আপনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন কিনা বুঝবেন কীভাবে

চারিদিকে বেড়ে চলা কোরোনা প্রকোপের মধ্যেই আমরা এমন খবর শুনতে পাচ্ছি যা রীতিমত চমকে দিচ্ছে আমাদের। যেমন দুদিন আগে পর্যন্ত যে মানুষটা ঘুরে ঘুরে বাজার করছিলেন হঠাৎ শোনা যাচ্ছে কোরোনা আক্রান্ত হয়ে তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা কোনওরকম উপসর্গ ছাড়াই হঠাৎ করে অনেকেই কোরোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে, তাহলে কি উপসর্গ ছাড়াই মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে কোরোনা? এই প্রশ্নই যেন আরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছে মানুষকে।

প্রথম থেকেই অনেকবারই উপসর্গ বদল করেছে কোরোনা ভাইরাস। প্রথমদিকে শুধু জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট এই কয়েকটিকে সংক্রমণের উপসর্গ বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই উপসর্গ অনেকবার বদলেছে। ফলে যেসকল মানুষকে জীবিকার টানে বা নিত্য প্রয়োজনীয় বাড়ির বাইরে যেতে হচ্ছে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।

কোন কোন উপসর্গ বলে দেবে আপনি করোনা আক্রান্ত?

ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ জ্যোতিষ্ক পাল এই বিষয় বেশ কিছু উপসর্গের কথা বলেন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে কি কি উপসর্গের ব্যাক্তিদের মধ্যে এই ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া গেছে তাই বললেন তিনি।

  • প্রথম দিকে জ্বর, গলা ব্যাথা, সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্টের মতন উপসর্গ দেখা গেলে পরীক্ষা করে তাদের অনেকের শরীরেই কোরোনা ভাইরাস পাওয়া যাচ্ছিল।
  • তার পরবর্তী সময় হাসপাতালে এমন বেশ কিছু রোগী ভর্তি হলেন যারা সাময়িক ভাবে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন ( সিনকোপ)। দেখা গিয়েছিল তাদের শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশ কিছুটা হ্রাস পাওয়ার ফলে তাদের শরীর ঝিমিয়ে পড়ে।এই রোগীদের কোরোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার পরে তাদের রেজাল্ট পজিটিভ বেরোয়।
  •  জ্যোতিষ্কবাবু জানান সম্প্রতি এমন কিছু রোগী ভর্তি হচ্ছেন যাদের শরীরে নার্ভের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি উদাহরণ স্বরূপ একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকের কথা বলেন যার স্ট্রোক হয়েছিল। পরবর্তীকালে দেখা যায় তার স্ট্রোকের কারণ কোরোনা।
  • তিনি এও জানান কোরোনা ভাইরাসের কারণে রোগীর হার্ট ব্লক বা অ্যারিদমিয়া।
  • অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা শরীরে এমন কিছু অস্বস্তি অনুভব করছেন যা আগে কখনও হয়নি। সেই কারণে এরকম সমস্যার সন্মুখীন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলছেন তিনি।

তিনি বলেন কোরোনা ভাইরাস সংক্রমনের ফলে শরীরের রক্তজলিকাগুলির মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যায় ( ব্লাড ক্লট)। যার ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। এর ফলেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা সহ স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি হতে পারে।

মেডিসিনের ডাক্তার সুকুমার রায় আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, কোনও ব্যাক্তি কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার শরীরে কি ধরনের উপসর্গ দেখা যাবে তা নির্ভর করে তার শরীরে কত মাত্রায় ভাইরাস প্রবেশ করেছে তার ওপর অর্থাৎ শরীরে ভাইরাস লোডের ওপর। তার কথায় যার শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ কম হবে তিনি উপসর্গহীন থাকবেন, যার শরীরে ভাইরাসের মাত্রা মাঝারি থাকবে তার শরীরে সাধারণ উপসর্গ অর্থাৎ অল্প জ্বর, কাশি বা গলা ব্যথার মতন উপসর্গ দেখা যাবে আবার যার শরীরে ভাইরাল লোড বেশী থাকবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হবে।

আরও পড়ুন :- জ্বর, সর্দি কাশি নয়, করোনা সংক্রমণে দেখা যাচ্ছে নতুন ৬ উপসর্গ

তিনি আরও বলেন ভাইরাসকে কখনোই হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয় বরং সঠিক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোরোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। তার মতে অনেক ক্ষেত্রে শরীরে ভাইরাল লোড যদি খুব কম হয় সেক্ষেত্রে কোরোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে। টেস্ট আরটিপিসিআর-এর কারণে দেখা যায় ৩০% – ৪০% ক্ষেত্রে ব্যাক্তির রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে। চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বুঝে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার পরীক্ষা করানোর জন্য বলতে পারেন।

কি বলছেন বিশ্বের বিজ্ঞানীরা?

এই প্রসঙ্গে ম্যাসাচ্যুসেটস জেনারেল হাসপাতালের সহ-অধিকর্তা উইলিয়াম হিলম্যান এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আর্ভিং মেডিক্যাল সেন্টারের সিনিয়র ফাউন্ডার মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডেভিড বাছলজ তাদের মতামত জানিয়েছেন ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে। তাদের মতে কোরোনা ভাইরাসে চরিত্র এবং সংক্রমণের বিষয় সম্পূর্ণ ভাবে জানতে তাদের আরও অনেক গবেষণা করতে হবে। এক্ষেত্রে অতি সংক্রমিত অঞ্চলগুলোতে রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি বেশী গুরুত্বপূর্ন।তারা এও বলেন যে এই আতিমারি সৃষ্টি কটি ভাইরাস এবং তার থেকে ছড়িয়ে পড়া অসুখকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। এমনও হতে পারে যে অতি সংক্রমিত অঞ্চলের সব ব্যাক্তিই এই রোগে সংক্রমিত হবেন, সেইজন্য যেকোনো লক্ষন দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

করোনা সংক্রমণের কিছু পরিচিত উপসর্গ

  • ১. গলা ব্যথা, সর্দি এবং শুকনো কাশি
  • ২. জ্বর এবং গা ম্যাজম্যাজ করা
  • ৩. শারীরিক দুর্বলতা
  • ৪.  মাথা ব্যাথা, গা, হাত-পা ব্যথা
  • ৫. জিভের স্বাদ ও নাকে গন্ধের বোধ চলে যাওয়া।
  • ৬. চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ থেকে জল পড়া।
  • ৭. পেট ব্যাথা ও ডায়রিয়া
  • ৮. হাত ও পায়ের আঙুলের রঙের পরিবর্তন
  • ৯. ত্বকের সমস্যা যেমন চুলকানি
  • ১০. বুকে চাপ ধরা ভাব ও বুকে ব্যথা
  • ১১. শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি
  • ১২ হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা কথা বলার সমস্যা।

আরও পড়ুন :- করোনা আক্রান্ত হলে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে কেন

কোরোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। উপরুক্ত উপসর্গগুলো কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তবে এই উপসর্গগুলো বুঝতে পারলেই যে সোজা হাসপাতালে যেতে হবে বা আতঙ্কিত হতে হবে তা নয় তবে হ্যা সমস্যার গতিবিধি বুঝে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সাথেই মেনে চলতে হবে সমস্ত নীয়মাবলি।