জীবন বীমা করানোর ৫টি সুবিধা ও অসুবিধা

জীবন অনিশ্চয়তার খেলা। এখনই আমি ঠিক আছি আবার পরক্ষনেই আমার মারাত্মক খারাপ কিছু ঘটতে পারে। আর তাই আমরা সবাই বীমা করাই। যার যেমন সামর্থ্য সেই অনুযায়ী। কেউ কেউ একটি দুটি, আবার অনেকেই দুইয়ের বেশিও করাই।আবার অনেকেই পলিসি করেন অনেক বেশি টাকার। এই বীমারও আছে অনেক সুবিধা অসুবিধা। তাই যারা এখনও যারা বীমা করেন নি, তাদের এই বিষয়ে উপযুক্ত জ্ঞান থাকা দরকার। আর তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো জীবন বীমার ৫টি  সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে।

জীবন বীমার ৫ টি সুবিধা

ধারের জীবন থেকে ভবিষ্যৎ মুক্তি :- আমাদের হাতে সবসময় টাকা থাকে না। কিন্তু আপনি যদি জীবন বীমা করিয়ে রাখেন তাহলে আপনার ভবিষ্যতের জন্য এক নিশ্চিত সঞ্চয় হতে থাকবে। আর পরে বার্ধক্যের সময় তা আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। অৰ্থাৎ জীবনবীমা বার্ধক্যের সময় আপনার সাথী হয়ে দাড়াবে। আর আপনার ভগবান না করুক কিছু খারাপ ঘটলেও জীবনবীমা থাকাকালীন  আপনার পরিবার পাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ।আর তার ফলে তাদের সংসারের খরচ চালাতে অসুবিধা হবে না কোনোদিন।তাই জীবনবীমা না থাকলে আজই করান জীবন বীমা।

দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য পূরণ :- অনেকের ধারণা জীবনবীমা করা হলে জীবিত অবস্থায় ব্যাঙ্কের চেয়ে তাতে কোনও বাড়তি আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে প্রথম থেকে সেই অনুযায়ী  জীবনবীমা করেন তাহলে ভবিষ্যতে আপনার লক্ষ্য অবশ্যই পূর্ণ হবে। আর তার জন্য আপনাকে বেছে নিতে হবে নির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধার পলিসি টার্ম।

আয়করের হাত থেকে কষ্টার্জিত টাকা বাঁচানো :- আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা ইনকাম ট্যাক্সের আওতায় পড়েছি। আর বীমা করার মস্ত একটা সুবিধা হল, এই বীমার মাধ্যমে আপনি যেমন মাসিক বা ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বাৎসরিক অনেকটা টাকা যেমন জমাতে পারেন তার সাথে আপনি আপনার অনেকটা টাকা আয়করের হাত থেকে বাঁচতে পারেন। তাই আপনি যদি চাকুরিজীবি বা ব্যবসায়ী যাই হোক না কেন অবশ্যই করুন জীবনবীমা।

আয় অনুযায়ী বীমা :- জীবন বীমার রেঞ্জ অনেক বিশাল। এখানে যেমন আপনি পাবেন ন্যুনতম মূলধনের টাকার পলিসি, তেমনই আপনি আপনার আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী বড়ো মাপের আর্থিক সুবিধা যুক্ত পলিসি গ্রহণ করতে পারেন। বিভিন্ন সরকারি কোম্পানির সাথে সাথে বেসরকারি কোম্পানির নানা পলিসি আজ খবরের শিরোনামে। এক বছর বয়সের শিশু থেকে বার্ধক্য বয়সের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পাবেন নানান বীমা। তাই সবার ভবিষ্যৎ আর্থিক সুবিধা সম্পন্ন করতে পারেন। নানান টার্ম, নানান কভারেজ  ও নমিনীযুক্ত জীবনবীমা পাওয়া যায় এখন। তাই আপনার পছন্দের জীবনবীমা গ্রহণ করুন।

নিজের ইচ্ছামতো টাকা ফেরত :- আপনি হয়তো ভাবেন ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে তা নির্দিষ্ট সময় অন্তর টাকা তুলে নিতে পারবেন সুদসহ। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে সেরকম সুবিধা পাওয়া যায় না বলেই অনেকের ধারণা। কিন্তু বর্তমানে অনেক জীবনবীমাতে মানি ব্যাক পলিসিও করা যায়, যার মাধ্যমে আপনি আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অন্তর টাকা তুলে নিতে পারবেন। আর এইভাবেই জীবনবীমা আপনাকে দেয় আপনার জমানো টাকার উপযুক্ত মূল্য।

