জীবনে সুখে ও আনন্দে থাকতে হলে মেনে চলুন শ্রীরামকৃষ্ণের ৬টি উপদেশ

প্রতিটি মানুষের জীবনের মধ্যেই কম বেশি অশান্তি থাকে। মানসিক টানাপোড়েন, ভয়, সংশয়, দুশ্চিন্তা এইসবের সঙ্গে সঙ্গে থাকে কাজের ক্ষেত্রের নানা চাপ। আর এই সকল চাপের মধ্যে থাকতে থাকতে আনন্দ আর খুশিটাই হারিয়ে যায়। কিন্তু জীবন থেকে আনন্দ খুশি হারিয়ে গেলে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাও কোথাও চলে যায়। তাই বেঁচে থাকতে গেলে সমস্ত কিছুর মধ্যে থেকেই আনন্দ খুশি কে বেছে নিতে হবে।

দৈনন্দিন জীবনের এত টানাপোড়েনের মধ্যে কীভাবে জীবনের আনন্দ খুশি কে বেছে নেবেন সেই পথের সন্ধান দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। আজ থেকে বহু বছর আগে তিনি যা বলে গিয়েছিলেন আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেই বাণীই আমাদের পাথেয়। আজকে বলবো ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সেই বাণী যা জানলে মন খুলে হাসতে পারবেন,খুঁজে নিতে পারবেন জীবনের আনন্দটুকু।

১। যত মত তত পথ : রামকৃষ্ণদেবের এই বাণীর অর্থ হলো প্রত্যেকটি মতের‌ই  মান্যতা আছে। ধর্মের ক্ষেত্রে অনেকেই কৃষ্ণ, কালী, শিব নিয়ে ঝগড়া করেন। কোন ভক্ত বলেন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ, কেউ বলেন শিব শ্রেষ্ঠ। কিন্তু আসল সত্য হলো এটাই যে প্রতিটি মতই শ্রেষ্ঠ। যে যে মত ই মানুক না কেন , পথের সন্ধান ঠিকই পাবে। কারণ ধর্ম ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মতই সত্য। যার যাকে মন চায় সে তাকে ইষ্ট দেবতা হিসেবে মেনে ডাকতে পারে, তার নিষ্ঠা সত্য হলে সে ভগবানকে লাভ করবেই। তাই কাকে পুজো করলে ফল মিলবে তা না ভেবে মন যাকে চায়, তার নাম নিন। এক মনে নিন। দেখবেন ফল পাবেই পাবেন।

২। ভগবানকে স্মরণ করুন যেকোনও সময় : রামকৃষ্ণদেব বলেছেন ভগবানের নাম নেওয়ার নেওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।  যে কোন সময় তার অর্চনা করা যায় যায়। যেকোনও সময় তার নাম নেওয়া যায়, সব ক্ষেত্রে একই ফল মিলবে।

Sri Ramkrishna Dev with Swami Vivekananda and Sarada Maa

বিষয়টি স্পষ্ট করতে তিনি বলেছিলেন, ধরো কেউ স্বেচ্ছায় নদীতে স্নান করলো, আর ঘুমন্ত অবস্থায় কারোর গায়ে জল ঢেলে দেওয়া হলো, অথবা কাউকে জোর করে জলের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো, সব ক্ষেত্রে একই পরিনাম হবে। তিনজন ব্যক্তিই ভিজে যাবে। ভগবানের নাম নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাই যে যে অবস্থাতেই স্মরণ করুক  না কেন সে ফল লাভ করবেই।

৩। ভগবান সর্বত্র বিরাজমান :  অনেকেই বলেন যে ভগবান মূর্তিহীন আবার কারো কারো মতে ভগবান মূর্তিতে বিরাজ করেন। রামকৃষ্ণদেব এই মতপার্থক্যকেও ঘুচিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ভগবান সর্বত্রই বিরাজমান। তিনি মূতিতেও আছেন, আবার এক‌ইসাথে তিনি নিরাকার।

তিনি বলতেন, ছোট বাচ্চা যখন প্রথমবারের জন্য অক্ষর লিখতে শেখে তখন সে বড় বড় করে লেখে। ধীরে ধীরে যখন সে পারদর্শী হয়ে ওঠে তখন তার হাতের লেখা ছোট হতে শুরু করে। ঠিক সেইরকম ভাবে সর্বশক্তিমানকে একমনে ডাকতে গেলে একাগ্রতার প্রয়োজন হয়। তখন বড় করে তাকে ভাবতে হয়, তার মূর্তি ভাবতে হয়। আর সেই কারণেই মূর্তি পুজোর প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু মন যখন স্থির হয়ে ওঠে তখন খালি চোখে দেয়ালের দিকে তাকালেই তার ছবি ফুটে ওঠে।

৪। ভগবান হলেন কল্পবৃক্ষ : রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলতেন ভগবানের নাম নেওয়ার সময় ভালো কথা ভাবতে, এতে ফল পাওয়া যায়। উল্টে ভগবানের নাম নেওয়ার সময় যদিও অহিত চিন্তা করা হয় তাহলে ফল ও খারাপই হয়।

এই প্রসঙ্গে তিনি একটি গল্প বলেছিলেন। এক গরিব একবার একটি কল্প বৃক্ষের নিচে বসে ভাবতে থাকলো যে আমি যদি রাজা হয়ে উঠতাম  তাহলে বেশ হতো। অমনি সে রাজা হয়ে গেলো।  এরপর সে ভাবলো আমি যদি এক সুন্দরীকে স্ত্রী হিসেবে পেতাম তাহলে বেশ হত। অমনি তার সেই স্বপ্ন ও পূরণ হয়ে গেল। এবার কোনো এক অজানা কারণে সে মনে মনে ভাবতে থাকলো হঠাৎ করে যদি একটা বাঘ এসে যায় তাহলে তো তার মৃত্যু নিশ্চিত। যেই না ভাবনা অমনি কোথা থেকে একটা বাঘ এসে তাকে খেয়ে ফেলল। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলতেন ভগবান ও সেইরকমই কল্পবৃক্ষ তার নাম করার সময় সবসময় ভালো চিন্তা করতে হয়। তবে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৫। ভগবান ছাড়া বাঁচা অসম্ভব :  রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলতেন প্রদীপ যেমন তেল ছাড়া চলতে পারে না। তেমনি একজন মানুষ ও ভগবান ছাড়া কোনওভাবেই বাঁচতে পারেন না।

৬। জীবনের লক্ষ্য : রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথায় সুখ এবং দুঃখ প্রতিনিয়ত বদল হয়। টাকা-পয়সা বাড়ি-গাড়ি কোনো কিছুই থাকেনা। তাই সকলকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা উচিত। মানুষকে ভালোবাসতে পারলে আনন্দের সঠিক সন্ধান পাওয়া যাবে, দুঃখের থেকে মুক্তি ঘটবে।