হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থদের মধ্যে অন্যতম হল রামায়ণ।আমাদের অনেকেই এই রামায়ণের গল্প ছোট বেলায় দাদু বা ঠাকুমার কাছে শুনেছি।পরে আমরা বড়ো হওয়ার সাথে সাথে রঙিন বইয়েও পড়েছি এই রামায়ণের গল্প।রাম রাবনের এই শাশ্বত যুদ্ধের কথা প্রায় আমাদের সকলেরই জানা।আর তাছাড়াও গল্পের বই ছাড়াও ছোট পর্দায় আট থেকে আশি প্রায় সবাই ই আমরা দেখেছি এই রামায়ণের নানা পর্বের কাহিনীর কাল্পনিক রূপ, যা আমাদের মোহিত করে রাখত।তবে বাল্মীকি রচিত রামায়ণের সঙ্গস্কৃত অনুবাদ পড়ার সৌভাগ্য ও ধৈর্য্য সবার আছে বা ছিল না।আমরা সহজ সরল ভাষায় রচিত রামায়ণের গল্প নিজেরা পড়েছি বা পড়ে অন্যকে শুনিয়েছি।আর তাই এই পবিত্র ধর্মগ্রহ্নের বেশ কিছু রহস্যময় ঘটনা আমাদের প্রায় সকলেরই অজানা রয়ে গিয়েছে।আর তাই আজ আমরা সেইসব অনেক অজানা তথ্যের মধ্যে জানবো দশটি বেশ রোমাঞ্চকর তথ্য ।যা জানার মাধ্যমে আপনি অন্যের কাছে নিজেকে রামায়ন বিশারদ হিসেবে জাহির করতেই পারেন।আর তারা সকলেই আপনার কাছ থেকে এই অজানা তথ্য পেয়ে উপকৃত হবেন একথা হলফ করে বলা যায়।
রামায়ণের ১০টি অজানা তথ্য
রামায়ণের মূল চরিত্রের মধ্যে ছিলেন রাম ও রাবণ।রাম সম্পর্কে আমরা প্রায় অনেক কিছুই জানি ।তুলনায় রাবন রয়ে গিয়েছে অজ্ঞতার অন্ধকারে।আমরা অনেকেই জানি লঙ্কাপতি রাবনের দশ মাথার কথা।আর তাই তাকে বলা হতো দশানন।কিন্তু তিনি যে অত্যন্ত জ্ঞানী মানুষও ছিলেন এই বিষয়ে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই।আর তিনি খুব ভালো বীনা বাজাতে পারতেন।

পিতার আজ্ঞা পালনে রাম ১৪ বছরের বনবাস নিয়েছিল, আর তার এই বনবাসে তার সাথী হয়েছিল পত্নী সীতা ও ভ্রাতা লক্ষণ। এই গল্প আমাদের সকলের জানা। কিন্তু এই ১৪ বছর বনবাসে যে ভ্রাতা লক্ষণ এক দিনও বা এক মুহূর্তও ঘুমায় নি ,এই তথ্য আমাদের অনেকের কাছেই অজানা। প্রাণের প্রিয় জৈষ্ঠ ভ্রাতা রাম ও মা তুল্য বৌদি সীতাকে রক্ষা করার জন্য তিনি এই ত্যাগ করেছিলেন। তিনি নিদ্রা দেবীর কাছে তার যেন ১৪ বছর নিদ্রা না আসে তার বর লাভ করেন। বদলে তার সকল নিদ্রা তার স্ত্রী উর্মিলা নিজের কাছে নিয়ে নেন।তাই লক্ষণ যে ১৪ বছর নিদ্রাহীন অবস্থায় দাদা রামের সাথে বনবাসে কাটিয়েছে সেইখানে তার স্ত্রী ঊর্মিলা রাজ প্রাসাদে নিদ্রায় কাটিয়েছে।

রাবন অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল লক্ষণের তুলনায় একথা আমাদের সবার জানা।কিন্তু তবুও লক্ষণের টানা লক্ষণ রেখার ভেতরে ঢুকে সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারে নি। আর এই কথা রাবনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল রাবনের আপন স্ত্রী মন্দোদরী।
আরো পড়ুন : কীভাবে শুরু হয়েছিল শিবরাত্রি ব্রত? জেনে নিন পুরো কাহিনী

রাম সীতাকে বিয়ে করার আগে সীতার স্বয়ম্ভর সভায় যে হরধনু ভেঙে ছিলেন সেই ধনুক আসলে ছিল দেবাদিদেব মহাদেবের। আর এই ধনুকের নাম ছিল পিনাক। আর দেবাদিদেব এই বর সীতার পিতা মিথিলা নরেশকে এই বর দিয়েছিলেন। যে তার কন্যার জন্য স্বয়ং বিষ্ণু অবতার নিয়ে আসবেন স্বামী রূপে।

