ইদানীং এক অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। বিশ্বাসের সঙ্গে ধর্মকে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেঁটে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ কোনও সম্প্রদায়ের লেভেল। বিজ্ঞান এবং ধর্ম একে অপরের বিরোধিতা করছে না। বরং পরস্পরের মধ্যে গভীর যোগসূত্র আছে। বিজ্ঞান ভিত্তি করেই ছড়িয়ে পড়ে ধর্ম। আর এইসব ধর্মীয় আচারের উৎপত্তির মূলে আছে বিজ্ঞানমনস্কতা। এখানে আমরা তেমনই ১২ আচারের তালিকা তৈরি করেছি যা সমৃদ্ধ করেছে আমাদের সংস্কৃতিকে।
১২ হিন্দু পরম্পরার অবাক করা বৈজ্ঞানিক কারণ

১২) মন্দির প্রতিষ্ঠা
সাধারণত সেই জায়গায় মন্দির প্রতিষ্ঠা হয় যেখানে পৃথিবীর চৌম্বক শক্তির তরঙ্গ প্রবাহ সবচেয়ে বেশী। গর্ভগৃহ বানানো হয় সেই শক্তি তরঙ্গের কেন্দ্রস্থলে। সেখানেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়। দর্শনার্থীর মানসিকতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতেই এই রীতি মানা হচ্ছে প্রাচীন কাল থেকে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে বলা যায়, ইতিবাচক শক্তিই সুস্থ জীবনের দিশা দেয়।
আরো পড়ুন : ভারতের ১০টি সবচেয়ে ধনী মন্দিরের নাম ও তাদের ধন সম্পদের পরিমান

১১) প্রতিমা পরিক্রমা
বেদ অনুযায়ী, মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিমার নীচে রাখা থাকে তামার পাত। তামা তড়িৎ ও চৌম্বক শক্তি শোষণ করে পরিবেশে বিকিরণ করে বা ছড়িয়ে দেয়। ফলে কোনও ব্যক্তি ঘড়ির কাঁটার দিকে নিত্য প্রতিমা পরিক্রমা করলে তাঁর শরীর সেই চৌম্বক তরঙ্গ গ্রহণ করে। এটা খুবই ধীরগতির প্রক্রিয়া তবে নিয়মিত অভ্যাসে দেহ ইতিবাচক শক্তি গ্রহণে সক্ষম হয়।
আরো পড়ুন : ভারতের রহস্যময় ও অলৌকিক ৯ মন্দির

১০) তুলসী পাতা চিবানো বারন
হিন্দু পরম্পরায় তুলসীকে শ্রীবিষ্ণুর স্ত্রীরূপে মানা হয়। চিবানোর অর্থ অশ্রদ্ধা করা। তবে এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ অন্য। সেটা হল, তুলসীতে মার্কারি এবং লোহা আছে যা দাঁতের পক্ষে ক্ষতিকর।
আরো পড়ুন : শিব পূজায় নিষিদ্ধ যেসব উপকরণ

৯) পঞ্চামৃতের গুরুত্ব
দুধ, দই, ঘি, মধু এবং মিছরি – এই পাঁচ উপাদান থাকে বলে বলা হয় পঞ্চামৃত। নিয়মিত সেবনে শরীর সুস্থ রাখে। ত্বক, চুল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় পঞ্চামৃত সেবনের সুপারিশ করা হয়।
৮) ঘুম থেকে ওঠা মাত্র হাতের দিকে চেয়ে প্রার্থণা
বলা হয়ে থাকে, ঘুম থেকে উঠেই হাতের তালুর কেন্দ্রে লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং পাশে গোবিন্দকে স্থাপন করে তাঁদের ভাবনায় ভাবিত হতে। বিজ্ঞান অনুযায়ী, জাগা মাত্র আমাদের শরীরের অক্ষ অনুভূমিক থেকে আনুভূমিক অর্থাৎ ভার্টিকালে পরিবর্তিত হয়। তাই সেই সময় হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। লম্বা এবং স্বাভাবিক নিশ্বাস-প্রশ্বাস সেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। হৃদরোগে ২৩ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় শোওয়া অবস্থা থেকে হঠাত দাঁড়ানোর জন্যই।
আরো পড়ুন : রাত্রে ঘুম আসে না ? জেনে নিন ৫ মিনিটে ঘুমিয়ে পড়ার ১০ টি উপায়

