ভাগাড়ের কান্ড কয়েক মাস হল কেটেছে আর আমরা বাঙালিরা প্রায় ভুলতেই বসেছি খাবারের গুনগত মানের কথা। কিন্তু মুরগির মাংস মাত্রেই তো আর বাসি বা ভাগাড়ের নয়! ভাগাড় কাণ্ডের পর মাংসের যেকোনও আইটেমের নাম শুনলেই আঁতকে উঠছেন অনেকেই। এমনকি বাড়িতেও মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন অনেক মানুষ। কিন্তু সব মাংস তো আর বাসি বা ভাগাড়ের নয়! তাই একটু যাচাই করে খেলেই হলো। কিন্তু টাটকা মুরগির মাংস চিনবেন কী করে? উপায় আছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক টাটকা মুরগির মাংস চেনার কিছু সহজ উপায়।
মাংসের রং
মুরগির মাংস কেনার সময় অবশ্যই দেখুন মাংসের রং।সাধারণত দুই রকম উপায়ে আমরা মাংস নিয়ে থাকি।এক ছাল ছাড়ানো মাংস অর্থাৎ যেখানে মুরগির বাইরের চামড়া ছাড়িয়ে ভেতরের মাংস দেওয়া হয়।আর অন্য উপায়ে যেখানে ছালযুক্ত মাংস দেওয়া হয়।যারা ছালযুক্ত মাংস খেতে বেশি পছন্দ করেন বা দোকান থেকে নেন তারা অবশ্যই দেখুন আপনাকে মাংস দেওয়ার সময় ওই মাংসের গায়ে লেগে থাকা ছালের রং কেমন রয়েছে।যদি দেখতে পান ছালের রং ধূসর তাহলে বুঝবেন উক্ত মাংস অনেকক্ষন আগেই কেটে রাখা হয়েছে।অর্থাৎ এই মাংস টাটকা মাংস নয়।এবার তা আপনি নেবেন কি নেবেন না একই দামে তা আপনার উপরেই আমি ছাড়লাম।
মাংসের গন্ধ
কাটা মুরগির মাংসের গন্ধ যদি বিদঘুটে বা পচা বা সন্দেহজনক হয় তাহলে জানবেন তা কিন্তু টাটকা কাটা মুরগি নয়।তাই সেই মাংস না কেনাই ভালো।টাটকা মাংসের গন্ধ নাকে নিলে তাতে আঁশটে গন্ধ অনেকটাই থাকে না।
মাংসের হাত পরীক্ষা
এক্ষেত্রে যদি মুরগি কাটা থাকা অবস্থায় থাকে আগে থেকেই তাহলে হাত দিয়ে নেড়ে দেখতে হবে আপনাকে।হাত দিয়ে মরা মুরগিকে চাপ দিন, চাপ দেওয়ার পর তা যদি কিছু সময়ের মধ্যেই পূর্বের মতো হয়ে যায় তাহলে জানবেন মুরগিটি অল্প কিছুক্ষন হল কাটা হয়েছে।আর যদি দেখেন চাপ দেওয়ার পর তা আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় নিচ্ছে তাহলে জানবেন মুরগিটি অনেকক্ষণ আগে কাটা হয়েছে।এক্ষেত্রে মাংস যদি খুব নরম বা খুব শক্ত থাকে তাহলে তা না কেনাই উচিত ।অর্থাৎ আপনি কিন্তু ঠকে যেতে পারেন।টাটকা মাংস কিছুটা স্থিতিস্থাপক হয় অর্থাৎ তাদের পেশী তখনও সচল থাকে।তাদের রাইগার মার্টিস হতে অনেক সময় লাগে।
রক্ত জমাট
কাটা মাংসের রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে সেই মাংস এড়িয়ে চলুন। কারণ, সদ্য কাটা মাংসে বা কাটার ৫-১০ মিনিটের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার কথা নয়।
প্যাকেটজাত মুরগির মাংস কেনার ক্ষেত্রে
এখন অনেকেই ব্যস্ত।তাই তাদের ব্যস্ততার জীবনে মুরগির মাংসের দোকানে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে মুরগি কাটিয়ে মাংস কেনা সম্ভব হয় না।বিগ বাজার ও বিভিন্ন ফুড বা গ্রোসারি মলে গিয়ে তারা প্যাকেটজাত মাংস একসাথে অনেকটাই কিনে নেন প্রয়োজনমতো।তবে এরকম লোকেদের উদ্দ্যেশ্যে প্রথমেই বলবো প্যাকেটজাত মাংস কিন্তু খাওয়ার থেকে না খাওয়াই ভালো।এতে খাদ্যের পুষ্টিগুণ অনেক কমে যায় বিভিন্ন রাসায়নিক খাদ্য সংরক্ষক ব্যবহার করার ফলে।মাংস হয়তো ভালো থাকবে , সন্দেহজনক গন্ধ উঠবে না কিন্তু শরীরের পক্ষে তার বিরপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।তবে এরপরও যারা প্যাকেটজাত মাংস কিনে খান তাদের বলি এইসব মাংস কেনার আগেঅবশ্যই দেখুন
আরও পড়ুন : দুধে ভেজাল আছে কিনা জানার সহজ কয়েকটি ঘরোয়া উপায়
প্যাকেজিং ডেট এবং এক্সপায়ারি ডেট
প্যাকেটে যে সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়েছে তা কৃত্রিম না প্রাকৃতিক।যদি কৃত্রিম হয় তাহলে তার পরিমান উল্লেখ আছে কী না।প্রাকৃতিক হলে সংরক্ষকের পরিমান আপনার শরীরের ক্ষতি প্রায় করবে না বললেই হলো।কিন্তু কৃত্রিম সংরক্ষক থাকলে তার পরিমান যেন খুব বেশি না থাকে।
প্যাকেটিং কোয়ালিটি যদি ভালো না হয় অর্থাৎ তা যদি আলগা থাকেবা তাতে যদি কোন ছিদ্র বা ফুটো থাকে তাহলে তা কখনোই কিনবেন না। টিনজাত হলে টিনের ঢাকনা ঠিক করে লাগানো আছে কী না তা অবশ্যই দেখুন।তার সাথেদুই ডেট অবশ্যই দেখুন।সবশেষে বলে রাখি ,মুরগির মাংস কেনার সর্বোত্তম উপায় হল সামনে দাড়িয়ে মুরগি কাটিয়ে মাংস নিয়ে আসুন।সব রকম দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন।