোন বি. বি. ৯৫১) নাট্য নিকেতন।
স্বদেশী মেলা/৩৭নং বহুবাজার স্ট্রীট (শিয়ালদহ)/ অদ্য কবি স¤্রাট রবীন্দ্রনাথের/ শুভ পদার্পণ হইবে। অদ্য শুক্রবার, ১৬ই অক্টোবর/ মেলা বিকাল ৩টায় খুলিবে/ ৬টায় ম্যাজিক/ (প্রফেসর র্নোনি)/ ৭ টায় থট্ রিডিং ও ভেন্ট্রিলা-কুইজম।/ ৮টায় বায়োস্কোপ/প্রবেশ মূল্য তিন আনা/ শ্রীজ্ঞানাঞ্জন নিয়োগী/ সম্পাদক/
কাজলকালী ব্যবহার করে সন্তোষ লাভ করেছি, এর কালিমা বিদেশী কালীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়- ইতি ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০, শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কুন্তলীনের গুণে মুগ্ধ হইয়াই কবি গাহিয়াছেন:
কেশে মাখো কুন্তলীন/রুমালেতে ‘দেলখোস’/ পানে খাও ‘তাম্বুলীন’/ ধন্য হউক এইচ বোস।
আমাদের প্রতিটি পোস্ট WhatsApp-এ পেতে ⇒ এখানে ক্লিক করুন