রাম সীতা যে অরণ্যে এসে তাদের বনবাস কাটান তা ছিল এক ঘন গহন অরণ্য। যার নাম ছিল দণ্ডকারণ্য। বর্তমান ভারতের হিসাবে এই অরণ্য চারটি রাজ্যের আওতায় পড়ে। তারা হল ভারতের ছত্রিশগড়, উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশ। সেই সময় ভয়ংকর ভয়ঙ্কর দৈতরা সবাই বাস করত সেই অরণ্যে।
আরো পড়ুন : শিব পুজো যেসব দিয়ে করলে সকল মনস্কামনা পূর্ন হবে

রাবণেরা তিন ভাই রাবন,কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণ। আর রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণের ছয় মাস ঘুমানোর কথা সবার জানা। কিন্তু কেন এই ঘুম তা আমরা অনেকেই জানি না। আসলে কুম্ভকর্ণ কিন্তু চেয়েছিল অন্য কিছু। তিনি একবার গভীর তপস্যার ফলে প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে বর আদায়ে সমর্থ হন। কুম্ভকর্ণ চেয়েছিলেন তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের আসন ছিনিয়ে নিতে ব্রহ্মার কাছে পাওয়া বরের মাধ্যমে। কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র তা জানতে পারেন। তাই দেবরাজ ইন্দ্র দেবী সরস্বতীর কাছে এইরূপ অনর্থ যাতে না হয় তার অনুরোধ করেন। তখন দেবী সরস্বতী কুম্ভকর্ণের জ্বিহায় অধিষ্ঠাত্রী হয়ে ইন্দ্রাসন বলার পরিবর্তে বলিয়ে দেন নিদ্রাসন। আর তাই কুম্ভকর্ণ এই অদ্ভুত বর লাভ করেন।
আরো পড়ুন : শিবের ৮টি ভুষণের বিশেষ তাৎপর্য

রাবনের সীতা অপহরণের কাজে বিন্দুমাত্র সায় ছিল না তার অনুজ ভাই বিভীষণের।তিনি প্রকাশ্যে রাবনের এইরূপ কাজের বিরোধিতা করেন।রাম যখন সীতাকে উদ্ধারের জন্য লঙ্কা আক্রমন করেন ,তখন রাবনকে বিভীষণ অনুরোধ করেন।তিনি যেন রামের কাছে সীতাকে ফিরিয়ে দেন।কিন্তু রাক্ষসরাজ রাবণ বিভীষণকে এইরূপ বলার জন্য অপমানিত করে তাড়িয়ে দেন।আর সেই বিভীষণ তখন শত্রুপক্ষ রামের কাছে এসে তার ভাইকে হত্যার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা দিয়েছিলেন।

লঙ্কা জয় করার জন্য প্রথমেই দরকার ছিল লঙ্কা পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা। আর তাই জন্য রাজা সুগ্রীবের বানর সেনা ও নল, নীল প্রমুখ বিশেষ বানর রাম লেখা শিলাখন্ড সমুদ্রের জলে ফেলে তৈরি করেন এক বিশাল সেতু। একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বর্তমানে এইরকম একই সেতুর খোঁজ পায় নাসার উপগ্রহ। তারা জানান যে ভারত শ্রীলঙ্কার মধ্যে রয়েছে এইরকম এক সেতু। আর প্রাচীন এই সেতুর বয়সকাল সম্বন্ধে প্রত্নতত্ববিধরা বলেন এই সেতুর বয়সকাল অনেক অনেক পুরানো যা পুরাণের যুগের রামসেতুর কথায় আমাদের স্মরণে নিয়ে আসে। আর এই সেতুর নাম দেওয়া হয় আদম সেতু।
আরো পড়ুন: হিন্দু ধর্মে দেহ পুড়িয়ে অন্তিম সংস্কার করা হয় কেন ?

রাবন ছিলেন সর্বজ্ঞানী। তিনি অনেক আগে থেকেই তার হত্যাকারী রামের কথা জানতেন। তবুও তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে আত্মসমর্পন করেন নি। আসলে তিনি মুক্তি লাভের আশায় ভগবানের হাতে মরতে চেয়েছিলেন।
আরো পড়ুন : রামায়নের সেরা ১০ চরিত্র

নিজের সতীত্ব প্রমান করার জন্য সীতাকে অগ্নিকুন্ডে যেতে হয়েছিল।আর রামের এইরূপ আচরণে সীতা ব্যথিত হয়েছিলেন তাই তিনি আর রামের কাছে না থেকে পুনরায় তার মা ধরিত্রীর কাছেই ফিরে যান। আর তাই সীতাহারা রাম তার নশ্বর শরীর ত্যাগ করেন সরযু নদীর তীরে।
আমাদের প্রতিটি পোস্ট WhatsApp-এ পেতে ⇒ এখানে ক্লিক করুন