মাত্র ১৪ বছরের কিশোর। চোখে চশমা, রোগা চেহারার নিরীহ ছেলেটাকে দেখলে মনে হবে না তাঁর রন্ধ্রে এতটা আত্মবিশ্বাস মজুত আছে! তার সহপাঠীরা ব্যস্ত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে। আর এই বয়সেই ড্রোন তৈরির ব্যবসায়িক প্রস্তাব দিল সে। গুজরাত সরকারের সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকার ‘মৌ’ চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। ল্যান্ডমাইন শনাক্তকারী ড্রোন তৈরি করবে দশম শ্রেণির ছাত্র হর্ষবর্ধন।
হর্ষের বাবা পেশায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট, মা হোমমেকার। মাত্র ১০ বছর বয়সেই এক বিশেষ রিমোট কন্ট্রোল তৈরি করে সবাইকে তা ক লাগিয়ে দিয়েছিল সে। সেইসময় বাজারে ওই ধরনের কোনও যন্ত্র ছিল না। তার বাবা-মাও সেইসময়েই বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁদের ছেলে সাধারণ নন। এরপর থেকে ছেলেকে আরও বেশি করে উৎসাহ দিতে শুরু করেন তাঁরা।
গুগল, ইউটিউব ঘাঁটা হর্ষবর্ধণের বরাবরের অভ্যাস। একদিন এমনই একটি ভিডিও দেখে চমকে যায় সে। ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে মানুষষের মারা যাওয়ার দৃশ্য নাড়িয়ে দেয় হর্ষবর্ধনের কিশোর হৃদয়। এরপরই শুরু হয় গবেষণা। অনেক ভেবেও কোনও উপায় বেরচ্ছিল না। তখন বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন তিনি। ১২টি কোম্পানির দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি।
এরপর নিজেই কোম্পানি তৈরি করে কাজ শুরু করে হর্ষবর্ধন। বছর দুয়েকের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে ড্রোনের তিনটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেন হর্ষবর্ধন। প্রথম দুটির জন্য তাঁর বাবা-মা ২ লাখ টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন। পরের ৩ লক্ষ টাকা অনুদান দেয় সরকার।
হর্ষবর্ধনের তৈরি ড্রোনে রয়েছে আরজিবি সেন্সর ও থার্মাল পাওয়ার। সেই ড্রোন মেকানিক্যাল ক্যামেরা-সহ ২১ মেগাপিক্সেলের হাই রোজেলিউশন ছবি তুলতে সক্ষম। এছাড়াও ড্রোনটি ৫০ গ্রামের এক বোমাও বহন করতে সক্ষম,। সেটি দিয়ে ল্যান্ডমাইন ধ্বংস করা যাবে।
অ্যারোবেটিকস নামে একটি কোম্পানিও খুলে ফেলেছেন হর্ষবর্ধন। বিনিয়োগকারীদের সামনে নিজের আবিষ্কার তুলে ধরে চান এই কিশোর। নিজের কোম্পানিকে গুগল কিংবা অ্যাপলের থেকেও আগে দেখতে চান হর্ষবর্ধন।
বর্তমানে ভারতীয় সেনা ও সিআরপিএফের সঙ্গে কাজ করছে হর্ষবর্ধন। দেশের সব ল্যান্ডমাইন খুঁজে বের করে পরিষ্কার করবে সে। আর সেটা সফল হলে তবেই সে ওই প্রযুক্তি বিশ্বের সামনে নিয়ে আসবে।