বছরান্তে সপ্তাহের শুরুতেই শীত জড়ানো সকালে নিজের ছবি পোস্ট করেছিলেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র (Sreelekha Mitra)। ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘আমার চোখে হারাও, ক্লিভেজ দেখার জন্য সময় পাবে’।স্বাভাবিক ভাবে মনে হতে পারে যে নিখাত ঠাট্টার ছলে তিনি লিখেছেন এই বার্তা কিন্তু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে তার এই সাহসী বার্তার পেছনে আছে অন্তর্নিহিত মানে। কি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি? এই বিষয় তিনি খোলাখুলি কথা বলেছেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সাথে।
নারী শরীরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করার রীতি ভারতবর্ষে অনেকদিন ধরেই প্রচলিত। সিনেমা কিংবা সিরিয়ালের অভিনেত্রী মানেই তো তাঁকে বা তাঁদের শরীর সম্পর্কে মন্তব্য অধিকার পাওয়া যায়! নিজের এই ছবির মাধ্যমে তাঁদের বিরুদ্ধেই বার্তা দিলেন শ্রীলেখা। শেখালেন প্রতিবাদের ভাষা।
শ্রীলেখা মিত্র জানান যে যে ছবিটি তিনি পোস্ট করেছেন সেই ছবিতে তার ক্লিভেজ স্পষ্ট।তার প্রশ্ন, যে ছবি তোলার জন্য কেন তাকে ক্লিভেজ ঢাকতে হবে? তিনি আরও বলেন,’আগে আমার চোখের দিকে তাকাও। তারপর আমার ক্লিভেজের দিকে তাকাবে।’’শ্রীলেখা মিত্রের মতে, নারীর সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করা কোনও অন্যায় নয় কিন্তু তার বদলে কেউ যদি নোংরামি শুরু করে তা কখনোই বরদাস্ত করবেন না তিনি।
অভিনেত্রী আরও বলেছেন, তার মতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে শালীন অশালীন নির্ভর করে মানসিকতার ওপর। এই কারণেই কোনও শাড়ি পরিহিত মহিলাকেও খারাপ কথা শুনতে হতে পারে আবার কোনও খোলামেলা পোশাক পড়া মহিলাকেও চরিত্রহীন তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়।বরাবরই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অকপট অভিনেত্রী।তার নানান বক্তব্য বা নানান ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময়ই ট্রোলের শিকার হয়েছেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেকে পরিবর্তন করেননি তিনি।
সত্যিই কি ট্রোলিং কে পাত্তা দেননা তিনি? তাকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি হেসে উত্তর দেন যে তাকে নিয়ে অনেকেই বাজে কথা বলে আবার অনেকে তাকে পরামর্শও দেয় যে কিরকম পোশাক পড়া উচিত আর কিরকম উচিত নয়। অভিনেত্রীর অকপট বক্তব্য যে তার শরীর, ইচ্ছে হলে তিনি দেখবেন। তাকে বলে দেওয়ার অধিকার কারুর নেই।সাথে তিনি এও বলেন যে তার ক্লিভেজ পর্যন্ত পৌঁছতে গেলে আগে তার মন ছুঁতে হবে।
আরও পড়ুন : অশ্লীল মেসেজ, অকথ্য গালিগালাজ, অবশেষে ট্রোলের যোগ্য উত্তর দিলেন শ্রাবন্তী
সাহসী ভঙ্গিমায় রাখঢাক না রেখেই অভিনেত্রী বললেন যে তিনি জানেন যে অনেক পুরুষই তাকে ফ্যান্টাসাইজ করেন।হেসে অভিনেত্রী বললেন যে এই বয়সেও যদি তিনি কারুর ফ্যান্টাসির বিষয় হন সেটা তার ভালোলাগারই বিষয়।তবে অভিনেত্রীর কাছে ‘ফ্যান্টাসি’ মানে কিন্তু শুধুই যৌনতা নয় বরং তার কাছে এই শব্দের অর্থ মনের চাওয়া।তিনি এও মনে করেন যে মানুষের মধ্যে যৌন বিকৃতির মূল কারনই হলো যৌনতাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে থাকা ছুঁৎমার্গগুলি।
আরও পড়ুন : আগে সেক্স তারপর ট্যালেন্ট, টলিউডে কাজ পেতে শুতে হয় ছেলেদেরও
শ্রীলেখার কথায় তাকে নিয়ে মানুষ ট্রোল করেন কারণ মানুষ নিজের ইচ্ছে মতন বাঁচতে পারেননা এবং সেটা তিনি পারেন। তার কথায় ট্রোল আসলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বললেন অনেক মহিলা তার পোশাক নিয়ে সমালোচনা করেন। এর কারণ,তারাও সেই ধরনের পোষাক পড়তে চান কিন্তু পারেননা বলেই তার ওপর রাগ।
আরও পড়ুন : ‘বিছানায় যাইনি, তাই প্রাপ্যও পাইনি’, শ্রীলেখার স্বজনপোষণের অভিযোগ
কিছুদিন আগে ইন্ডাস্ট্রির ওপরেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী।সম্প্রতি তার মনে হচ্ছে এই ইন্ডাস্ট্রি তাকে কাজ দেবেনা তাই নিজেই সেই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন তিনি। জানুয়ারি মাসে তার পরবর্তী শর্ট ফিল্ম ‘বিটার হাফ’ এর শুটিং শুরু করতে চলেছেন যিনি যেখানে পরিচালক, অভিনেত্রী এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার তিনটিই তিনি স্বয়ং। আসলে কে তাকে কি বলছে, কি ভাবছে সেই বিষয় কোনও পরোয়া না করে চুটিয়ে জীবনটা উপভোগ করতে চান শ্রীলেখা মিত্র।