৭) উপবাসের বিজ্ঞান
উপবাসের কথা বলে প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্র। শরীরে জমা বিষাক্ত টক্সিন থেকে পরিত্রাণ পেতেই উপবাস। এতে পাচনপ্রক্রিয়া বিশ্রাম পায় এবং শরীর নিজেকে নিজেকে পরিষ্কার করার সুযোগ পায়।

৬) গ্রহণের সময় হিন্দু মন্দির বন্ধ থাকার কারণ
কৌশলগতভাবে মন্দিরগুলি বানানো হয় কোয়ান্টাম হিলিং সেন্টারে হিসাবে। গ্রহণের সময় তার ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয় মন্দির।
আরো পড়ুন : হিন্দু ধর্মে দেহ পুড়িয়ে অন্তিম সংস্কার করা হয় কেন ?

৫) অশ্বত্থ গাছকে পুজো
অন্যান্য উদ্ভিদের থেকে এর সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ উল্টো। একমাত্র অশ্বত্থ গাছই রাত্রে আক্সিজেন ছাড়ে। আশ্চর্য না!

৪) মেঝেয় বসা এবং খাওয়া
দু’পা আড়াআড়িভাবে মুড়ে অনেকটা সুখাসনের ভঙ্গিমায় বসা হিন্দুদের প্রাচীন পরম্পরা। এতে হজম প্রক্রিয়া মসৃণ এবং ভালো হয়।
আরো পড়ুন : হিন্দু বিয়ের কিছু প্রথা যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিৎ

৩) খাওয়ার শুরুতে ঝাল শেষে মিষ্টি
ঝাল খেলে বেশী মাত্রায় পাচন রসের ক্ষরণ হয়। ফলে হজমের কাজ শুরু হয় তাড়াতাড়ি। মিষ্টি হজম প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শেষ পাতে মুখ মিষ্টি করা হয়।

২) কান বেঁধানো
প্রাচীন কাল থেকে বিশ্বাস, কান বেঁধানো থাকলে বুদ্ধির বিকাশ, চিন্তাভাবনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুষঙ্গে সহায়তা করে। পশ্চিমারাও এই সংস্কৃতিকে আপন করেছে। কানে দুল পড়া তাঁদের কাছে ফ্যাশনের অঙ্গ।
আরো পড়ুন : জীবন সম্পর্কে “ভাগবৎ গীতা”র ১২টি উপদেশ যা সবার জানা উচিত

১) উত্তর দিকে মাথা করে শোওয়া
উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমোতে নেই। পৃথিবীর উত্তর এবং দক্ষিণে দু’টি চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। তার পজিটিভ এবং নেগেটিভ প্রভাবও রয়েছে। পজিটিভ এফেক্ট রয়েছে উত্তর দিকে, দক্ষিণে নেগেটিভ।মাথা বা উত্তরে পজিটিভ ক্ষেত্র, পায়ের দিকে বা দক্ষিণে নেগেটিভ ক্ষেত্র। চুম্বকের ধর্ম মেনে পজিটিভ পোলগুলি পরস্পরকে প্রতিরোধ করে। বিপরীত পোল একে অপরকে আকর্ষণ করে। ঠিক এই কারণেই উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমোতে নেই। দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে তা-ও ঘুমনো যায়। কিন্তু সবথেকে ভাল হল পূর্ব দিকে মাথা রেখে ঘুমনো। দক্ষিণে মাথা রেখে শুলে শরীর তরজাতা থাকবে।উত্তরদিকে মাথা করে শোয়ার অনেক ক্ষতিকর প্রভাবও আছে। এর থেকে খারাপ স্বপ্ন এবং ঘুমের ব্যাঘাতও হতে পারে।
আমাদের প্রতিটি পোস্ট WhatsApp-এ পেতে ⇒ এখানে ক্লিক করুন
আপনার অভিযোগ / মতামত আমাদের জানান এই ঠিকানায় contact@ichorepaka.in
সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সাথে যুক্ত হোন : Facebook Instagram Twitter