জীবন বীমার ৫ টি অসুবিধা

বয়স অনুযায়ী পলিসি :- অনেকেই  জানেন না যে জীবন বীমা হয় বয়স অনুযায়ী। আপনি যদি কম বয়স থেকে জীবন বীমা করিয়ে থাকেন তাহলে আপনার গাঁটের টাকা কম খরচ হবে। আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার মাসিক বা ষান্মাসিক বা বাৎসরিক পলিসির  টাকার পরিমান বাড়তে থাকে। যেমন  আপনার ছেলের বয়স ১৫ হলে আর আপনার বয়স ৪০ বছর হলে যদি দুজনের জন্যই  ১৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সুবিধাযুক্ত  জীবন বীমা করানোর কথা ভাবেন তাহলে আপনি দেখতে পারেন আপনার ছেলের জন্য বীমার পলিসি আর আপনার জন্য বীমার পলিসি অনেক টাকার পার্থক্য হবে। আর তাই অনেকেই জীবন বীমার এই নীতিকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া বলে মনে করেন।

ভুয়ো  কোম্পানির টাকা হাতিয়ে নেওয়া :- আজকে আমাদের দেশে সরকারি বেসরকারি বীমা কোম্পানি অনেক। এদেরই মধ্যে আছে অনেক ভুয়ো কোম্পানি। আর তাই সব কিছু কাগজপত্র দেখেই বেসরকারি কোম্পানির জীবনবীমা করান। আমরা কিছুদিন আগেই “সাহারা’র মতো নামী কোম্পানির জালিয়াতির ঘটনা দেখেছি। তাই বীমার  কোম্পানির সব কিছু খবর নিয়ে তবেই বীমা করা কথা ভাবুন। বেসরকারি কোম্পানির লোভনীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়ার নাম করে আপনার গচ্ছিত টাকা আত্মসাৎ করতে পারে।

জীবনবীমার জটিল প্ল্যান :- আমরা অনেকেই জীবন বীমা করানোর আগে ভালো করে খুঁটিয়ে পড়ি না জীবনবীমার নিয়ামবালী ও শর্তাবলী। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের প্রয়োজনে টাকা ফিরে পেতে বা  মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ ফিরে পেতে বেসরকারি কোম্পানির জীবন বীমা কোম্পানি থেকে আমাদের অনেক কষ্ট পেতে হয়। তাই পলিসি করার আগে জেনে নিন সবরকম নিয়মাবলী। আপনার পলিসি এজেন্টদের কাছে সবকিছু জেনে নিয়ে তবেই করুন পলিসি।

ঋণগ্রস্ত বীমা কোম্পানি :- সরকারি কোম্পানি ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির লোভনীয় বীমা করানোর আগে ভালো করে যাচাই করে দেখে নিন সেই কোম্পানির আর্থিক সঞ্চয়ের দিক। অনেক সময় নানা বেসরকারি কোম্পানি নিজেদের ঋণগ্রস্ত ঘোষণা করে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে। তাই সবকিছু জেনে তবেই বেসরকারি কোম্পানির জীবন বীমা করুন।

টাকা ফেরতের নানান অসুবিধা :- অনেকসময় জীবন বীমা করে তার ম্যাচুরিটি হওয়ার পর  টাকা ফিরে পেতে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বর্তমানের নতুন নানান নিয়ম বীমা পলিসিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অনেকের বীমার সময় ভোটার কার্ডের মাধ্যমে তা হওয়ার পর পরবর্তীতে আধার কার্ড জমা করার বা জন্ম সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সার্টিফিকেট জমা করার মতো নানান সমস্যায় পড়ে সাধারণ গ্রাহক। তাই এখনও অনেক গ্রামীণ মানুষ, প্রান্তিক মানুষ নিজেদের সরিয়ে রেখেছেন জীবন বীমার আওতা থেকে। তাই সবকিছু জেনে অবশ্যই করুন জীবনবীমা, যা দেবে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক সুবিধা।