বাংলার এই গ্রামে ৫০০ বছর ধরে প্রতিটি বাড়িতে রামের জন্ম হচ্ছে

ধর্মের দেশ ভারত। সত্যের দেশ ভারত। অযোধ্যায় রামমন্দির হোক বা না-হোক রামচন্দ্রের দেশ ভারত।
তিনি মর্যাদাপুরুষোত্তম। তিনি শক্তিশালী তবু সংযমী। তাই রাম থাকেন ভারতবাসীর হৃদয়ে। প্রতি শ্বাসে থাকে রামনাম। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মান নিয়ে যুযুধান দুই পক্ষ আদালতে হাজির হলেও ভারতের কোনও এক প্রত্যন্ত গ্রামে সকল গ্রামবাসী নিজের নাম জুড়ে নিয়েছেন রামের সঙ্গে! নামের আগে হোক কিংবা পরে, রাম নাম থাকবেই!

Lord Ram
Source

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার পশ্চিম সানবাঁধ গ্রামের প্রত্যেক পুরুষের নামের সঙ্গে আছেন রাম। কেউ রামচরণ তো কেউ রামরতন, কিন্তু প্রত্যেকে রামময়! কাউকে নাম ধরে ডাকলে যেন একবার মর্যাদাপুরুষোত্তমের নাম স্মরণ করা যায়, এই অভিলাষ। এটাই এই গ্রামের রীতি। যা মানা হচ্ছে বিগত ৫০০ বছর ধরে, একটানা!

Snbandh Village
Source

সানবাঁধ গ্রামের প্রাচীন বাসিন্দা রামকালী মুখার্জির পুত্র রামময় মুখার্জি স্থানীয় গানের শিক্ষক। বলছিলেন সানবাঁধ গ্রামের ‘রাম’ ঐতিহ্যের কথা। জানালেন, ‘আমার দাদুর নাম রামবল্লভ। তাঁর ছয় সন্তান। প্রত্যকের নামের সঙ্গেই ‘রাম’ জড়িয়ে আছেন। রাম এই গ্রামের কুলদেবতা। তাঁর মন্দির আছে। তিনি গ্রামবাসীকে রক্ষা করেন। তাই ভালবেসে শ্রদ্ধা জানাতে আমরাও নামের সঙ্গে রামের নাম নিই।’

আরো পড়ুন : কুকুরদের প্রকাশ্যে যৌনসঙ্গম করার পেছনে রয়েছে একটি পৌরানিক কাহিনী

Source

বাংলা ভাষার অধ্যাপক এবং লোক সংস্কৃতি গবেষক অরবিন্দ চ্যাটার্জি বললেন, ‘৪০০ বছর আগে অযোধ্যা থেকে কয়েকজন ব্রাক্ষ্ণণ এখানে আসেন। এলাকার শাসক তাঁদের জমি দান করেন। তাঁরাও সানবাঁধ গ্রামে রামের মন্দির নির্মান করে বসবাস শুরু করেন। সেই মন্দির এখনও আছে। সারাইয়ের কাজ চলছে। বিশ্বস্ততার প্রতীক হিসাবে সেই সময় থেকেই গ্রামবাসীরা নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে নেন রামের নাম। সেই ট্র্যাডিশান এখনও চলছে।’

অযোধ্যার সঙ্গে এই সানবাঁধ গ্রামের বাণিজ্যিক যোগাযোগও ছিল। জলপথে যাওয়া-আসা ছিল সাধারণ মানুষের। অরবিন্দবাবুর কথায়, ‘প্রাচীন সানবাঁধ ছিল উন্নত এলাকা। মজে যাওয়া দ্বারকেশ্বর নদী দিয়ে নৌকোয় এখানকার সিল্ক এবং ভেষজ গাছপালা যেত অয্যোধ্যায়।’

আরো পড়ুন : যে ১০টি কারণে দ্রৌপদী মহাভারতের আদর্শ নারী এবং সকল নারীর অনুসরণযোগ্য

Source

এসবের সঙ্গেই গ্রামবাসীরা জানালেন আরও এক মজার তথ্য। ২০১১ সালের জনগণনায় দেখা গেছে ৩,৬২৬ গ্রামের নাম রামের নামে। কিন্তু রামের নামে প্রতি গ্রামবাসীর নাম একমাত্র সানবাঁধ গ্রামেই। এলাকার বাসিন্দারা এই নিয়ে গর্বও করেন। হাসি মুখে জানান, এই গ্রামের একটি পাড়ার নাম ‘রাম পাড়া’।

আরো পড়ুন : রামায়নের সেরা ১০ চরিত্র

উল্লেখযোগ্যভাবে, বাঁকুড়া ব্লকের আঙ্কুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের বুলুলার, জালহরি, কপিস্থা এবং হির গ্রামগুলিতে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারপরেও রামের এমন দাপট! প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন বুলুলার গ্রামের আনোয়ার শেখ। হাসতে হাসতেই শুনিয়ে দিলেন সেই গান, ‘রাম তো ঘর ঘর মে হ্যায় রাম হার অঙ্গনমে হ্যায়…মন সে রাবণ যো নিকালে রাম উসকে মনমে হ্যায়…’