“কৃষ্ণ কালো, আঁধার কালো, আমিও তো কালো সখি, তবে কেন আমায় ভালোবাসলে না’! সত্যিই আজও এই সমাজ ত্বকের রঙ দিয়ে প্রতিটি মানুষকে বিচার করে চলেছে। ঘন কালো চুল, ঘন কালো মেঘ, রাতের আঁধারের কালিমা, এই সবই গ্রহণযোগ্য। তবে সেই কালো রঙ যদি ত্বকে ফুটে ওঠে, তাহলেই সমস্যা! রেসিজম তখন ভদ্র-সভ্য সমাজের আড়াল থেকে নখ-দন্ত সহকারে বেরিয়ে আসবে আঁচড় দিতে।
ঠিক যেমনটা ঘটেছে টালিগঞ্জের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রুতি দাসের সঙ্গে। অভিনেত্রী নাচে, গানে, অভিনয়ে সমান পারদর্শিনী। তবে তথাকথিত সভ্য সমাজের চোখে তাঁর একটাই “দোষ”, তাঁর গায়ের যে রঙ কালো! কালো ত্বকের অধিকারীণী এই অভিনেত্রীর তাই “মরণ’ হলেও বিচলিত হবে না এই তথাকথিত সভ্য সমাজ!
সম্প্রতি শ্রুতি দাস করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রী নিজেই নিজের অসুস্থতার খবর জানিয়েছেন। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর অনুরাগীরা। সকলেই অভিনেত্রীর পোস্টের নিচে কমেন্ট বক্সে তাঁর সুস্থতা কামনা করে চলেছেন। তবে তারই মাঝে উড়ে এলো কিছু আলটপকা মন্তব্য।
এমন দুঃসংবাদেও শান্তি পেয়েছেন দুইজন নেটাগরিক। একজন শান্তি পেয়েছেন এই ভেবে যে, “আর মুখ দেখতে হবে না’। অপরজন তো সকল সীমা ছাড়িয়ে গেলেন। তিনি সরাসরি অভিনেত্রীর মৃত্যু কামনা করে বসলেন। তবে অভিনেত্রীর হয়ে রুখে দাঁড়ালেন সিনে ইন্ডাস্ট্রির অপর দুই তারকা অন্বেষা হাজরা এবং মানসী সিংহ।
ত্বকের রঙ বিচার করে মানুষ কেমন ভাবে কারোকে খোঁটা দিতে পারেন তা ভেবে পাচ্ছেন না অন্বেষা। বিশেষত তিনি নিজেও যখন একজন মহিলা! এ প্রসঙ্গে অন্বেষার জবাব, “আপনি শুধু একজন মহিলা হয়েই রয়ে গিয়েছেন। আপনার আর মানুষ হয়ে ওঠা হল না’।
আর যিনি শ্রুতির মৃত্যু কামনা করেছেন তার প্রতি অন্বেষার জবাব, “আপনার নিজের সন্তান কিংবা মা-বাবা অথবা কাছের কারোর এমনটা হলে আপনার কেমন লাগতো? ভেবে দেখবেন। আপনি এভাবে কার্যত নিজের নিচ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন’।
ঠিক একইভাবে শ্রুতি পাশে পেয়েছেন মানসী সিংহকে। তিনি একেবারে মায়ের মতো শ্রুতির পাশে রয়েছেন। শ্রুতিকে তিনি লিখেছেন, “আমার নিজের মেয়ের ত্বকের রঙও তোমার মতোই। আমি গর্বিত, আমার মেয়েও একদিন নিজের পরিচয়ে পরিচিত হবে। মাথা উঁচু করে বাঁচো সোনা”। কু-মন্তব্যে বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানসী এবং অন্বেষাকে পাশে পেয়ে আপ্লুত শ্রুতি। নিজের পোস্টে তুলে ধরেছেন নিজের ভাবাবেগ।