সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জীবনে এসেছে অনেক পরিবর্তন।আদিম গুহাবাসী মানুষ থেকে আজ মানুষ প্রকৃতির অন্যতম উন্নত জীবে পরিণত হয়েছে।আজকে মানুষের সীমানা পৃথিবী ছাড়িয়ে অন্য গ্রহে নিজেদের বসবাস স্থাপনের লক্ষ্যে অবিচল।তবে এই উন্নতি যে মানুষের একদিনেই ঘটে গিয়েছে তা কিন্তু নয়।মানুষের বুদ্ধির জোরে মানুষ অসাধ্যকে সাধ্য করে দেখিয়েছে।মানুষ তার উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রকৃতি থেকে শিখে এমন কিছু কিছু আবিষ্কার করেছে যা মানুষের উন্নতির নতুন যুগের সূচনা করেছে।আর মানুষ কিন্তু কোন কিছু আবিষ্কারকে নিয়ে সেইখানে থেমে যায় নি।আরও ভালো কিছু আবিষ্কারের নেশায় সে বারবার মেতে উঠেছে। আর তার ফলও পেয়েছে হাতে নাতে।তবে তা যে খুব কম সময়ের ব্যবধানে হয়েছে তা কিন্তু নয়। কিন্তু প্রতিটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার মানুষকে দিয়েছে নতুন জীবনের রূপরেখা। যা আমাদের জীবনকে দিয়েছে সেরা করার অনুভূতি। আর তবে এই আবিষ্কারের গতি কোনো দিন থেমে যাবে তা কিন্তু নয়। আবিষ্কারের রথের চাকা সবসময় দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। আর তার ফলে পৃথিবী জুড়ে দেখা যাবে নতুন নতুন যুগের সূচনা।আজকে আমরা সেইরকম দশটি আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করবো যা আমাদের জীবনে নিয়ে এসেছে আমূল পরিবর্তন।

চাকার আবিষ্কার
সভ্যতার বিবর্তনে সবচেয়ে প্রথমে যা মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছিল তা হল চাকার আবিষ্কার। এই চাকার আবিষ্কার সঠিক কখন হয়েছিল তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দেখা যায় দ্বন্দ্ব। তবে সবাই এক বাক্যে মেনে নেয় যে চাকার আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের জীবনে যে উন্নতির সোপান শুরু হয়েছিল তা একদম সঠিক। চাকা আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষ দূরত্বের বাধাকে কাটিয়ে উঠেছে সহজেই ফলে জয় করেছে নতুন নতুন জায়গা।আর এইভাবেই পেয়েছে নতুন যুগের হাতছানি।

বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের আবিষ্কার
ইংরেজ বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটের আবিষ্কার বাষ্প চালিত ইঞ্জিন এমনই এরকম এক আবিষ্কার। যার সাহায্যে যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে গতি বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হলো তা যেমন রেলগাড়ি থেকে শুরু করে পরিবহনের নতুন যুগের সূচনা করল। স্টিম ইঞ্জিন থেকে পরবর্তীতে ডিজেল, পেট্রোল ও অন্যান্য জ্বালানি চালিত ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে সারা পৃথিবী জুড়েই যানবাহনের বহুল ব্যবহারের প্রচলন হল।আর এই গতিময় জীবন দিল সব রকম উন্নতির সংকল্প।

স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের আবিষ্কার
বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের আবিষ্কার হওয়ার পর যেন যন্ত্র চালিত যানবাহনের উৎপাদনে বিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছিল।আর তারই ক্ষুদ্র সংস্করণ ছিল যন্ত্রচালিত গাড়ি।পশু চালিত গাড়ির ভরসায় না থেকে মানুষ এখন যন্ত্রকে আপন করে নিল দূরত্বকে জয় করার জন্য।তার ফলে মানুষের আয়ত্তের মধ্যে কম সময়ে অনেকটা জায়গায় বিস্তার করা সম্ভব হলো।কোনো দূরত্বই আর অসীম রইল না মানুষের কাছে।আর তার ফলে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আচার আচরণ ,পোশাক আশাক,ভাষা ও সকল প্রকার উন্নয়নের জোয়ার বইতে লাগল উন্নত দেশ থেকে পৃথিবীর সর্বত্র।

উড়োজাহাজের আবিষ্কার
জলপথ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার যে মুখ্য মাধ্যম ছিল আজ থেকে এক শতাব্দী আগেও। কিন্তু অর্ভিল ও উইলবার রাইট ভাইদের যুগান্তকারী আবিষ্কার উড়োজাহাজ যেন আমাদের দিল ডানা মেলে পাখিদের মতো আকাশে ওড়ার ক্ষমতা। আর তারই হাত ধরে আজ সারা পৃথিবী যেন সবার নাগালের মধ্যে। একমাস জলপথের সফর আজ তিন দিনের উড়োজাহাজের সফরের মাধ্যমে অতিক্রম করা যায়। এই আবিষ্কার তাই আমাদের গতিকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।আজ দূরত্ব যেন শুধু একটা শব্দ মাত্র। জীবনের মান পরিবর্তনে তাই উড়োজাহাজের গুরুত্ব অপরিসীম।

ক্যামেরার আবিষ্কার
এই একটি যন্ত্রের আবিষ্কারের আগে আমাদের যা কিছু অতীতের স্মৃতি তা শুধু বই, খাতা, ডাইরি আর চিত্রের অঙ্কনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ক্যামেরা আমাদের সুযোগ দিল আমাদের সুন্দর মুহূর্তকে সংরক্ষণ করে রাখার। আমাদের পুরোনোকে সেই অবস্থায় দেখতে পাওয়ার যে স্বাভাবিক সহজাত ইচ্ছা তা পূর্ন করল ক্যামেরা। আজ তাই আমাদের কাছে কোনো কিছুই আর অতীত নয় সবই বর্তমান। আর সাদা কালোর ক্যামেরা থেকে ডিজিটাল ক্যামেরা সেই সাক্ষী বহন করে চলেছে।

রেডিওর আবিষ্কার
তরঙ্গকে ব্যবহার করে শব্দের সম্প্রচার বার্তা পরিবহন ব্যবস্থায় যেন নতুন যুগের সূচনা করল। আর এই যুগের মাধ্যমে মানুষ তৈরি করল তার এক ভালো লাগা বা বিনোদনের জগৎ। কর্মী মানুষ জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে বিলাসিতার ও বিনোদনের এক নতুন স্বাদ পেল এই রেডিওর আবিষ্কারের মাধ্যমে।

টিভির আবিষ্কার
টেলিভিশনের আবিষ্কারের মাধ্যম মানুষ যেমন শ্রবণ নির্ভর রেডিও থেকে পেল আরও বহুগুন উন্নত দৃষ্টি ও শ্রবণ নির্ভর যুগান্তকারী পরিষেবা। তেমনি টেলিভিশন মানুষকে দেখাল সারা বিশ্বের প্রকৃত রূপ। এই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ যেন হাতের মুঠোয় করল সকল বিনোদনকে। মানুষ পেল অবসরের সময় কাটানোর এক অদ্ভুত ও বিশ্বস্ত সাথী।জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে নতুন নতুন সবকিছু দেখার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে পরিবর্তিত করতে লাগলো।

টেলিফোনের আবিষ্কার
আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের টেলিফোনের আবিষ্কারের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার এক নতুন পথের সূচনা হলো যা ব্যক্তি বিশেষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আনল বিপ্লব।আজ সেই টেলিফোন থেকে স্মার্টফোন যেন তারই ধারা বহন করে চলেছে।আজ আমরা কেউই যেন একে অপরের থেকে দূরে নেই যদিও থাকি বহু দূরে দূরে।একাকিত্বের একঘেয়েমি কাটাতে এই যন্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

কম্পিউটারের আবিষ্কার
বিংশ শতকের অন্যতম আবিষ্কার কম্পিউটার। এই যন্ত্র যেন আমাদের কাছে ঈশ্বরের ক্ষুদ্র সংস্করণ। কি পারে না মানুষের সৃষ্ট এই অনন্য আবিষ্কার। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে চিকিৎসা, গবেষনা, ব্যবসা, সামরিক বাহিনী সবেতেই এই যন্ত্র তার আপন গুণের নমুনা সর্বত্র দেখিয়ে চলেছে আজকের পৃথিবী কম্পিউটার ছাড়া যেন অচল পয়সার মতোই অর্থহীন। আজ আমাদের কর্মজীবনের অন্যতম প্রধান উপাদান হয়ে দাড়িয়েছে এই কম্পিউটার।

ইন্টারনেটের আবিষ্কার
কম্পিউটারের পর যদি কেউ প্রত্যেকের জীবনে এনেছে আনন্দের ধারা তাহলে তা হল ইন্টারনেট।আজকের একবিংশ শতাব্দীর সাতশো কোটির পৃথিবীর ৭০%মানুষই এই আবিষ্কারের দ্বারা কোনও না কোনও উপায়ে লাভবান হচ্ছে। পৃথিবীর সকল অজানা, অদেখা,বস্তু থেকে জায়গা সবই যেন এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাদের হাতের মুঠোয় সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উন্নতশহর সকল জায়গায় আজ মানুষ মেতে আছে এই নতুন আবিষ্কারের সহায়তায়। আজকের আধুনিক পৃথিবীর প্রকৃত রূপকার যদি বলা হয় ইন্টারনেটকে তাহলে ভুল কিছু বলা হবে না।